রাজধানী ঢাকার ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাড়িতে ভাঙচুর, আগুন ও লুটপাটের ঘটনা প্রসঙ্গে রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি হিসেবে কখনও রাষ্ট্রের সম্পদ নষ্টকে সমর্থন করেন না, বলে বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “রাজনৈতিক দল কিংবা ব্যক্তি হিসেবে আমরা কখনও রাষ্ট্রের সম্পদ নষ্টকে সমর্থন করি না। আমরা যাই বলি না কেন, বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের একটা ইতিহাসও আছে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের। সুতরাং আমরা সমাজে অস্থিতিশীলতা কিংবা উচ্ছৃঙ্খলতা কোনোটাই পছন্দ করি না।”
তিনি আরও বলেন, “এটা সত্য কথা যে মানুষের মনে অনেক ক্ষোভ-বেদনা আছে। আমাদের ২ হাজারের মতো মানুষ মারা গেছে। হাজার-হাজার মানুষ আহত হয়েছে, রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। সেই কারণে মানুষের মধ্যে অনেক আবেগ আছে। কিন্তু তারা যখন পালিয়ে গিয়েছে, সেই আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে দেশ গড়ার কাজে লাগতে হবে। এটা তরুণ সমাজকে বুঝতে হবে।”
“এই তরুণরা একটা বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে দীর্ঘ ১৫-১৬ বছরের ফ্যাসিস্টদের কাছ থেকে দেশকে মুক্ত করেছে” বলে যোগ করেন সেলিমা রহমান।
ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ঠেকাতে না পারাকে সরকারের ব্যর্থতা না সীমাবদ্ধতা হিসেবে দেখেন বিএনপির এই নেতা। সেলিমা রহমান বলেন, “একটা অসুবিধা তো বর্তমান সরকারের আছে। যেমন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিতরা কাজ করছে না। এটা সরকারের জন্য বড় রকমের অসহায়ত্ব ।কিন্তু সরকারকে আরও একটু কঠোর ও সাবধানতার সঙ্গে ব্যাপারটি মোকাবিলা করা উচিত ছিল। এটাকে সরকারের ব্যর্থতা বলবো না।”
ওদিকে বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় ধানমন্ডি ৩২ ও দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুরের ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের কী ভূমিকা ছিল সেই তথ্য বিএনপি’র কাছে নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙচুরের প্রসঙ্গে টেনে হাফিজ উদ্দিন বলেন, “কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, কারা এজন্য দায়ী। সব পূর্ণাঙ্গ তথ্য পেলে আমরা এই সম্পর্কে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া মিডিয়ার সামনে জনগণের সামনে প্রকাশিত করবো। অপূর্ণ তথ্য নিয়ে কোনো মন্তব্য করা সঠিক নয়। আমরা ধারণা করছি, এগুলো গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য, আগামী দিনে গণতন্ত্রের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে সেজন্য কেউ কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করতে পারেন। বিশেষ করে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ আছে তা জানার চেষ্টা করবো।”
ধানমন্ডির ৩২ নম্বর নিয়ে সরকারের বিবৃতিঃ হাসিনার ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্যের বহিঃপ্রকাশ
রাজধানী ঢাকার ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাড়িতে ভাঙচুর, আগুন ও লুটপাটের ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনা অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। পলাতক অবস্থায় ভারতে বসে জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্যের কারণে জনমনে গভীর ক্রোধের সৃষ্টি হয়েছে যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
গত ৬ মাসে ৩২ নম্বরের বাড়িটিতে কোনো ধরনের আক্রমণ, ধংসযজ্ঞ হয়নি জানিয়ে শেখ হাসিনার বক্তব্যের দুটি অংশ ঘিরে এই ঘটনা ঘটেছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
বিবৃতি অনুসারে তার একটি হচ্ছে, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা আত্মদান করেছেন শেখ হাসিনা তাদের অপমান, অবমাননা করেছেন। শহীদের মৃত্যু সম্পর্কিত অবান্তর, আজগুবি ও বিদ্বেষমূলক কথা বলে পলাতক শেখ হাসিনা জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে অবজ্ঞা ও অশ্রদ্ধা করেছেন।”
দ্বিতীয়টি, “শেখ হাসিনা দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও অমানবিক প্রক্রিয়ায় নিপীড়ন চালিয়ে ক্ষমতায় থাকাকালে যে সুরে কথা বলতেন, গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়ার পরও তিনি একই হুমকি-ধামকির সুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে, অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া প্রতিটি মানুষের বিরুদ্ধে কথা বলে চলেছেন, হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। শেখ হাসিনা দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির হুমকি দিয়েছেন।”
