বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে হোয়াইট হাউসে স্বাগত জানাচ্ছেন । তাঁর প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সামগ্রী ও জ্বালানি বিক্রি বৃদ্ধি করতে চাইবেন এবং ওই অঞ্চলে চীন যখন তার পেশী শক্তি প্রদর্শন করছে তখন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে ওয়াশিংটন তার সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে চায়।
“আমাদের লক্ষ্য হবে ভারতে প্রতিরক্ষার সাজসরঞ্জাম বিক্রি বৃদ্ধি করা যাতে এটা নিশ্চিত করা যায় যে তারা আমেরিকান প্রযুক্তির ব্যবহারকে অগ্রধিকার দিচ্ছে,” বৃহস্পতিবার সকালে এক ব্রিফিং’এ একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা সংবাদদাতাদের বলেন। সাংবাদিকদের ব্রিফিং’এর সময় কর্মকর্তাটির নাম জানানোর রেওয়াজ নেই।
“প্রেসিডেন্ট আমেরিকার জ্বালানি বিশ্বের সর্বত্রই রফতানি করতে চান এবং আমেরিকার প্রাকৃতিক সম্পদের গুরুত্বপূর্ণ আমদানিকারক হিসেবে ভারতকে অগ্রাধিকার দিতে চায় যাতে তারা তাদের অর্থনীতিকে আরও মজবুত করতে পারে,” কর্মকর্তা বলেন। “দ্বিপাক্ষিক বানিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে এবং ন্যায় সঙ্গত বানিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ করতে আমরা আমাদের মধ্যকার বানিজ্যিক সম্পর্ককে কি ভাবে উন্নত করতে পারি সে সব বিষয় নিয়ে দুই নেতা আলোচনা করবেন।”
বিশ্বের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যিক যুদ্ধের অংশ হিসেবে সম্প্রতি ট্রাম্প আরোপিত পাল্টাপাল্টি শুল্কের লড়াইয়ে ভারতের ক্ষতিগ্রস্ত হবার বিষয়ে নতুন দিল্লির সব চেয়ে বড় উদ্বেগ সম্পর্কে সরাসরি প্রশ্ন করা হলে, দ্বিতীয় একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, “আজকের বৈঠক থেকে আপনারা যা বেরিয়ে আসতে দেখবেন তা হলো আমাদের দু’টি গতিশীল ও ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির মধ্যে আরও দৃঢ় এবং ন্যায়সঙ্গত – আর আমি এই ন্যায়সঙ্গত শব্দের উপর জোর দিচ্ছি- গতিশীলতা সৃষ্টি হবে। আর আশা করা যাচ্ছে ২০২৫ সালের মধ্যেই এ রকম একটা চুক্তি হবে”।
কর্মকর্তাটি “সেমি-কন্ডাক্টার, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ, সরবরাহে স্বাভাবিকতা ও বৈচিত্রের” বিষয়ে ঘোষণাটি তুলে ধরেন।
মোদী সামাজিক মাধ্যম এক্স’এ বলেন যে তিনি “যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের দিকে এবং ভারত-যুক্তরাষ্ট্র কম্প্রিহেনসিভ গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ গড়ে তোলার দিকে চেয়ে আছেন। আমাদের জনগণের কল্যাণের জন্য এবং আমাদের এই গ্রহের উন্নত ভবিষ্যতের জন্য আমাদের দুটি দেশ ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাবে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন এই আলোচনায় চীনও প্রাধান্য পাবে এবং হোয়াইট হাউস আরও জানিয়েছে যে এই দুই নেতা যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের সমন্বয়ে গঠিত কোয়াডকে আরও উন্নত করার বিষয় নিয়েও আলোচনা করবেন।
ইউ.এস ইনস্টিটিউট অফ পিস’এর জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ড্যানিয়েল মার্কে বলেন, “২০২০ সালের গালোয়ান উপত্যকার দূর্ঘটনার পর ভারত-চীন সম্পর্কের দ্রুত অবনতি ঘটে।” ওই ঘটনায় বিতর্কিত অঞ্চলে রাস্তা নির্মাণ নিয়ে ভারতীয় ও চীনা সৈন্যরা সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে এবং তা “নিঃসন্দেহে নতুন দিল্লিকে ওয়াশিংটনের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্বের ব্যাপারে আরও বেশি আগ্রহী করে তোলে”।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক এন্ড ইন্টারন্যশনাল ন্টাডিজের ভারত বিষয়ক বিশ্লেষক বিক রসো ভারতের লক্ষ্য সম্পর্কে ভয়েস অফ আমেরিকার সাথে কথা বলেন।
“প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন বিশ্বের বিরুদ্ধে এক ধরণের বানিজ্যিক লড়াই শুরু করছেন, এতে অন্য অনেক দেশের চাইতে ভারতের বড় রকমের ঝুঁকি রয়েছে এবং তারা এটা নিশ্চিত করতে চায় যে এই সম্পর্ক যাতে স্থিতিশীল থাকে,” তিনি বলেন। “সুতরাং তারা এই জায়গায় আসতে চায়। তারা সামনে থাকতে চায়। তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে সব জিনিষ ক্রয় করতে পারবে সে সব নিয়ে কথা বলতে চায়। তারা সেই সব নীতি নিয়ে কথা বলতে চায় যার নিস্পত্তি তারা করতে পারে এবং সব কিছু যাতে স্থিতিশীল থাকে সেটা নিশ্চিত করতে চায়,কারণ এই সম্পর্ক আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
এই প্রতিবেদনে ভয়েস অফ আমেরিকার প্যারিস হুয়াং কিছু তথ্য সরবরাহ করেছেন।