দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার : প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৩, ১১:১৮ পিএম
সিদ্ধিরগঞ্জের লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের মন্দির ভেঙে ফেলার অভিযোগ তুলে পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান নিট কনসার্ন গ্রুপকে ভূমিদস্যু আখ্যা দিয়েছে স্থানীয় হিন্দু নেতারা।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন, দেবোত্তর বোর্ড ও হিন্দু ফাউন্ডেশন বাস্তবায়নের দাবিতে পূজা উদযাপন পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত এক সমাবেশে হিন্দু নেতারা লক্ষ¥ীনারায়ণ কটন মিল দখল ও মিলের শতবর্ষী পুরনো মন্দির ভেঙে ফেলার অভিযোগ তুলে নিট কনসার্নের বিরুদ্ধে কথা বলেন। পাশাপাশি এ সময় তারা পুলিশ সুপারকে মামলা দায়েরের সাথে দখলকারীদের আইনের আওতায় আনারও দাবি করেন। একই সাথে লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলে পূজা বন্ধ থাকলে নারায়ণগঞ্জের সমস্ত পূজা বন্ধ থাকবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তারা।
নীট কনসার্ন গ্রুপকে ভূমিদস্যু উল্লেখ করে এবং পুলিশ সুপারকে তাদের বিরুদ্ধে মামলাসহ আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিপন সরকার বলেন, ১৯৩২ সালে অলিল বসু এবং সূর্য বসুর অর্থায়নে সিদ্ধিরগঞ্জে লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিল স্থাপিত হয়। ছোট বেলায় এই লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের কাপাড় আমরা সকলেই পরিধান করেছি। এই মিলটি ৭২ সালে জাতীয়করণ করা হয়, তখন এই মিলটি লোকসানের দিকে ধাবিত হয়। তাই ১৯৯৮ সালে শেখ হাসিনা শ্রমিকদের বিনামূল্যে এই মিল পরিচালনা করার জন্য দেন। সেখানে অর্থ বিনিয়োগ করার নামে নিট কনসার্ন গ্রুপ মন্দিরের কিছু শেয়ার হোল্ডারের শেয়ার অবৈধভাবে কিনে, এটা কেনা বলা যায় না এটা অবৈধ। শ্রমিকরা যদি চালাতে ব্যর্থ হয় তাহলে সরকার নিবে। কিন্তু এখানে বিনিয়োগ করে গত ৫-৭ বছর আগে আমাদের হিন্দু মুসলিম উভয়ের প্রতি নির্মম নির্যাতন করা হয়েছিল। ২০১২ সালের পর নিট কনসার্ন কর্তৃপক্ষ এই মিলে তালা লাগায়। সেখানে আমাদের মন্দির ছিল, তারা কাউকে কিছু না বলে সেটাকে মুড়িয়ে দেয়া হলো। এরপর পুলিশ সুপার আমাদের এ ব্যাপারে সাহায্য করেছেন। তবে গতকাল পর্যন্ত আমাদের কাছে সংবাদ আসলো তারা আবার পুনরায় সেখানে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর ভীতি সঞ্চার করছে এবং এও বলছে সেখানে আর পূজা করতে দেবে না। লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের পূজা যদি আমরা না করতে পারি তাহলে বাকি ৮টি পূজাও আমরা করবো না। আমরা নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্যের কাছে আহবান করেছি যাতে এর একটি মীমাংসা হয়। নয়তো এই ভূমিদস্যু গ্রুপ বাংলাদেশের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে তারা না গিয়েছে। তবে মাননীয় পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপের কারণে তারা তাদের অপকর্ম এখনো সফল করতে পারেনি। আমি মাননীয় পুলিশ সুপারকে অনুরোধ করবো আপনি এই বিষয়ে একটি মামলা করেন এবং তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলে পূজা বন্ধ হলে জেলার সমস্ত পূজা বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রদীপ দাস বলেন, আপনারা জেনেছেন লক্ষ্মী নারায়ণ মিল নিয়ে একটি বাজে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আমরা দেখেছি বুল-ড্রোজার দিয়ে আমাদের মন্দির ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তারা বলেছে ঝড়ে পড়ে গেছে তবে আমরা ভেকু দেখেছি, বুলড্রোজার দেখেছি মন্দিরের আশেপাশে। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান এবং ৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান অসাম্প্রদায়িক পরিবারের সন্তান। তাদের প্রতি আমরা বিশ্বাস রাখতে চাই। লক্ষ্মীনারায়ণ মিলের সম্পত্তি আমাদের সম্পত্তি। সরকারের মাধ্যমে একোয়ার করে তারা কাজ করছে। তাই আমাদের মন্দিরকে ভেঙে তারা কোনোভাবেই কাজ করতে পাওে না। সারা বাংলাদেশে প্রয়োজনে এর জন্য আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। আমরা ধমক দিতে চাই না, প্রয়োজনে মিল ঘেরাও করে আমরা আন্দোলন পরিচালনা করবো। লক্ষ্মীনারায়ণ মিলের পূজা বন্ধ হলে নারায়ণগঞ্জের সমস্ত পূজা বন্ধ হয়ে যাবে বলে আমরা মনে করি।
উল্লেখ্য, এর আগে হিন্দু নেতারা লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের ভেতরে গিয়ে মন্দিরটি ভাঙা অবস্থায় দেখতে পান। তখন তাদের সাথে নিট কনসার্নের দুই পরিচালক মনা এবং জাহাঙ্গীর মোল্লার সঙ্গে বাকবিতাণ্ড হয়। এরপর এই বিষয়টি পুলিশ সুপারের কার্যালয় পর্যন্ত গড়ায়। হিন্দু নেতাদের দাবি লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের মন্দিরটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য সব সময়ের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হোক।
এ বিষয়ে নিট কনসার্ন গ্রুপের পরিচালক জাহাঙ্গীর মোল্লা সময় নারায়ণগঞ্জকে বলেছিলেন, ঝড়ে মন্দির ভেঙে গেছে। আর তারা এতে আমাদের দোষী করছে। আমরা তাদের জন্য আলাদাভাবে ২ শতাংশ জায়গার পরিবর্তে ১০ শতাংশ জায়গার ব্যবস্থা করছি। যাতে তারা আরও বড় মন্দির পায়। সেই মন্দির তৈরি করে দেবো বলেও সবাইকে জানিয়েছি। তবে তারা এই জায়গাতেই পূজা করতে চায়। আসলে তাদের একটা চক্র আছে। পয়সা খাওয়া জন্য। তারা স্থানীয় হিন্দুদের আমাদের সাথে কথা বলতে দেয় না। এখানে অনেক বড় একটি ইন্ডাস্ট্রিজ হবে। ১০ হাজার লোকের কর্ম সংস্থান হবে। তবে তারা প্রায় ২ বছর যাবৎ আমাদের সমস্যা করছে। আজকে তারা তিনজন লোক ভেতরে ঢোকার কথা বলে ১ থেকে ২’শ লোক ভেতরে প্রবেশ করে অনেক হইচই করেছে। সেখানে আমাদের ২ হাজার কোটি টাকা মেশিন ছিল। তাছাড়া, হিন্দু নেতারা বোঝাতে চাচ্ছে সেটা মন্দির। কিন্তু সেটা মন্দির নয়, সেটা মন্ডপ। আমি অনেক হিন্দু লোকদের সাথে চলি। এদের মতো লোক দেখিনি। এই মন্দিরে সভাপতিও আমি। পূজাতে আমি টাকা দেই।