Skip to content

তাদের চোখে এখন নতুন বাড়ির স্বপ্ন

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আক্চায় থাকেন এসিও দাস। কোনো রকমের ভাঙাচোরা ঘর তার। দুই ছেলে আর এক মেয়ের বাবা এসিও দাস ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। সব মিলিয়ে পরিবারে সদস্য এখন আট। দুই কামরায় দুই ছেলে তাদের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঘুমান। এসিও দম্পতির থাকার জায়গা বারান্দায়। সারাজীবন অভাবে কাটানো এসিও দাসের চোখে এখন নতুন বাড়ি পাওয়ার স্বপ্ন।

তিনি বলেন, মেম্বার সাবের কাছত নাম দিয়া আসছি। এই শীতত ধাপত আর ঘুমাবা হুবেনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীক ধন্যবাদ হামার মতো অসহায় লোকক বাড়ি করে দিবার তানে।

এসিও দাস বলেন, আমি মানুষের বাড়িত কাজ করি যা পাই তা দিয়ে সংসার চলে। জমি কিনে বাড়ির করার মতো টাকা পয়সা নাই আমার কাছে। খুব কষ্টে দিন পার করছি। সরকারি বাড়ি পাইলে আমার থাকার একটা ভালো জায়গা হবে। এই শীতত বারান্দায় আর ঘুমাবা হুবেনি।

৬৫ বছরের বৃদ্ধা লিলা বালা থাকেন ঠাকুরগাঁওয়ের ঢোলারহাটে। সরকারি খাস জমিতে কোনো রকমে বসতি গড়ে কাটছে জীবন। নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তার ওপর উচ্ছেদের ভয়। এভাবেই পার করেছেন জীবনের পাঁচ দশক।

বয়সের ভারে ন্যুব্জ লিলা বালার স্বামী। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। একমাত্র ছেলে মাঠে-ঘাটে কাজ করে যা পায়, তাই দিয়ে টেনেটুনে চলছে জোড়াতালির সংসার।

তবে জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে অনেকটাই দূর হচ্ছে লিলা বালার জীবনের আক্ষেপ। কারণ আর কয়েক দিন গেলেই মিলবে বাড়ি, সঙ্গে পাবেন দুই শতাংশ ভূমির মালিকানা। এমন প্রাপ্তির আনন্দ ঝরে পড়ে লিলা বালার কণ্ঠে।

এবার মুজিববর্ষে সাড়ে ৭ হাজারেও বেশি ঘর পাবেন ঠাকুরগাঁওয়ের গৃহহীন পরিবারগুলো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এসব ঘর দেয়া হবে গৃহহীনদের। আগামী জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে একযোগে এসব ঘর হস্তান্তর কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।

বর্তমানে কর্মযজ্ঞে মুখরোরিত গুচ্ছগ্রামগুলো। শেষ পর্যায়ে চলছে ঘর নির্মাণ কাজ। এসব গুচ্ছ গ্রামে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না থাকায় কিছুটা দুর্ভোগের কথা বললেন বাসিন্দারা। তবে এ সমস্যা পর্যায়ক্রমে সমাধানের আশ্বাস দেন ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কেএম কামরুজ্জামান সেলিম।

Thakurgaon

কেউ থাকেন অন্যের জমিতে, কেউবা সরকারি জমি বেদখল করে। খড় বা বেড়া দিয়ে যুবুথুবু করে জরাজীর্ণ অবস্থায় নিদারুন কষ্টে তাদের বসবাস। পরিবার পরিজন নিয়ে দুর্বীসহ জীবনযাপন তাদের। তার ওপর সরকারি জমি উচ্ছেদ অভিযানে ঘরবাড়ি ভেঙে দিলে নিদারুন কষ্টের যেন শেষ নেই ভূমিহীন বা গৃহহীন এসব পরিবারের। তাদের কষ্ট লাঘবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না। এ ঘোষণার পর সারাদেশেই শুরু হয় গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ কার্যক্রম।

এর আওতায় ঠাকুরগাঁও জেলায় এবার তিনটি শ্রেণির ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ৭ হাজার ৮শ ঘর নির্মাণ করে দেবে জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে প্রথম দফায় দেয়া হবে সাড়ে ৬শ ঘর। একটি পরিবারের জন্য দুই রুম বিশিষ্ট ঘরে আরও থাকবে রান্না ঘর, বাথরুম ও স্টোর রুম। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা।

তবে এসব বাসিন্দাদের জন্য থাকছে না টিউবওয়েল ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। প্রতিটি পরিবার যেন একটি করে টিউবওয়েল পায় এবং বর্ষার পানি নিষ্কাশনে ড্রেনেজ ব্যবস্থার দাবি জানান সুবিধাভোগী ও জনপ্রতিনিধিরা।

তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এই ঘর উপহার পেলে তাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হবে এবং স্থায়ী বন্দোবস্ত হওয়ায় তারা খুঁজে পাবেন ঠিকানা। পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করবেন সুখ-শান্তিতে।

বার্তা সূত্র