Skip to content

জঙ্গি সংক্রান্ত সাড়ে ৪০০ মামলা সামলাচ্ছেন একজন বিচারক

জঙ্গি সংক্রান্ত সাড়ে ৪০০ মামলা সামলাচ্ছেন একজন বিচারক

দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস ও বিডিএস প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে বিতর্ক চলছে। এতদিন কলেজগুলো নিজেদের মতো করে শিক্ষার্থী ভর্তি করত। শিক্ষার্থীরা পছন্দের কলেজে আবেদন করতেন। সেখান থেকে মেধার ক্রমানুসারে ভর্তি হতে পারতেন তারা। কিন্তু এবার সরকার অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি করে দিয়েছে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা অনলাইনে তাদের পছন্দ অনুযায়ী কলেজ পছন্দ করবেন। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর সে অনুযায়ী কলেজের সিট সংখ্যা ও মেধার ক্রমানুসারে ভর্তিযোগ্য কলেজ নির্দিষ্ট করে শিক্ষার্থীকে খুদে বার্তা পাঠাবে। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভর্তি করাবে।

এখন এই অটোমেশন পদ্ধতি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও পেশাজীবী দুটি সংগঠন।

একপক্ষ বলছেন, অটোমেশন পদ্ধতি ‘ভালো’। এতে এতদিন ধরে চলে আসা বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি নিয়ে নানা ধরনের অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও ভর্তিবাণিজ্য বন্ধ হবে। মেধার সমবন্টন হবে। সব কলেজ শিক্ষার্থী পাবে। কিন্তু অন্যপক্ষ এই ব্যবস্থাকে ‘হ-য-ব-র-ল’ বলেছেন। তাদের মতে, পছন্দমতো কলেজে ভর্তি হতে না পেরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চিকিৎসা শিক্ষায় অনীহা তৈরি হতে পারে। ধনীর ছেলেমেয়েদের পড়তে দেশের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী সংকট দেখা দেবে। অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে পরিচালনা ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হবে কলেজ কর্তৃপক্ষকে। এই খাতে ভবিষ্যত বিনিয়োগে ভাটা পড়তে পারে বলেও মনে করছেন তারা।

এমন তর্ক-বিতর্কের মধ্যেই ভর্তির সব প্রক্রিয়া শেষ করে এনেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। ইতিমধ্যেই কলেজ নির্দিষ্ট করে শিক্ষার্থীদের কাছে ভর্তি হতে খুদে বার্তা পাঠানো হয়েছে। আগামী ৩-৯ জুলাই পর্যন্ত ভর্তি চলবে।

এ বছর দেশের ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশি-বিদেশি মিলে ৬ হাজার ৭৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবেন। গত ৬ এপ্রিলের মধ্যেই সরকারি ৩৭টি মেডিকেল কলেজে ৪ হাজার ৩৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে শিক্ষার্থীদের এককালীন ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা গুনতে হবে, যা গতবছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, পদ্ধতিটি নতুন হওয়ায় অনেকের কাছে জটিল মনে হচ্ছে। মেডিকেল কলেজের কোনো গ্রেডিং করা হয়নি। শিক্ষার্থীদের পছন্দের মধ্যেই তার মেধাক্রম অনুযায়ী কলেজ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। এতে সব কলেজে শিক্ষার্থী সমবন্টন হবে।

নিজ পছন্দে না, মেধার ক্রমানুসারে ভর্তি: বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) অটোমেশন পদ্ধতির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এই সংগঠনের মতে, সরকারের ২০২৩ সালের ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী, একটি আসনের বিপরীতে পাঁচজন শিক্ষার্থীর আবেদন করার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রতিসিটের জন্য একজন করে আবেদন করেছেন।

বিষয়টিতে উদ্বেগ জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বরাবর লিখিতভাবে আপত্তি জানিয়েছে সংগঠনটি। সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলেছেন, এবার বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তিতে অটোমেশন প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে।

এ ব্যাপারে বিপিএমসিএর নির্বাহী পরিচালক মতিউর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এতে শিক্ষার্থীদের পছন্দ থাকছে না। মেধাক্রম ও কলেজের সিরিয়াল অনুযায়ী, একজন প্রার্থীকে একটি নির্দিষ্ট কলেজে ভর্তি হতে বলা হচ্ছে। কিন্তু সেই তালিকা অনুযায়ী কলেজে শিক্ষার্থীরা যাচ্ছে না।

গাজীপুরের তায়রুননেছা মেমোরিয়াল মেডিকেল কলেজের একজন কর্মকর্তা বিপিএমসিএকে জানিয়েছেন, এক অভিভাবকের দুই ছেলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে টিকেছে। তাদের প্রথম পছন্দ এই কলেজ। কিন্তু এক ছেলের এই কলেজে পাঠানো হয়েছে, আরেকজনকে পাঠিয়েছে খুলনায়। এই অভিভাবক খুব বিপদে পড়েছেন। দুই ছেলেকে দুই জায়গায় রেখে পড়ানোর মতো আর্থিক সংকুলান হচ্ছে না।

