Skip to content

নির্বাচনকেন্দ্রিক সাম্প্রদায়িক সংঘাত নিয়ে সতর্ক করব | দেশ রূপান্তর

বগুড়ায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষ, আহত ৫০

প্রেম

কোন ঘাসে ছিল দুঃখ তোমার কোন ঘাসে ছিল প্রেম

কোথায় ছিলেন রূপোলি জ্যোৎস্নাঢের সূর্যের হেম

কখনো নদীকে সোনালী গীতিকে এ কথা বলেছিলেম!

তখন সত্যি মানুষ ছিলাম

নদীর জলে আগুন ছিলোআগুন ছিলো বৃষ্টিতেআগুন ছিলো বীরাঙ্গনারউদাস—করা দৃষ্টিতে।

আগুন ছিলো গানের সুরেআগুন ছিলো কাব্যে,মরার চোখে আগুন ছিলোএ—কথা কে ভাববে?

কুকুর—বেড়াল থাবা হাঁকায়ফোসে সাপের ফণাশিং কৈ মাছ রুখে দাঁড়ায়জ্বলে বালির কণা।

আগুন ছিলো মুক্তি সেনারস্বপ্ন—ঢলের বন্যায়—প্রতিবাদের প্রবল ঝড়েকাঁপছিলো সব—অন্যায়।

এখন এ—সব স্বপ্নকথাদূরের শোনা গল্প,তখন সত্যি মানুষ ছিলামএখন আছি অল্প।

সত্য ফেরারী

কোথায় পালালো সত্য?দুধের বোতলে, ভাতের হাঁড়িতে! নেই তোরেষ্টুরেন্টে, হোটেলে, সেলুনে,গ্রন্থাগারের গভীর গন্ধে,টেলিভিশনে বা সিনেমা, বেতারে,নৌকার খোলে, সাপের ঝাঁপিতে নেই তো।

গুড়ের কলসি, বিষের কৌটো,চিনির বয়াম, বাজারের ব্যাগ,সিগারেট কেস, পানের ডিব্বা,জর্দার শিশি, লক্ষ্মীর সরা,নকশী পাতিল, চৌকির তলা,সবি খুঁজলাম, খুঁজে দেখলাম নেই তো!

সাংবাদিকের কাঠের ডেস্কে,কাগজে, কেতাবে, পুঁথিতে, কলমে,ইনজেকশনে, দাঁদের মলমে,ভ্যানিটি ব্যাগে বা পকেটে, আঁচলেড্রয়ারে, ব্যাংকে, আয়রণ সেফেসত্য নামক মহান বস্তু নেই তো!

কবিতায় নেই, সঙ্গীতে নেইরমণীর চারু ভঙ্গিতে নেইপাগলের গাঢ় প্রলাপেও নেইনাটকের কোন সংলাপে নেইশাসনেও নেই, ভাষণে নেইআঁধারেও নেই, আলোতেও নেইরেখাতেও নেই, লেখাতেও নেই,উত্তরে নেই, প্রশ্নেও নেইলেবাসে নেই, সিলেবাসে নেইপারমিটে নেই, বোনাসেও নেইহতাশায় নেই, আশাতেও নেইপ্রেম—প্রীতি ভালবাসাতেও নেইএমন কি কালোবাজারেও নেইকোথায় গেলেন সত্য?

রিপোর্ট ১৯৭১

প্রাচ্যের গানের মতো শোকাহত, কম্পিত, চঞ্চলবেগবতী তটিনীর মতো স্নিগ্ধ, মনোরমআমাদের নারীদের কথা বলি, শোনো।এ—সব রহস্যময়ী রমণীরা পুরুষের কণ্ঠস্বর শুনেবৃক্ষের আড়ালে স’রে যায়—বেড়ার ফোঁকড় দিয়ে নিজের রন্ধনেতৃপ্ত অতিথির প্রসন্ন ভোজন দেখেশুধু মুখ টিপে হাসে।প্রথম পোয়াতী লজ্জায় অনন্ত হ’য়েকোঁচরে ভরেন অনুজের সংগৃহীত কাঁচা আম, পেয়ারা, চালিতা—সূর্য্যকেও পর্দা করে এ—সব রমণী।অথচ যোহরা ছিলো নির্মম শিকারসকৃতজ্ঞ লম্পটেরাসঙ্গীনের সুতীব্র চুম্বন গেঁথে গেছে—আমি তার সুরকার— তার রক্তে স্বরলিপি লিখি।মরিয়ম, যীশুর জননী নয় অবুঝ কিশোরীগরীবের চৌমুহনী বেথেলহেম নয়মগরেবের নামাজের শেষে মায়ে—ঝিয়েখোদার কালামে শান্তি খুঁজেছিলো,অস্ফুট গোলাপ—কলি লহুতে রঞ্জিত হ’লেকার কী বা আসে যায়।বিপন্ন বিস্ময়ে কোরানের বাঁকা—বাঁকা পবিত্র হরফবোবা হ’য়ে চেয়ে দ্যাখে লম্পটেরক্ষুধা,মায়ের স্নেহার্ত দেহ ঢেকে রাখে পশুদের পাপ।পোষা বেড়ালের বাচ্চা চেয়ে—চেয়ে নিবিড় আদরসারারাত কেঁদেছিলো তাহাদের লাশের ওপর।এদেশে যে ঈশ্বর আছেন তিনি নাকিঅন্ধ আর বোবাএই ব’লে তিন কোটি মহিলারা বেচারাকে গালাগালি করে।জনাব ফ্রয়েড,এমন কি খোয়াবেও প্রেমিকারা আসে না সহজ পায়ে চপল চরণে।জনাব ফ্রয়েড, মহিলারাকামুকের, প্রেমিকের, শৃঙ্গারের সংজ্ঞা ভুলে গ্যাছে।রকেটের প্রেমে পড়ে ঝ’রে গ্যাছেভিক্টোরিয়া পার্কের গীর্জার ঘড়ি,মুসল্লীর সেজদায় আনত মাথানিরপেক্ষ বুলেটের অন্তিম আজানে স্থবির হয়েছে।বুদ্ধের ক্ষমার মূর্তি ভাঁড়ের মতনভ্যাবাচেকা খেয়ে প’ড়ে আছে, তাঁরমাথার ওপরেএক ডজন শকুন মৈত্রী মৈত্রী ক’রেহয়তো বা উঠেছিলো কেঁদে।

