ঋতুর পালাবদলে প্রকৃতিতে বইছে গ্রীষ্মের রাজত্ব। কাঠফাটা রোদের উত্তাপ আর অসহ্য গরম। দাবদাহে ব্রহ্মতালু ফেটে যায় প্রায়। যেন বাইরে বের হওয়াই কঠিন। তবে গ্রীষ্মের খরতাপের বিপরীতে নানা রঙের ফুলে প্রকৃতি সেজেছে ভিন্ন রূপে।
‘গ্রীষ্ম-লাঞ্ছনার’ মধ্যেই বহুবর্ণের ফুল আর মনকাড়া ঘ্রাণ নাগরিক-জীবন রাঙিয়েছে রঙে আর ঘ্রাণে। তেমনই গ্রীষ্মের দৃষ্টিনন্দন ফুলে সেজেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাসও। কৃষ্ণচূড়া, জারুল, সোনালু, কনকচূড়া, বাগানবিলাস, জবা ও কাঠগোলাপের মায়ায় অপূর্ব রূপ ধারণ করেছে পুরো ক্যাম্পাস।
“}”>
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পাশে সারি সারি কৃষ্ণচূড়া ফুলের গাছ। এছাড়া শহীদ মিনার, মুন্নী সরণি, চৌরঙ্গী এলাকা ও বেগম খালেদা জিয়া হলের সামনের সড়কসহ ক্যাম্পাসের প্রায় অর্ধেক জায়গা দখল করেছে লাল কৃষ্ণচূড়া! জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনের পুকুরপাড়, শহীদ মিনার ও মুরাদ চত্বর এলাকা সেজেছে হলুদ কনকচূড়ার। নতুন প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন সড়কও দখল করেছে এই ফুল। অন্যদিকে ক্যাম্পাসে অর্ধশতাধিক জারুলগাছ আছে। সুইজারল্যান্ড, শান্তিনিকেতন এলাকা ও মওলানা ভাসানী হল সংলগ্ন পুকুর পাড়ে বেগুনি শোভা ছড়াচ্ছে জারুল।
“}”>
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ও শহীদ সালাম-বরকত হলের পাশে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে ও চৌরঙ্গী এলাকায় শোভা ছড়াচ্ছে সাদা ও গোলাপি রঙের মিশ্রণের ক্যাশিয়া রেনিজেরা ও ক্যাশিয়া জাভানিকা। এসব ফুল ছাড়াও ক্যাম্পাসে ঘুরতে ঘুরতে চোখে পড়বে লাল জবা, সোনালু, বাগানবিলাস ও কাঠগোলাপ। ঝড়ে পড়া নানা রঙের এসব ফুলে রঙিন হয়ে আছে পথঘাট। কেউ কেউ সেই ফুল কুড়িয়ে নিচ্ছেন। আবার কেউ রাঙানো পথে বসে ছবি তুলছেন। অনেকে কাব্যিক ক্যাপশনে পোস্ট করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
“}”>
কৃষ্ণচূড়ার রূপে মুগ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা কামাল স্বর্ণা বলেন, ‘লাল কৃষ্ণচূড়া দখল করে নিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাস। সূর্যের সবটুকু উত্তাপ যেন কেড়ে নিয়েছে ফুটন্ত কৃষ্ণচূড়া। পাশাপাশি ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে বহুগুণ। প্রচণ্ড গরমে কৃষ্ণচূড়ার তলায় বসলে অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি হয়, যা প্রকাশ করার মতো নয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের ছুটি শেষে ক্যাম্পাসে ফিরে দেখি, বাহারি ফুলের রূপে ক্যাম্পাস আপন মনেই সেজেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পথঘাট কৃষ্ণচূড়া, জারুল, সোনালু ফুলগুলো যেন এক স্বর্গীয় রূপে সাজিয়েছে। এছাড়া প্রকৃতিকে সাজিয়ে তুলতে কনকচূড়া, লাল জবা, বাগানবিলাস ও কাঠগোলাপ, ক্যাশিয়া রেনিজেরা ও ক্যাশিয়া জাভানিকা ফুলের জুড়ি নেই।’
“}”>
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ছালেহ আহাম্মদ খান বলেন, ‘আমরা গবেষণায় পেয়েছি, ক্যাম্পাসে ৯১৭ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এর মধ্যে, ৩৪.৬৮ শতাংশ শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদ বা ফুলের গাছ রয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুলের গাছ বেড়ে ওঠার জন্য যে ধরনের পরিবেশ দরকার, সেটা পুরোপুরি না থাকলেও মোটামুটি আছে। যদি সামগ্রিকভাবে তদারকি করা ও ভালো মানের চারা রোপণ করা হয়, তাহলে ফুলের পরিমাণও বেশি হবে।’