Skip to content

দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটকে ক্ষমতায় আসার দু’মাসের মধ্যে বিপুল ধারের মধ্যে কংগ্রেস সরকার

দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটকে ক্ষমতায় আসার দু'মাসের মধ্যে বিপুল ধারের মধ্যে কংগ্রেস সরকার

দক্ষিণ ভারতের কর্নাটকে মাত্র দু’মাস আগে বিধানসভা নির্বাচনে জিতে রাজ্যে সরকার গঠন করেছে কংগ্রেস। কিন্তু এই দু’মাসের মধ্যেই বিপুল অঙ্কের অর্থ ধার করে ফেলেছে তারা। নিজের এলাকার রাস্তাঘাট সারানোর টাকা চেয়ে না পাওয়া এক বিধায়কের ক্ষোভের কথা লেখা চিঠি সমাজমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পরেই এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসে।

এই কথা স্বীকার করেছেন রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী ডিকে শিবকুমার। তাঁর কথায়, “উন্নয়ন প্রকল্প দূরে থাক, ছোটখাটো সংস্কারের টাকাও নেই।” প্রকাশ্যেই তিনি আরও জানিয়েছেন, “বিধায়কেরা এলাকার নানা দাবিদাওয়ার কথা জানিয়ে চিঠি দিচ্ছেন। সবাইকেই বলা হয়েছে, কিছুদিন ধৈর্য্য ধরতে।”

ডিকে নিজে রাজ্যের সেচ এবং রাজধানী বেঙ্গালুরু উন্নয়ন বিষয়ক দফতরের মন্ত্রী। সেচমন্ত্রী হিসাবে তাঁর ঘোষণা, নতুন সেচ প্রকল্প হাতে নেওয়ার মতো টাকা সরকারের হাতে নেই। নতুন সরকারের সদ্য পেশ হওয়া বাজেটে সেচ দফতরের জন্য কোনও বাড়তি বরাদ্দ রাখা হয়নি।

কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তাহারে ঘোষিত পাঁচটি প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে গিয়েই সরকারের উপর এক লাখ কোটি টাকার বাড়তি বোঝা চেপেছে। চলতি আর্থিক বছরের বাকি মাসগুলির জন্যই এই পাঁচটি প্রতিশ্রুতি পূরণে ৬০ হাজার কোটি টাকার পৃথক তহবিল তৈরি করেছে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার সরকার। কারণ, আগামী অর্থ বছরের গোড়াতেই আছে লোকসভার ভোট। ততদিন পর্যন্ত ওই পাঁচ প্রকল্পের টাকায় সরকার হাত দেবে না। আর তাতেই সদ্য বিদায় নেওয়া বিজেপি সরকারের গতবারের উদ্বৃত্ত বাজেট এবার এক ধাক্কায় ১২ হাজার কোটির ঘাটতি বাজেটে পরিণত হয়েছে। ফলে সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণে নেমেছে বিজেপি শিবির।

কংগ্রেসের দেওয়া পাঁচ প্রতিশ্রুতির অন্যতম হল, দরিদ্র পরিবারগুলিকে মাসে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া।

জুন মাসে প্রথমবার চাল দেওয়া গেলেও পরের মাস থেকেই সরকার ২৩ টাকা কেজি দরে ২৩০ টাকা গরিবদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দিতে শুরু করেছে। সরকারের বক্তব্য, যে চাল রেশনে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল তা সরকার কিনেছিল ২৩ টাকা কেজি দরে। এখন চালের ঘাটতি থাকায় নগদ টাকা দেওয়া হচ্ছে। এতে সরকারের বড় সমস্যা হল, প্রতি মাসে এই খাতে পুরো টাকা খরচ করতে হচ্ছে। চাল দিলে সরকার ধারে কিনে দিতে পারত। কিন্তু সাধারণ মানুষ চাল না পেয়ে বিরক্ত। তাঁদের বক্তব্য, কর্নাটকের বাজারে ২৩ টাকা কেজি দরে কোনও চাল পাওয়া যায় না।

চাল ছাড়াও নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মতো প্রত্যেক মহিলাকে মাসে দু হাজার টাকা এবং কর্মহীন গ্র্যাজুয়েট ও নন-গ্র্যাজুয়েটদের যথাক্রমে তিন হাজার এবং দেড় হাজার টাকা করে দিচ্ছে নতুন সরকার। এছাড়াও মহিলাদের সরকারি বাসে ভাড়া দিতে হচ্ছে না। আর আছে দুশো ইউনিট পর্যন্ত ফ্রি বিদ্যুৎ।

চলতি অর্থ বছরের বাকি সময়ের জন্য ফ্রি বিদ্যুতের গৃহজ্যোতি যোজনায় কর্নাটক সরকারকে নয় হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হবে। মহিলা ভাতার গৃহলক্ষ্মী যোজনায় ব্যয় হবে ১৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বিনামূল্যে ১০ কেজি চালের প্রকল্প অন্নভোগ্যতে খরচ ধরা হয়েছে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়াও মহিলাদের বিনা ভাড়ায় বাসে চড়ার সুবিধা দিতে সরকারের ক্ষতি হবে ২৮০০ কোটি টাকা। যা আসলে সরকারের আয় ছিল।

মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া কর্নাটক সরকারের চলতি বছরের জন্য ১৩ লাখ ২৭ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন। এরমধ্যে ঘাটতির ১২ হাজার কোটি টাকা চড়া সুদে বাজার থেকে ধার করবে সরকার। ইতিমধ্যেই দু দফায় সরকার রিজার্ভ ব্যাংকের মধ্যস্থতায় বাজারে বন্ড ছেড়ে টাকা ধার নিয়েছে। কারণ নিজস্ব আয় বাড়ানোর কোনও পথ এখন খোলা নেই। লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে কর চাপানোর ভাবনাও নেই সরকারের।

সরকারি আধিকারিকেরা ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী-সহ মন্ত্রীদের ইঙ্গিত দিয়েছেন, আর্থিকভাবে এতকাল শক্ত থাকা রাজ্য কর্নাটকের এভাবে বেশি দিন সবল থাকা কঠিন। আগামী বছরে পাঁচ সুবিধা প্রদান খাতে সরকারের খরচ আরও বেড়ে যাবে। তাছাড়া নতুন প্রকল্প রূপায়ন, রাস্তাঘাট সারাই ইত্যাদি ছাড়াও চিকিৎসা, শিক্ষার মতো জরুরি খাতে খরচ থাকবেই।

সূত্র: ভয়েজ অব আমেরিকা