সাইমুম হক * বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু এখন একদম হাতের নাগালে। স্বপ্নের এই সেতুর সড়ক পথ প্রায় প্রস্তুত। আজ সকালে সেতুর সড়ক পথ তৈরির শেষ স্ল্যাবটিও বসানো হয়েছে। বাকি এখন কেবল পিচঢালাই। মোট ২ হাজার ৯১৭টি স্ল্যাবের শেষটিও বসানোর মধ্য দিয়ে স্বপ্নের পদ্মাসেতুর ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার সড়ক পথের পূর্ণাঙ্গ রূপ ফুটে ওঠে । শুধু পিচঢালাই হয়ে গেলেই প্রমত্তা পদ্মা নদীর উপর দিয়ে যানবাহন চলাচলের উপযুক্ত হয়ে যাবে এই সেতু ।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের আজ সোমবার সকালে গণমাধ্যমকে সেতুর শেষ স্ল্যাব বসানোর এই আনন্দ সংবাদটি প্রদান করেছেন।
দেওয়ান কাদের বলেন, সেতুর মোট ২ হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্লাবের মধ্যে মাত্র তিনটি স্লাব বসানো বাকি ছিল। যার মধ্যে গতরাতে বসানো হয় দু’টি স্লাব। আর আজ সকালে বসলো একটি। এর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর কাজ প্রায় শেষধাপে এগিয়ে গেল।
তিনি জানান, পদ্মা সেতুর মাঝখান দিয়ে গ্যাসলাইন বসানোর কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে শেষ হতে চলছে রেললাইনের কাজও। আগামী বছরের জুনের আগেই সম্পূর্ণ কাজ শেষ করা হবে। এ জন্য এ প্রকল্পে কর্মরত সবাই একযোগে দিনরাত কাজ করে চলেছেন।
এর আগে পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকায় এসে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দেন যে, ২০২২ সালের জুন মাসের যেকোনো দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতুর শুভ উদ্বোধন করবেন। সে লক্ষ্যে সেতু প্রকল্পে কর্মরত দেশি-বিদেশি শ্রমিকরা কাজ করে চলছেন। এ পর্যন্ত মূল সেতুর কাজের ৯৪ দশমিক ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে।
জনাব দেওয়ান কাদের বলেন, দেশের সর্ববৃহৎ প্রজেক্ট দ্বিতল এই পদ্মা সেতুতে এর আগে চলতি বছরের ২০ জুন শেষ হয়েছিল রেলওয়ের স্ল্যাব বসানোর কাজ।
চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক কাজ এগিয়েছে ৮৭ দশমিক ২৫ শতাংশ বলে জানিয়েছেন সেতু প্রকল্পের প্রকৌশলীগণ । আর মূল সেতুর কাজের অগ্রগতি ৯৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ মূল সেতুর কাজের আর বাকি মাত্র ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
তারা জানান, আশা করা যাচ্ছে আগামী অক্টোবর মাসের শেষ দিকেই সেতুর সড়ক পথে পিচঢালাইয়ের কাজ শুরু হবে এবং এ কাজে তিন মাসের মতো সময় লাগতে পারে। সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) সেতু বিভাগকে জানিয়েছে, তারা আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যেই সব কাজ শেষ করবে।
সেতু বিভাগ জানায়, সব মিলিয়ে আগামী মে মাসেই পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে দিনক্ষণ ঠিক করা হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনার পর।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালে মাওয়া পুরান ফেরিঘাটে মাছ বাজার সংলগ্ন এলাকায় এই সেতুর ফলক উন্মোচন করেন সেসময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সরকার বদল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর কাজও থেমে যায়। পরবর্তীতে শেখ হাসিনা ফের ক্ষমতাসীন হলে ২০০৯ সালে তোড়জোড় শুরু হয় কাজের। অনেক চড়াই উতরাই পার করে অবশেষে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়।
পদ্মাসেতু দৃশ্যমান হয়ে ওঠে ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে। এরপর একে একে ৪২টি পিলারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসানো হয়। ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়েছিল। একইসঙ্গে চলতে থাকে রোডওয়ে ও রেলওয়ে স্ল্যাব বসানোসহ অন্যান্য কাজও। আজ রোডওয়ে স্লাব বসানোর কাজ শেষের মধ্য দিয়ে প্রায় পূর্ণাঙ্গরূপে ফুটে ওঠা পদ্মা সেতু এখন কেবল শুভ উদ্বোধনের জন্য আর কিছুটা সময়ের অপেক্ষা।
সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যেই পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া সম্ভব হবে । তখন, স্বপ্ন শুধুই স্বপ্ন নয়, দেশবাসী এর বাস্তব সুফল পকেটে ভরবে।