জাতীয় সংসদের ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনের জন্য আলাদা আলাদা প্রার্থী ঘোষণা করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এবং বিরোধী দলের নেতা ও পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। এতে ফের প্রকাশ্যে এলো দুই নেতার দ্বন্দ্ব। এ নিয়ে দলের নেতাকর্মীরা অস্বস্তিতে পড়েছেন।
রওশন এরশাদ মনোনয়ন দিয়েছেন জাপা থেকে অব্যাহতি পাওয়া দলের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুনুর রশীদকে। অপরদিকে জিএম কাদের দলের পক্ষে মনোনয়ন দিয়েছেন মেজর (অব.) সিকদার আনিছুর রহমানকে।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে দলটিতে বিভক্তি ততবেশি স্পষ্ট হয়ে হয়ে পড়ছে। গত কয়েকমাসে ৪৩টি জেলা কমিটি অনুমোদন দেন রওশন এরশাদ অনুসারীরা।
জাতীয় সংসদের ঢাকা-১৭ আসনের আসন্ন উপনির্বাচনে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. মামুনূর রশিদ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বুধবার নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে ঢাকা জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার মো. মুনীর হোসাইন খানের কাছে মনোনয়নপত্রটি জমা দেওয়া হয়।
জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গার নেতৃত্বে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় জাপার প্রার্থী মো. মামুনূর রশিদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিরোধীদলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ্, সাবেক প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারোয়ার মিলনসহ সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাগজপত্রের রিট পিটিশনে লাঙ্গল প্রতীকের ১১৫৩/২০০০ সালের মামলার রায়ের কপিও ছিলো। এ ছাড়া ছিলো ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সম্মেলনে অনুমোদিত ও তৎকালীন মহাসচিবের সই করা দলীয় গঠনতন্ত্রের প্রথম মুদ্রণ কপি।
অপরদিকে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের ঢাকা-১৭ আসনে মনোনয়ন দিয়েছেন মেজর (অব.) সিকদার আনিছুর রহমানকে। বুধবার দলের বনানী চেয়ারম্যান কার্যালয়ে মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জিএম কাদের।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা এবিষয়ে ঢাকা টাইমসকে বলেন, রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক। তিনি মনোনয়ন দিতে পারেন না। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী গোলাম মোহাম্মদ কাদের দলের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। পার্টির চেয়ারম্যান যদি দীর্ঘদিনের জন্য অসুস্থ থাকেন, অথবা দেশের বাইরে থাকেন সেক্ষেত্রে মহাসচিব চেয়ারম্যানের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, যারা পার্টিকে নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন এবং এই কাজগুলোই করে থাকেন, তাদের কাছ থেকে সতর্ক থাকতে হবে। তারা দল দেশ ও জাতির শত্রু।
এবিষয়ে পার্টির অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া ঢাকা টাইমসকে বলেন, এর আগেও রাজশাহী ও খুলনা সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে তারা (রওশন গ্রুপ) দুইজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। কিন্তু ইসি তাদের মনোনয়ন প্রত্যাখ্যান করেন। জাতীয় পার্টির নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। বিধান অনুযায়ী অন্য কেউ মনোনয়ন দেয়ার সুযোগ নেই। এবারও তাদের মনোনয়ন গ্রহণযোগ্য হবে না।
তিনি আরও বলেন, রওশন এরশাদ একজন অসুস্থ মামুষ। আদৌ তিনি মনোনয়ন দিয়েছেন কিনা তা নিয়ে আমি সন্দিহান। কেননা তিনি থাইল্যান্ড থাকা অবস্থায় নাকি দলের বিরুদ্ধে ৪৩টি চিঠি দিয়েছেন। তার অনুসারীরা তা মিডিয়ায় দিয়েছেন। পরবর্তীতে রওশন এরশাদ দেশে এলে প্রতিটি চিঠির বিষয়ে তিনি অস্বীকার করেন।
এ দিকে আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মোহাম্মদ আলী আরাফাত (মোহাম্মদ এ আরাফাত)। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য।
চিত্রনায়ক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের মৃত্যুতে জাতীয় সংসদের ঢাকা-১৭ আসনটি শূন্য হয়। গত ১৫ মে তিনি সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
ঢাকাটাইমস/১৪জুন/জেবি/ইএস