কলকাতায় বাংলা ভাষায় ‘পানি’ ও ‘দাওয়াত’ শব্দের প্রবেশ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে সৃষ্ট বিতর্কের রেশ রয়েছে বুধবারও।
মঙ্গলবার কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন শিল্পী শুভাপ্রসন্ন। তিনি বলেন, ‘বাংলা ভাষার উচ্চারণ, বাংলা ভাষার তাৎপর্য, বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্য থেকে আমরা সরে আসছি। আমরা দেখছি বহু কারণে, নানান সাম্প্রদায়িক ছাপ বাংলা ভাষায় চলে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘যে শব্দগুলোকে আমরা কখনও বাংলা বলি না, ভাবি না, সেই শব্দ এখন বাংলা ভাষায় ঢুকছে। আমরা কোনো দিন বাংলা ভাষায় পানি ব্যবহার করি না। আমরা কোনো দিন কখনো দাওয়াত দিই না। সুতরাং, ভাবতে হবে কোন ভাষা আমাদের ভাষা।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বক্তব্য দিতে উঠেই শুভাপ্রসন্নের বক্তব্যের বিরোধিতা করেন। সবিনয়ে বলেন, ‘শুভাদা অনেক শ্রদ্ধেয়। কিন্তু শুভাদাকে একটা কথা বলব। দেখুন, কতগুলি শব্দ রয়েছে, যেগুলি সারা বিশ্বের। যেমন ‘মা’ বললে সবাই জানে দুটি শব্দ রয়েছে। একটা ‘মা’ আর একটা ‘মাদার’। আর একটা শব্দ রয়েছে ‘জল’ বা ‘ওয়াটার’। কিন্তু ওয়াটারকে কেউ কেউ ‘পানি’ বলে। এটা আপনাকে মেনে নিতে হবে। মাকে কেউ আম্মা বলে। এটাকে মেনে নিতে হবে। কেউ বারণ করেনি। আমি মা-ও বলব, আমি আম্মাও বলব।’
‘ওরা অতিথিসেবাকে দাওয়াত বলে। এটা বাংলাদেশের ভাষা। যারা ওপার থেকে এ দেশে এসেছেন, তারা এই ভাষাটাকে গ্রহণ করেছেন। আমি মাতৃভাষাকে চেঞ্জ (বদল) করতে পারি না। যেটা শিখে এসেছে, সেটা চেঞ্জ করবে কীভাবে?’ প্রশ্ন রেখে বলেন মমতা।
মমতার ভাষণের পরে ওই মঞ্চে শুভাপ্রসন্নের আর কিছু বলার সুযোগ ছিল না। কিন্তু এর রেশ শেষ হয়ে যায়নি। বুধবার আনন্দবাজার অনলাইন শুভাপ্রসন্নের কাছে এ বিষয়ে জানতে চায়। শিল্পী মঙ্গলবার মমতার ভাষণের পরে যে জবাব দেয়ার আর সুযোগ পাননি বুধবার সেই জবাবটাই দিলেন আনন্দবাজারে। তিনি যা বলেছেন (মঙ্গলবার) ভেবেচিন্তেই বলেছেন বলে জানান।
বাংলা ভাষায় সাম্প্রদায়িকতা ঢুকছে দাবি করে শুভাপ্রসন্ন বলেন, ‘স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, ঢাকা-শান্তিপুরের ভাষা মিশে কলকাতায় যে ভাষার প্রকাশ সেটাই আসল বাংলা ভাষার প্রকাশভঙ্গি। কিন্তু দিন দিন সেটা বদলে যাচ্ছে।’
‘মমতা তো বিষয়টা রাজনৈতিকভাবে দেখবেন। ওঁর হয়তো মনে হয়েছে, এটা এইভাবে বললে রাজনৈতিক অসুবিধা রয়েছে। কিন্তু আমার তো আর সেই ভয় নেই’-মমতার আপত্তি প্রসঙ্গে বলেন শুভাপ্রসন্ন।
পাল্টা প্রশ্নও রাখেন তিনি- ‘আমি যখন বাংলায় কথা বলি, তখন কি আপনাকে দাওয়াত দিই? আদাব,-আদাব বলি? আমি কি পানি বলি? এই যে অসংখ্য সাম্প্রদায়িকতার ভাষা হয়ে যাচ্ছে! কালকেই (গতকাল মঙ্গলবার) আমার পাশে বসেছিল ববি (কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম)। ববি বলল, আমায় যখন জনাব বলে আমি বাদ দিয়ে দিই। বলি শ্রী লিখতে।
‘তার (ফিরহাদ হাকিম) তো সেই ভাবনাটা রয়েছে। আমি কি মুসলমান দেখলেই জনাব বলব?’ প্রশ্ন রাখেন শুভাপ্রসন্ন।
পশ্চিমবঙ্গে যারা ‘পরিবর্তন’-এর ডাক দিয়েছিলেন, তৃণমূলের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত শুভাপ্রসন্ন ছিলেন তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য। কিন্তু প্রকাশ্য মঞ্চে তার বক্তব্যের বিরোধিতা করলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। শুভাপ্রসন্নও অনড়।
এই অনড়তার কী কারণ? আনন্দবাজারের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার তো বলার কোনও অসুবিধা নেই। আমার মধ্যে কোনো ‘হিপোক্রেসি’ (দ্বিচারিতা) নেই। আর মমতার সঙ্গে আমার যে সম্পর্ক, সেটা কালকেও বলেছেন, ‘অত্যন্ত শ্রদ্ধার’। সেই শ্রদ্ধার সম্পর্ক থেকে যাবে।’
তিনি এ-ও বলেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেস তো আমার জীবিকা বা উপজীবিকা নয়। আমি ছবি আঁকি।’
(ঢাকাটাইমস/২২ফেব্রুয়ারি/এফএ)