পুলিশ ও প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানান, গত কয়েকদিন আগে থেকে নাসিরনগর সদরে হিজবুত তওহীদের সঙ্গে স্থানীয় ওলামা পরিষদের বিরোধ চলে আসছিল। সম্প্রতি হিজবুত তওহীদের ৭১ সদস্য বিশিষ্ট নাসিরনগরের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি ঘোষণার পর থেকে লিফলেট বিতরণসহ নানা কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হয়ে উঠে হিজবুত তওহীদের সদস্যরা।
পরে বিষয়টি স্থানীয়দের নজরে এলে তাদের তৎপরতা বন্ধ করতে উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন নাসিরনগর ওলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুস সাত্তার। এ স্মারকলিপির পরই হিজবুত তওহীদের নেতা হাফেজ মো. ইদ্রিস মিয়া হয়ে ওলামা পরিষদের নয় সদস্যের নাম উল্লেখ করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
পরে এ নিয়ে নাসিরনগর থানা পুলিশ মামলার ঘটনার তদন্ত করে এলাকায় শান্তি বজায় রেখে বসবাস করার শর্তে উভয়পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেন এবং এসব বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য উভয় পক্ষকে সতর্ক করেন। বৈঠকের পর গত কয়েকদিন ধরে আবারও হিজবুত তওহীদের সাংগঠনিক কাজ শুরু হলে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়।
এর মধ্যে গতকাল সোমবার রাতে সৌদি প্রবাসী মো. ইদ্রিস মিয়ার ঘরে হিজবুত তওহীদের ১৫-২০ নারীকে নিয়ে সংগঠনের বিষয়ে আলোচনা করছিলেন। এসময় স্থানীয়দের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে ইদ্রিস মিয়ার ঘরে ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ড হচ্ছে। তখন স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ী সোহাগ মিয়া ইদ্রিসের ঘরে গিয়ে ইসলাম বিরোধী বক্তব্যের কারণ জানতে চাইলে উভয়পক্ষের মধ্যে তর্ক বিতর্ক শুরু হয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার হয়। পরে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংর্ঘষে হিজবুত তওহীদের পক্ষের সাতজন এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পক্ষের ৬ জন আহত হয়।
হিজবুত তওহীদের পক্ষের আহতরা হলেন- মো. সাকিরুল ইসলাম, মো. ইদ্রিস মিয়া, মোছা. জাকিয়া বেগম, খাদিহা আক্তার, উম্মে হানি, রাকি উল্লাহ, রোমান মিয়া ও কামাল রাজা। অপরদিকে, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পক্ষের আহতরা হলেন মো. আবুল খায়ের, মো. আনোয়ার ও মো. সোহাগ মিয়া সহ মোট সহ ১৩ জন। খবর পেয়ে নাসিরনগর থানার ওসি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
নাসিরনগর ওলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুস সাত্তার বলেন, হিজবুত তওহীদ নাসিরনগরে দীর্ঘদিন ধরে ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। আমরা বাধা দেওয়ায় আমাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও করেছে। গত রোববার রাতে স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ওপর হিজবুত তওহীদ পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে। আমরা এর বিচার চাই।
অপরদিকে হিজবুত তওহীদ নেতা হাফেজ মো. রাকিউল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, আমরা হিজবুত তওহীদ দল করি আদর্শিক কারণে। আমরা কারও কোনও ক্ষতি করি না। কিন্তু আমাদের কাছে কোনও দোকানদার কিছু বিক্রি করতে চাই না। সামাজিকভাবে আমাদের একঘরে করে রেখেছে। গতকাল সোমবার আমাদের ওপর স্থানীয় লোকজন পরিকল্পিতভাবে বসতঘর ও দোকানে হামলা করে।
নাসিরনগর থানার ওসি এটিএম আরিচুল হক জানান, বেশকিছু দিন ধরে উভয়পক্ষের মধ্যে ধর্মীয় মতাদর্শ দিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। সোমবার হঠাৎ করেই দুইপক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। দ্রুত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে পরিবেশ শান্ত আছে।
সরাইল সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান জানান, উভয়পক্ষের সঙ্গে নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানার ওসিকে নিয়ে দুই পক্ষের সাথে বৈঠক করেছিলাম। কিন্তু গতকাল স্থানীয় একটি চায়ের দোকান থেকে উভয়পক্ষের মধ্যে ধর্মীয় মতাদর্শ নিয়ে প্রথমে বিরোধ, পরে তা থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। সংর্ঘষে ১৩ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৬ জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে দুই জনের অবস্থা গুরুতর বলে আহতদের স্বজনেরা জানিয়েছেন।
তিনি জানান, ‘উভয় পক্ষের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরবর্তী সংঘর্ষের আশঙ্কায় এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’