ভোট সংখ্যালঘুদের কাছে বিভীষিকায় পরিণত হয়েছে—২০ নভেম্বর রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত দাবিগুলো মনে করিয়ে দিয়েছে পুরোনো সত্যটা।
শুধু ২০ নভেম্বরের সংবাদ সম্মেলনে নয়, এর আগে ১১ অক্টোবর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও গুজব নিয়ে বিশেষ নজর রাখা এবং নির্বাচনী প্রচারে সাম্প্রদায়িক বক্তব্য বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা নির্বাচনের দুদিন আগে থেকে পরের ১৫ দিন পর্যন্ত ধর্মীয় সংখ্যালঘু এলাকাগুলোতে পুলিশ, আনসার ইত্যাদি মোতায়েনের পাশাপাশি বিজিবি ও ব্যাবের টহল নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। নির্বাচনের আগে ও পরে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলোকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণের জন্য একটি ‘মনিটরিং সেল’ গঠন করার দাবিও জানানো হয় ২০ নভেম্বরের সংবাদ সম্মেলনে এবং ১১ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে।
সংবাদ সম্মেলনে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় নেওয়া যাবতীয় পদক্ষেপের বিষয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতা, নির্বাচনের প্রার্থীসহ সমর্থককে জানানো এবং রেডিও, টেলিভিশনে তা জনগণের জানার জন্য প্রচার করার দাবি জানানো হয়। নির্বাচনী প্রচারকাজে সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা, ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, বিবৃতি, মিথ্যা-গুজব প্রচার বা এ ধরনের যাবতীয় প্রচারণা বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।
নির্বাচনকে সামনে রেখে এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। দাবিগুলোও অন্যায্য নয়। কারণ স্বাধীনতার পর যত নির্বাচন হয়েছে তার আগে-পরে সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে সেসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি, তদন্ত হলেও অপরাধীদের বিচার হয়নি। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট জয়লাভ করার পর দেশজুড়ে সংখ্যালঘুদের ওপর যে নিপীড়ন-নির্যাতন চালানো হয় তার কোনো নজির নেই দেশে। ১৯৭০-এর নির্বাচন বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনের পথ সুগম করে। ১৯৭১ সালে প্রথমবারের মতো বাঙালির নিজের স্বাধীন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বমাঝে স্বীকৃত হয়। এই পরিচয় ৫২ বছরে পদার্পণ করেছে। কিন্তু জাতির একটি অংশের কাছে ভোট আসে আতঙ্ক হয়ে।