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “মানুষের মনে জুলাই গণহত্যা নিয়ে যে ক্ষত রয়েছে, সে ক্ষততে শেখ হাসিনা একের পর এক আঘাত করে চলছেন। তার এই সহিংস আচরণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। অন্তর্বর্তী সরকার দেশ ও জনগণের জানমালের রক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্ক আছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বাত্মকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার যথাযথ চেষ্টা করছে।”
মানবতাবিরোধী অপরাধে একজন ওয়ারেন্টভুক্ত অভিযুক্ত শেখ হাসিনা বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়ানো সম্ভব বলে মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার।
সরকার আশা করে, ভারত যেন তার ভূখণ্ডকে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে—এমন কাজে ব্যবহৃত না হতে না এবং শেখ হাসিনাকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না দেয়। অন্তর্বর্তী সরকার ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি চায় না।
বাংলাদেশ জামায়াতের সেক্রেটারি গোলাম পরওয়ারঃ তার(শেখ হাসিনা) উসকানি, দাম্ভিকতা ও অহংকার কারণে এই পরিস্থিতি
ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়ী বলে মনে করেন বাংলাদেশ জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “সব ঘটনার জন্য দায়ী শেখ হাসিনা। তার উসকানি, দাম্ভিকতা ও অহংকার কারণে তিনি নিজেই এই পরিস্থিতি তৈরি করেছেন।”
“মানুষের দুঃখ-কষ্ট মধ্যে ৫ আগস্টের পরও আবারও আওয়ামী লীগের দাম্ভিকতা কারণে তাদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম হয়েছে” বলে উল্লেখ করে জামায়াত নেতা বলেন, “এটা কোনও দলের দৃষ্টিকোণ থেকে হয়নি। ৫ আগস্টকে যেমন কোনও দলীয় বিষয় ছিল না, গতকালের ঘটনাকেও কোনও দলীয় বিষয় বলা যাবে না। মানুষের গণবিক্ষোভের একটা গণবিস্ফোর ঘটেছে গতকালের ঘটনায়ও।”
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম
ঢাকার ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের পর ক্রেন ও বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “বাঙালির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের বাড়িটি শুধু একটি বাড়ি নয়। এর সঙ্গে জড়িত ইতিহাস, ঐতিহ্য, মুক্তিসংগ্রাম, অর্জন-সাফল্যের গৌরবগাঁথা ও স্মৃতিচিহ্ন। সেখানে অবৈধ, অনির্বাচিত সরকারের উপদেষ্টাদের প্রত্যক্ষ মদদে এবং সহযোগীতায় দানবীয় ও সন্ত্রাসী কায়দায় এ হিংস্র ঘটনা ঘটানো হয়েছে। বুলডোজার নিয়ে মিছিল! স্বাধীনতার ৫৪ বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশে এ ধরনের মিটিল হয়েছে বলে জানা নেই। তারা নিজেদের জঙ্গি ও উগ্রবাদি হিসাবে বার বার প্রমাণ করছে।
তিনি আরও বলেন, “এই ধ্বংসের উৎসবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নীরব ভূমিকা পালন করছে। গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সবাই জানে। দেশে আইনের শাসন নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী এখানে কিছুই করে না।”
“তবে বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিলেই বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস ও মুল্যবোধ মুছে দেওয়া যাবে না,” বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।
ফেসবুক লাইভে শেখ হাসিনা: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ‘মুছে ফেলার’ চেষ্টা চলছে
বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) অডিও লিঙ্কের মাধ্যমে এক ভাষণে অভিযোগ করেন যে, গত ছয় মাসে দেশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস “মুছে ফেলার” চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বুধবার রাতে ঢাকার ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর রোডে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ভেঙ্গে ফেলার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “একটি দালান ভাঙ্গা গেলেও ইতিহাস ধ্বংস করা যাবে না।”
“লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে যে পতাকা পেয়েছি, যে সংবিধান পেয়েছি, যে স্বাধীনতা পেয়েছি, তা ঐ কয়েকজন বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেবে, সেই শক্তি তাদের হয় নাই এখনো,” আওয়ামী লীগ এবং ছাত্র লীগের ফেসবুক পাতায় প্রচারিত ভাষণে হাসিনা বলেন।
“তারা একটা দালান ভাঙ্গতে পারে, কিন্তু ইতিহাস তারা ধ্বংস করতে পারে না। ইতিহাস তার প্রতিশোধ নেয়, একথাও তাদের মনে রাখতে হবে,” তিনি বলেন।
