১৮ মাস আগে আফগানিস্তানে তালিবান গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়ার পর থেকে, কীভাবে সংকটে জর্জরিত দেশটিকে সাহায্য করা যায়, সে বিষয়ে একটি পরিকল্পনা কিংবা চুক্তি করতে ব্যর্থতার জন্য, শনিবার বিশ্ব সম্প্রদায়ের নিন্দা করেছেন, আফগানিস্তানের একজন বিশিষ্ট নারী অধিকার কর্মী।
মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের একটি টাউন হল বক্তৃতায় আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত মাহবুবা সিরাজ। তিনি তাঁর বক্তৃতায় তালিবান শাসনের অধীনে তার দেশের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন।
তৎকালীন বিদ্রোহী তালিবানের সাথে প্রায় ২০ বছরের যুদ্ধের পর, ২০২১ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র এবং নেটো সৈন্যদের আফগানিস্তান থেকে বিশৃঙ্খলভাবে প্রত্যাহার করে নিলে, তালিবান যখন ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করে, তখন ৭৫ বছর বয়সী এই নারী অধিকার কর্মীসহ মুষ্টিমেয় কিছু নারী কর্মী সে দেশেই থেকে যান।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে পররাষ্ট্র বিষয়ক হাউজ কমিটির চেয়ারম্যান মাইকেল ম্যাককল, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি, বেলজিয়াম ও স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে টাউন হলের ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
কাবুল দখল করার পর থেকে, কট্টরপন্থী তালিবান আফগানিস্তান জুড়ে নারীদের উপর ব্যাপক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, জনজীবনে তাদের প্রবেশাধিকারকে কার্যত অবরুদ্ধ করে রেখেছে। তারা ষষ্ঠ শ্রেণির পর মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে, ক্রমবর্ধমানভাবে বেশিরভাগ নারীদের সরকারি ও বেসরকারি কর্মক্ষেত্রে নিষিদ্ধ করেছে। ইসলামী আইন বা শরীয়াহ-এর ব্যাখ্যা থেকে উদ্ভূত আদেশের উদ্ধৃতি দিয়ে তারা এইসব পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে তাদের এই ব্যাখ্যার সাথে অধিকাংশ ইসলামিক আলেমগণ মোটেও একমত নন।
সিরাজ বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায়কে তালিবানের সাথে এক সাথে কাজ করে যাওয়া দরকার। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যাগুলি গভীরতর হওয়ার কারণে নারীদের জন্য তাদের শিক্ষার উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হলেও, স্কুলে ফিরে আসা কঠিন করে তুলতে পারে।
তালিবানের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের পর, কয়েক হাজার সক্ষম এবং শিক্ষিত আফগান, বিশেষ করে যারা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিদেশী সৈন্যদের সাথে কাজ করছিল, প্রতিশোধের ভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
মূলত সাহায্য-নির্ভর দেশটির জন্য আর্থিক সহায়তা স্থগিত করেছে ওয়াশিংটন এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলি, যেহেতু তালিবান দেশটির ব্যাঙ্কিং খাতকে বিচ্ছিন্ন করেছে।
সমালোচকরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞা এবং অন্যান্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশটির অর্থনীতিকে এক প্রান্তে ঠেলে দিয়েছে এবং দীর্ঘস্থায়ী আফগান মানবিক সংকট সমাধানের জন্য দেশটির পুনর্গঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই সপ্তাহের শুরুতে, তালিবানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি বলেছিলেন, তারা আফগানিস্তানে শান্তি নিয়ে এসছেন এবং কাউকে আন্তঃসীমান্ত হামলার জন্য দেশটি ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। মুত্তাকি আরও বলেন যে তাদের প্রশাসন নিরাপত্তা, কূটনৈতিক এবং অন্যান্য সমস্যা নিয়ে আলোচনা ও সমাধানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের সাথে একত্রে কাজ করার জন্য বদ্ধপরিকর।
তবে, তালিবান নেতারা নারীদের জন্য তাদের নিয়ম নিয়ে আপস আলোচনা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তাদের দাবী, এই নিয়ম আফগান সংস্কৃতি এবং শরিয়তের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।