Skip to content

দিনাজপুরের ঐতিহাসিক রামসাগর দিঘি

দৃষ্টিনন্দন পাড় আর নীলাভ জলে যুগ যুগ ধরে দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে আসছে দেশের সবচেয়ে বড় দিঘি রামসাগর। দিনাজপুর জেলার তাজপুর গ্রামে অবস্থিত মানবসৃষ্ট একটি দিঘি। এটি দিনাজপুর জেলা শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত।

শহর থেকে যে পাকা রাস্তাটি রামসাগর দিঘিতে পৌঁছেছে, একসময় সেটি মুর্শিদাবাদ সড়ক নামে পরিচিত ছিল। মূল দিঘিটি উত্তর-দক্ষিণে ১,০৭৯ মিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১৯২.৬ মিটার। দিঘিটির গভীরতা প্রায় ৯.৫ মিটার। দিঘির পশ্চিম পাড়ের মধ্যখানে একটি ঘাট ছিল, যার অবশিষ্ট এখনও বিদ্যমান। বিভিন্ন আকৃতির বেলেপাথর দিয়ে নির্মিত ঘাটটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ছিল যথাক্রমে ৪৫.৮ মিটার ও ১৮.৩ মিটার।

পলাশী যুদ্ধের প্রাক্কালে রাজা রামনাথ দিঘিটি খনন করিয়েছিলেন, যার নামানুসারে দিঘিটির নামকরণ হয়েছে। সে সময় বাংলার নবাব ছিলেন আলীবর্দী খান। আশপাশের গ্রামবাসীকে পানি সরবরাহ করার উদ্দেশ্যে দিঘিটি খনন করা হয়। বলা হয়ে থাকে যে, দেশের এই স্থানে ১৭৫০ থেকে ১৭৫৫ সাল পর্যন্ত খরা ও দুর্ভিক্ষ নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছিল। রাজা রামনাথ সম্ভবত দুর্ভিক্ষপীড়িত অধিবাসীদের দুর্দশা লাঘবের উদ্দেশ্যে ‘কাজের বিনিময়ে খাদ্য’ কর্মসূচির ভিত্তিতে দিঘিটি খননের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। দিঘিটি খননে মোট ব্যয় হয়েছিল তৎকালীন আমলের প্রায় ৩০ হাজার টাকা। মাত্র ১৫ দিনে হাজার হাজার শ্রমিক দিনরাত পরিশ্রম করে বিশালাকার এই দিঘি খনন করেন।
রামসাগর দিঘিটি ঘিরে একাধিক কল্প-কাহিনি রয়েছে। তবে সর্বজন স্বীকৃত গল্পটি হলো দিনাজপুরের মহারাজা রামনাথ রায় দিঘি অঞ্চলের আশপাশের মানুষের চাষাবাদ ও সুপেয় পানির অভাব তীব্রভাবে অনুভব করেছিলেন। তার ফলশ্রুতিতে তিনি রাতে স্বপ্ন দেখে তা বাস্তবায়নে ওই অঞ্চলে একটি দিঘি খনন করেন। কথিত আছে ১৫ লাখ শ্রমিক পর্যায়ক্রমে মাত্র ১৫ দিনের মাথায় দিঘিটি অনেক গভীরভাবে খননকার্য সম্পন্ন করেন। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে দিঘিতে যখন জল উঠছিল না তখন। চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন রাজা রামনাথ রায়। তিনি আবারও স্বপ্নে দেখলেন দিঘিটির মধ্যবর্তী স্থানে একটি মন্দির স্থাপন করে সেখানে তার ছেলে পূজা-অর্চনা করলেই দিঘিটি জলে পরিপূর্ণ হবে। সে মোতাবেক রাজা তাই করলেন। মন্দির নির্মাণ করে তার ছেলেকে ঢাকঢোল পিটিয়ে দিঘিতে নামিয়ে দিয়ে পূজা শুরু করলে চারিদিক জলে ভরে পরিপূর্ণ হয়ে যায় রামসাগর দিঘি। রাজকুমারের সেই জলেই প্রাণ বিসর্জন হয়। সে থেকেই দিঘিটির নামকরণ হয় রামসাগর।

দিনাজপুর সদরের ৬নং আউলিয়াপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল জানান, এই দিঘিটি বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে আসে ১৯৬০ সালে। ১৯৯৫-৯৬ সালে এই দিঘিকে আধুনিক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয় ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল এটিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে বর্তমানে রামসাগর একটি বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। দিঘি এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য করপোরেশন বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দিঘিটির পশ্চিম পাশে একটি রেস্টহাউস এবং বিশাল জলাশয়ের চারপাশে একাধিক ক্ষুদ্র বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। রামসাগর জাতীয় উদ্যানে গড়ে তোলা হয়েছে একটি মিনি চিড়িয়াখানা। এতে অজগর, বানর এবং কিছু হরিণসহ বিভিন্ন প্রাণী স্থান পেয়েছে। শিশুদের বিনোদনের জন্য এখানে রয়েছে শিশু পার্ক। পিকনিকের সুবিধা নিশ্চিত করতে রামসাগরে রয়েছে সাতটি পিকনিক কর্নার।

এ ছাড়া ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর রামসাগর জাতীয় উদ্যানে সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে রামসাগর গ্রন্থাকার নামে একটি পাঠাগার গড়ে তোলা হয়েছে।



বার্তা সূত্র