যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প রবিবার বলেছেন যে, তিনি দেশের সবচেয়ে বড় তিনটি বাণিজ্য পার্টনারের পণ্যের উপর যে নতুন শুল্ক আরোপ করেছেন, তার ফলে আমেরিকানদের কিছুটা আর্থিক “কষ্ট” হতে পারে। কিন্তু তিনি মনে করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে এটা “ন্যায্য মূল্য” হবে।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর প্রথম মেয়াদে (২০১৭-২১) ট্রাম্প কানাডা এবং মেক্সিকোর সাথে শুল্ক-মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন। কিন্তু শনিবার তিনি দু’দেশের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন যা মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হবে। তিনি চীনের উপর বিদ্যমান শুল্কর সাথে আরও ১০ শতাংশ যোগ করেছেন।
ট্রাম্প দাবী করেন যে, এই তিন দেশ যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসন এবং মারাত্মক মাদক ফেন্টানিল সরবরাহ আটকাতে যথেষ্ট কাজ করছে না।
সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশালে রবিবার সকালের দিকে ট্রাম্প স্বীকার করেন যে, শুল্কর কারণে আমেরিকান ভোক্তাদের জন্য জিনিস-পত্রের দাম বেড়ে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো অন্য দেশ থেকে পণ্য আমদানির সময় ফেডেরাল সরকারকে যে শুল্ক দেয়, সেটা তারা দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে হয় আংশিকভাবে নয় পুরোটাই ভোক্তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়। তারা বাড়তি শুল্কর খরচ নিজেরা বহন করেনা।
কিন্তু ট্রাম্পের মন্তব্যের লক্ষ্য ছিল মূলত কানাডা, যারা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রদের একটি। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্সাস ব্যুরো বলছে, গত বছর কানাডার সাথে বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৫,৫০০ কোটি ডলারের ঘাটতি ছিল।
“কেন? এর কোন কারণ নেই,” ট্রাম্প বলেন। “তাদের এমন কিছু নেই যেটা আমাদের দরকার। আমাদের অফুরন্ত জ্বালানি আছে, নিজেদের গাড়ি বানানো উচিত, এবং আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি কাঠ আছে।”
“ব্যাপক ভর্তুকি ছাড়া, একটি কার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে কানাডার অস্তিত্ব থাকবে না। নির্মম কিন্তু সত্য। কাজেই, কানাডার উচিত আমাদের প্রিয় ৫১তম অঙ্গরাজ্য হয়ে যাওয়া। অনেক কম আয়কর, এবং কানাডার জনগণের জন্য আরও অনেক ভাল সামরিক নিরাপত্তা – এবং কোন শুল্কও থাকবে না!” ট্রাম্প বলেন।
মঙ্গলবার থেকে শুল্ক কার্যকর
এর আগে ভয়েস অফ আমেরিকার প্যাটসি উইডাকুসোয়ারা জানিয়েছেনঃ
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, মঙ্গলবার থেকে কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ এবং চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প শনিবার একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন।
“কানাডা এবং মেক্সিকো অবৈধ ফেন্টানিলের নজিরবিহীন অনুপ্রবেশ হতে দিয়েছে যা আমেরিকান নাগরিকদের হত্যা করছে, এবং তারা অবৈধ অভিবাসীদেরও দেশের ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে,” শুক্রবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট তার ব্রিফিংয়ে বলেন।
এসময় ট্রাম্প তার ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো এস্টেটে সপ্তাহান্তের ছুটিতে থাকার কারণে সংবাদকর্মীদের সাথে কোন কথা বলার পরিকল্পনা ছিল না।
কানাডার পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে তবে অপরিশোধিত তেল আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। মেক্সিকোর ২৫ শতাংশ শুল্কের মধ্যে রয়েছে জ্বালানি আমদানি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কেবলমাত্র কানাডার ক্ষেত্রেই ৮০০ ডলারের কম মূল্যের চালানের ক্ষেত্রে ‘ডি মিনিমিস’ শুল্ক ছাড় বাতিল করা হয়েছে।
চীনের পণ্যের উপর বিদ্যমান বিভিন্ন শুল্কের উপরে আরও ১০ শতাংশ যোগ হবে। আদেশ অনুযায়ী, শুল্ক থেকে ছাড় পাওয়ার আবেদন করার কোন পদ্ধতি নেই। তবে যদি দেশগুলো প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেয়, তাহলে শুল্ক হার বাড়ানোর ব্যবস্থা হতে পারে।
রবিবার, চীন রবিবার ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের নিন্দা করেছে, তবে পরিস্থিতির অবনতি যাতে না হয় সেজন্য আলোচনার সম্ভাবনা খোলা রেখেছে।। মেক্সিকো এবং কানাডা শনিবার পরে প্রতিক্রিয়া জানায়।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবম যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে বলেছেন যে তার সরকার সংলাপকে অগ্রাধিকার দেয়, তবে প্রতিক্রিয়ার জন্য বাধ্য হয়েছে।
তিনি লিখেন, “আমি আমার অর্থনীতি মন্ত্রীকে আমাদের প্রস্তুত করা ‘প্ল্যান বি’ বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছি, যার মধ্যে মেক্সিকোর স্বার্থ রক্ষায় শুল্ক ও অশুল্ক পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।”
তিনি “মেক্সিকান সরকারের অপরাধী সংগঠনগুলির সাথে জোট রয়েছে এবং আমাদের অঞ্চলে হস্তক্ষেপের অন্য কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে,” হোয়াইট হাউসের এমন অপবাদও প্রত্যাখ্যান করেছেন।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো শনিবার বলেছেন, কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যগুলিতে ২৫% শুল্ক আরোপ করে ট্রাম্পের পদক্ষেপের পাল্টা জবাব দেবে। তিনি বলেন, এই শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের ১৫৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্যের উপর প্রযোজ্য হবে। এটি মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হচ্ছে ৩০ বিলিয়ন ডলারের পন্যের উপর। বাকি ১২৫ বিলিয়ন পণ্যের উপর তা আগামী ২১ দিনের মধ্যে কার্যকর হবে।
চীন রবিবার চীনের উপর যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে। চীন বলেছে তারা বিষয়টি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় চ্যালেঞ্জ করবে এবং “আমাদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় পাল্টা পদক্ষেপ” নেবে।
যদিও দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ম “গুরুতরভাবে লঙ্ঘন” করেছে। তবে ওয়াশিংটনকে “খোলামেলা সংলাপে অংশ নেওয়া এবং সহযোগিতা জোরদার” করার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
চীন, মেক্সিকো এবং কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি করা বা কেনা পণ্য ও পরিষেবার এক-তৃতীয়াংশের বেশি সরবরাহ করে।
অনেক অর্থনীতিবিদ সতর্ক করেছেন যে, এই শুল্ক আরোপ বিপরীত ফল বয়ে আনতে পারে দেশটির জন্য।
এই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য নেওয়া হয়েছে রয়টার্স, এপি এবং এএফপি গেছে।