ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রবিবার বলেছেন, তিনি এ’সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাতেরসময় তার দেশের স্বঘোষিত “হামাসের বিরুদ্ধে বিজয়,” ইরানের আগ্রাসনের মোকাবিলা এবং আরব দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করবেন।
ট্রাম্প মঙ্গলবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে স্বাগত জানাবেন। এটি হবে তার দ্বিতীয় চার বছরের মেয়াদ শুরু করার দুই সপ্তাহ পর প্রথম কোনো বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে সাক্ষাৎ। ট্রাম্প নেতানিয়াহুর দীর্ঘকালীন মিত্র এবং হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ছয় সপ্তাহের চলমান যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি-বিনিময় চুক্তি সফলভাবে মধ্যস্থতায় সহায়তা করার জন্য তাঁর মধ্য প্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফকে পাঠান।
যদিও হামাস ইসরায়েলের অধীনে থাকা কয়েকশ ফিলিস্তিনি বন্দীদের বিনিময়ে ১৮ জন জিম্মিদের মুক্তি দিয়েছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তিটির দ্বিতীয় পর্যায় নিয়ে কঠিন আলোচনাগুলো এখনো বাকি রয়েছে।
হামাস গত মাসে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর দ্রুত গাজায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে, যদিও ইসরায়েল বলেছে তারা এটি হতে দিবে না। যোদ্ধারা বলেছে, তারা সম্পূর্ণভাবে যুদ্ধের অবসান না হওয়া এবং ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী সংকীর্ণ অঞ্চল থেকে ইসরায়েলি বাহিনীকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার না করে নেওয়া পর্যন্ত তারা যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্ধারিত জিম্মিদের মুক্তি দিবে না।
যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করে।
নেতানিয়াহু মার্চের শুরুতে যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্ব শেষ হওয়ার পর যুদ্ধ পুনরায় শুরু করারজন্য তার কট্টর ডানপন্থী অংশীদারদের ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে রয়েছেন।
এ ব্যাপারে ট্রাম্পের অবস্থান কোথায় তা পরিষ্কার নয়।
ট্রাম্প ইসরায়েলের কট্টর সমর্থক, তবে তিনি মধ্য প্রাচ্যে যুদ্ধ শেষ করারও অঙ্গীকার দিয়েছেন এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে মধ্যস্থতায় সহায়তা করার জন্য কৃতিত্ব নিয়েছেন।
যুদ্ধের সমাপ্তি এবং অবশিষ্ট প্রায় ৬০ জন জিম্মির মুক্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা সোমবার থেকে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র, কাতার এবং মিশর ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে কোনও চুক্তি মধ্যস্থতা করতে না পারে, তবে মার্চের শুরুর দিকে যুদ্ধ আবার শুরু হতে পারে।
দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে আলোচনা
পনেরো মাসব্যাপী যুদ্ধে ইসরায়েলি পাল্টা হামলায় ৪৭,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলছে তারা ১৭,০০০ জঙ্গি হত্যা করেছে।
রবিবার ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে রাওনা হওয়ার আগে দেয়া এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেন যে, তিনি এবং ট্রাম্প “হামাসের বিরুদ্ধে বিজয়, সকল জিম্মির মুক্তি এবং ইরানের সন্ত্রাসী চক্রের সকল অংশের মোকাবেলা” নিয়ে আলোচনা করবেন। তিনি ইরানদের সাথে হামাসসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক জঙ্গি গোষ্ঠীর সম্পর্কের দিকে ইঙ্গিত করেন।
যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্বে, হামাস ৩৩জন জিম্মিকে মুক্তি দেবে যাদের আটজন মৃত বলে হামাস জানিয়েছে। তার বিনিময়ে, ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী প্রায় ২,০০০ ফিলিস্তিনিকে ইসরায়েল মুক্তি দেবে।
ইসরায়েলি বাহিনী বেশিরভাগ এলাকা থেকে সড়ে এসেছে, এবং লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনিকে গাজার বিধ্বস্ত উত্তরাঞ্চলে ফিরতে দিয়েছে।
ট্রাম্পের মধ্য প্রাচ্য প্রতিনিধি উইটকফ যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার শেষ কয়েক সপ্তাহে যোগ দেন এবং চূড়ান্ত চুক্তি অর্জন করতে সহায়তা করেন। তিনি গত সপ্তাহে ইসরায়েলে নেতানিয়াহুর সাথে দেখা করেন এবং ধারণা করা হচ্ছে তারা সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ওয়াশিংটনে দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করবেন।
ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে (২০১৭-২০২১) ইসরায়েল এবং চারটি আরব দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনে মধ্যস্ততা করেন। তিনি এখন আরও ব্যাপক একটি সমঝোতার চেষ্টা করছেন যেখানে ইসরায়েল এবং সৌদি আরব সম্পর্ক স্থাপন করবে।
তবে রিয়াদ বলেছে, তারা এধরনের চুক্তিতে তখনই সম্মত হবে যখন গাজায় যুদ্ধ শেষ হবে এবং ১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে ইসরায়েলের দখলকৃত গাজা, পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেম নিয়ে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিশ্বাসযোগ্য পথ তৈরি হবে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র সমর্থন করে, কিন্তু নেতানিয়াহুর সরকার তার বিরোধিতা করে।
এই প্রতিবেদনের কিছু অংশ দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস থেকে নেয়া হয়েছে।