বারবারা বিডলারকে

বারবারাভিয়েতনামের উপর তোমার অনুভূতির তরজমা আমি পড়েছি—তোমার হৃদয়ের সুবাতাসআমার গিলে—করা পাঞ্জাবিকে মিছিলে নামিয়েছিলপ্রাচ্যের নির্যাতিত মানুষগুলোরজন্যে অসীম দরদ ছিল সে লেখায়আমি তোমার ওই একটি লেখাই পড়েছিআশীর্বাদ করেছিলাম, তোমার সোনার দোয়াত কলম হোক।আমার বড়ো জানতে ইচ্ছে করে বারবারা, তুমি এখন কেমন আছ ?নিশ্চয়ই তুমি ডেট করতে শিখে গেছ।গাউনের রঙ আর হ্যাট নিয়ে কি চায়ের টেবিলে মার সঙ্গে ঝগড়া হয়?অনভ্যস্ত ব্রেসিয়ারের নিচে তোমার হৃদয়কে কি চিরদিন ঢেকে দিলে।আমার ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে বারবারা।তোমাদের কাগজে নিশ্চয়ই ইয়াহিয়া খাঁর ছবি ছাপা হয়—বিবেকের বোতামগুলো খুলে হৃদয় দিয়ে দেখোওটা একটা জল্লাদের ছবিপনেরো লক্ষ নিরস্ত্র লোককে ঠাণ্ডা মাথায় সে হ্ত্যা করেছেমানুষের কষ্টার্জিত সভ্যতাকে সেগলা টিপে হত্যা করেছেঅদ্ভুত জাদুকরকে দেখবিংশ শতাব্দীকে সে কৌশলে টেনে হিঁচড়ে মধ্যযুগে নিয়ে যায়।দেশলাইয়ের বাক্সর মতো সহজে ভাঙেগ্রন্থাগার, উপাসনালয়, ছাত্রাবাস,মানুষের সাধ্যমত ঘরবাড়িসাত কোটি মানুষের আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের ফুলকে সে বুট জুতোয়থেতলে দেয়।

টু উইমেন ছবিটা দেখেছ বারবারা ?গির্জার ধর্ষিতা সোফিয়া লোরেনকেদেখে নিশ্চয়ই কেঁদেছিলেআমি কাঁদিনি, বুকটা শুধু খাঁ খাঁ করেছিল—সোফিয়া লোরেনকে পাঠিয়ে দিয়ো বাংলাদেশেতিরিশ হাজার রমণীর নির্মম অভিজ্ঞতা শুনেতিনি শিউরে উঠবেন।অভিধান থেকে নয়আশি লক্ষ শরণার্থীর কাছে জেনে নাও, নির্বাসনের অর্থ কী ?জর্জ ওয়াশিংটনের ছবিওলা ডাকটিকেটে খোঁজ থাকবে না স্বাধীনতারআমাদের মুক্তিযুদ্ধের কাছে এসো—সাধু অ্যাবের মর্মর মূর্তিকে গণতন্ত্র আর মানবতার জন্যমালির ঘামে ভেজা ফুলের তোড়া দিয়োনা—নিহত লোকটি লজ্জায় ঘৃণায় আবার আত্মহত্যা করবে।বারবারা এসো,রবিশঙ্করের সুরে সুরে মুমূর্ষু মানবতাকে গাইবিবেকের জংধরা দরোজায় প্রবল করাঘাত করিঅন্যায়ের বিপুল হিমালয় দেখে এসে ক্রুদ্ধ হই, সংগঠিত হইজল্লাদের শাণিত অস্ত্রসভ্যতার নির্মল পুষ্পকে আহত করার পূর্বে,দর্শন ও সাহিত্যকে হত্যা করার পূর্বেএসো বারবারা বজ্র হয়ে বিদ্ধ করি তাকে।

শহীদদের প্রতি

তোমাদের যা বলার ছিলবলছে কি তা বাংলাদেশ ?শেষ কথাটি সুখের ছিল ?ঘৃণার ছিল ?নাকি ক্রোধের,প্রতিশোধের,কোনটা ছিল ?নাকি কোনো সুখেরনাকি মনে তৃপ্তি ছিলএই যাওয়াটাই সুখের।তোমরা গেলে, বাতাস যেমন যায়গভীর নদী যেমন বাঁকাস্রোতটিকে লুকায়যেমন পাখির ডানার ঝলকগগনে মিলায়।সাঁঝে যখন কোকিল ডাকেকারনিসে কি ধুসর শাখেবারুদেরই গন্ধস্মৃতিভুবন ফেলে ছেয়েফুলের গন্ধ পরাজিতস্লোগান আসে ধেয়ে।তোমার যা বলার ছিলবলছে কি তা বাংলাদেশ ?

(সংকলন শিমুল সালাহ্উদ্দিন)



বার্তা সূত্র