গত বছর ৫ আগস্ট ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হবার পর থেকে হাসিনা ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বাস করছেন। ধারণা করা হচ্ছে, সেখান থেকেই তিনি ফেসবুক লাইভ সম্প্রচারে অংশগ্রহণ করেন।
হাসিনার ফেসবুক ভাষণের ঘোষণা দেয়ার পর ঢাকায় ছাত্ররা বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে অভিযান চলানোর আহ্বান জানায়। বুধবার গভীর রাতে বুলডোজার নিয়ে এসে বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের স্মৃতি-জড়িত ভবনটি ভেঙ্গে ফেলা হয়।
হাসিনা তার ভাষণের দীর্ঘ সময় ধরে তার শাসনামলে অর্থনীতি এবং সমাজের বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন। তবে তিনি দুর্নীতি সম্পর্কে বা নির্বাচনে কারচুপি নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি। গত বছর ছাত্রদের আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে ব্যাপক প্রাণহানির জন্য তিনি, কোন প্রমাণ ছাড়াই, “ষড়যন্ত্রকারীদের” দায়ী করেন।
হাসিনা বলেন যে, ২০১৮ সালে সরকারী চাকুরীতে কোটার বিরুদ্ধে ছাত্রদের আন্দোলনের পর তিনি কোটা বাতিল করেন। পরবর্তীতে কিছু মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের করা মামলায় হাই কোর্ট কোটা পুনর্বহাল করলেও, সরকার আপিলের মাধ্যমে তা স্থগিত করে। তিনি দাবী করেন, কোটা কোন ইস্যুই ছিলনা, যদিও ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ছাত্রদের আন্দোলনের মূল বিষয় ছিল কোটা বাতিল।
“কিন্তু এটা যে কোটা আন্দোলন ছিল না, এটা যে ভিন্ন একটা ষড়যন্ত্র, সেটা আমি বারবার বলেছি। এটা ছিল সেই একজন ক্ষমতালোভীর মেটিকিউলাস ডিজাইনের অংশ,” তিনি বলেন। “যে অংশ হিসেবে সে ছাত্র হত্যা করেছে, জনগণকে হত্যা করেছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যা করেছে, পুলিশ হত্যা, সাংবাদিক হত্যা, সাংস্কৃতিক কর্মী হত্যা, সাড়া দেশ ক্ষত বিক্ষত করা, অর্থনীতি ধ্বংস করা হয়েছে।”
তিনি দাবী করেন গত বছর অগাস্ট মাস থেকে দেশের মানুষের “অধিকার কেড়ে নেয়ার চক্রান্ত করা হয়েছে” এবং বাংলাদেশকে “সন্ত্রাসীদের দেশে” রূপান্তরিত করা হয়েছে।
“বাংলাদেশকে নিয়ে যেন একটা ধ্বংসের খেলা শুরু হয়েছে। যে বাংলাদেশ সারা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল ছিল, উন্নয়নের বিস্ময় ছিল, সেই বাংলাদেশ চরমভাবে ধ্বংস করে আজ একটি জঙ্গি সন্ত্রাসীদের দেশে পরিণত করা হয়েছে।”
ট্রাইব্যুনালের নিষেধাজ্ঞা
বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বেশ কয়েকবার অডিও লিঙ্কের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বক্তব্যের গুরুত্ব বিবেচনা করে বাংলাদেশ এবং অন্যান্য দেশের গণমাধ্যম তার ভাষণ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এই প্রচার আটকাতে গত বছর ৫ ডিসেম্বর হস্তক্ষেপ করে আদালত। হাসিনার বক্তব্য গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করার উপর ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নিষেধাজ্ঞা থাকায়, তার বক্তব্য বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশ করা নিয়ে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ বুধবার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন যে, হাসিনার কোনো ভাষণ যদি এখন কোনো গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়, তাহলে সে গণমাধ্যম “শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করছে বলে ধরে নিতে হবে।” তিনি বলেন তারা “হাসিনা চ্যাপ্টার ক্লোজ” করে দিয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, আদালতের আদেশ নিয়ে তারা মোটেই বিচলিত নন। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলছেন, সরকার নির্দিষ্ট কিছু জায়গা বন্ধ করতে পারলেও, তারা “সারা দুনিয়ার গণমাধ্যমকে বন্ধ করতে পারবে না।”
“বাংলাদেশের মানুষের সচেতনতা যে স্তরে আছে, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে তারা পৃথিবীর কোথায় কি হচ্ছে, তার খোঁজ খবর রাখেন,” তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন। “বাংলাদেশর মানুষই বিকল্প পথ ও জায়গাগুলো বেছে নেবেন।”
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত গত ৫ ডিসেম্বর হাসিনার “ঘৃণাসূচক” বক্তব্য নিষিদ্ধ করার আদেশ দেয়। হাসিনার যেসব বক্তব্য ইতোমধ্যে ইলেক্ট্রনিক এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে সেগুলো সরিয়ে ফেলার আদেশও দেয় আদালত।
(এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন আদিত্য রিমন ও হাসিবুল হাসান।)