কারসাজির মাধ্যমে কাগজপত্রে মডেল পরিবর্তন করে বিদেশ থেকে দুটি বিলাসবহুল গাড়ি এনেছে চট্টগ্রামের এএস ট্রেডিং নামে একটি প্রতিষ্ঠান। মিথ্যা ঘোষণা শুল্ক ফাঁকির এই চেষ্টা আটকে দিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ। এরপর ভুল স্বীকার করে যুক্তরাজ্য থেকে আনা গাড়ি দুটি পুনঃরপ্তানির অনুমোদন নিলেও নির্ধারিত সময়ে তা করতে পারেনি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটি। এ অবস্থায় প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের এসব গাড়ির বিষয়ে এ সপ্তাহে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের আগস্টে এলসির মাধ্যমে বিলাসবহুল দুটি নতুন মডেলের ল্যান্ড রোভার ডিফেন্ডার আমদানি করে এএস ট্রেডিং। ১৯৯৭ সিসির ১১০ এক্স ডায়নামিক মডেলের গাড়িগুলো যুক্তরাজ্য থেকে আনা হয়। গাড়ি দুটি সম্পূর্ণ নতুন একটি মডেলের হলেও প্রতিষ্ঠানটি শুল্ক ফাঁকি দিতে ভিন্ন মডেল দেখিয়ে খালাসের চেষ্টা করে। আমদানিকারকের পক্ষে সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান পূর্বা অ্যান্ড ব্রাদার্স এ-সংক্রান্ত বিল অব এন্ট্রি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে দাখিল করে। তবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের তদন্তে দেখা যায়, গাড়িগুলোর মডেল এবং দাম দাখিল করা কাগজপত্রের চেয়ে ভিন্ন। এ কারণে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ গাড়িগুলো আটকে দেয়। এ অবস্থায় আমদানিকারক মিথ্যা ঘোষণার বিষয়টি ভুল হয়েছে জানিয়ে দুটি গাড়ি বিদেশে ফেরত পাঠানোর অনুমতি চেয়ে আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ৪৫ দিনের মধ্যে গাড়িগুলো পুনঃরপ্তানি করার অনুমতি দেয়। তবে নির্ধারিত সময় পার হলেও তা করতে পারেনি এএস ট্রেডিং।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘ল্যান্ড রোভার ডিফেন্ডার গাড়ির শুল্কায়ন সংক্রান্ত বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন। এএস ট্রেডিং নামের একটি প্রতিষ্ঠান ল্যান্ড রোভার নিয়ে এসেছে। মিথ্যা ঘোষণা দেওয়ার কারণে গাড়িগুলো খালাসের অনুমতি দেওয়া হয়নি। পরে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভুল স্বীকার করে গাড়িগুলো খালাস না করে পুনঃরপ্তানি করার সুযোগ চায়। তাদের এ সুযোগও দেওয়া হয়; কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি পুনঃরপ্তানিও করেনি। তাই বিষয়টি নিয়ে আর সময়ক্ষেপণের সুযোগ নেই। চলতি সপ্তাহেই এ গাড়ির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ কাস্টমস আইন অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠান পণ্য আমদানিতে মিথ্যা ঘোষণা দিলে সর্বনিম্ন ২০০ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ৪০০ শতাংশ জরিমানার বিধান রয়েছে। গাড়ির শুল্ক-কর নির্ধারণ করা হয় সিসি বিবেচনায়। এক্ষেত্রে সিসি দুই হাজার ধরলে শুল্ক-কর আসতে পারে প্রায় ৩৫০ শতাংশ। জরিমানাসহ গাড়ি দুটির শুল্ক করের মোট পরিমাণ ১০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
জানতে চাইলে এএস ট্রেডিংয়ের ম্যানেজার সেলিম মাহমুদ কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা এলসি করে দুটি ল্যান্ড রোভার গাড়ি আমদানি করেছি। এখানে মিথ্যা ঘোষণার কোনো বিষয় নেই। পরে আমরা গাড়িগুলো পুনঃরপ্তানির সুযোগ চেয়েছি। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস আমাদের সেই সুযোগ দেয়নি।’