বিপিএমসিএর এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আগে কলেজে জমা হওয়া আবেদনের প্রেক্ষিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ মেরিট লিস্ট করত ও মেধাক্রম অনুযায়ি ভর্তি করত। তারপরও দেখা যেত ৩০-৩২ শতাংশ শিক্ষার্থী শুধু আর্থিক সংকটের কারণেই ভর্তি হতো না। সরকারি মেডিকেল কলেজে সমস্ত টাকা সরকার দিচ্ছে। সার্ক কোটায় যে সব শিক্ষার্থী আসছেন, তাদেরও সরকার বৃত্তি দিচ্ছে। কিন্তু বেসরকারি মেডিকেল কলেজ সম্পূর্ণ ব্যক্তি অর্থায়নে চলে। তারওপর যদি অটোমেশনের কারণে শিক্ষার্থী না পায়, তাহলে এসব প্রতিষ্ঠান টিকবে কি করে?

ভর্তিবাণিজ্য ও দুর্নীতি কমার আশা: ভর্তির ক্ষেত্রে অটোমেশন পদ্ধতিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে নামকরা কলেজগুলো। এ ব্যাপারে রাজধানীর বড় মগবাজারের ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. ওমর শরীফ ইবনে হাসান বলেন, অটোমেশন খারাপ না। সরকার যদি একটা সিস্টেম করে, ভর্তিতে স্বজনপ্রীতি দুর্ণীতি না হয়, তা হলে অটোমেশনই ভালো। এতে এখন আর কলেজগুলোতে দুর্নীতি করার সুযোগ নেই। আমাদেরও একটা চাপ থাকে, একে নেওয়ার ওকে নেওয়ার। সৎভাবে ভর্তি করালেও বলা হয় অসৎভাবে করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আমরা ঝামেলামুক্ত হলাম। তবে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরকে কাজটা ঠিকমত করতে হবে। তা ছাড়া সরকারি মেডিকেল কলেজেও তো শিক্ষার্থীরা বান্দরবন, কক্সবাজারসহ সারা দেশে যাচ্ছে। পড়ালেখা করতে হলে তো যেতেই হবে।তবে এমনও কলেজ আছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেগুলোর নাম কেউ জানে না বা চেনে না, সেখানে ছাত্ররা যেতে চাইবে না বলে মত দেন এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ওই কলেজগুলো ছাত্র সংকটে পড়তে পারে। তবে সরকার যেহেতু নিয়ম করে দিয়েছে সবগুলো কলেজে চয়েস দিতে, তাতে যদি কেউ পড়তে চায়, তা হলে তার কোথাও না কোথাও হবে।

টাঙ্গাইলের কুমুদিনি উইমেন্স মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের উপমহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. ওয়াহেদুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের কলেজে কোনো নেগেটিভ প্রভাব পড়বে না। কারণ আমরা যে পরিমাণ ফোন ও সাড়া পেয়েছি, তাতে আমার মনে হচ্ছে রেজাল্ট দিলে আমাদের সব সিট ভরে যাবে। শিক্ষার্থী ভর্তিতে কোনো অসুবিধা হবে না। আমাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য এই পদ্ধতি ভালো হবে।

রাজধানীর উত্তরার শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক মীর মোশাররফ হোসেন বলেন, অটোমেশন পদ্ধতি ভালো। খারাপ কিছু মনে করি না। এখন তো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে অন্যান্য কলেজেও এভাবে ভর্তি হচ্ছে। যার মেরিট যেখানে, সে সেখানেই ভর্তি হচ্ছে। কারণ পড়াশোনা করতে গেলে মেধা লাগবেই।

হ-য-ব-র-ল বলছে বিএমএ: বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, পৃথিবীর কোথাও এরকম ভর্তিপদ্ধতি নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ভর্তির নামে একটা হ-য-ব-র-ল পদ্ধতি খুলে রেখেছে। ভালো চিকিৎসক চান, কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোতে আলো-বাতাস বন্ধ করে রেখেছেন।

এই চিকিৎসক নেতা বলেন, কিছু কিছু মেডিকেল কলেজ সিট অনুপাতে ভর্তিতে নির্ধারিত টাকার চেয়ে বেশি টাকা নেয়। সেই অন্যায় রোধ করার জন্য পুরো পদ্ধতি বদলানো যাবে না। পদ্ধতিতে সংস্কার আনতে হবে। কোনো শিক্ষার্থী ভর্তির যোগ্য হলে তার পছন্দমতো কলেজে ভর্তির সুযোগ দিতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদের ইচ্ছেমতো কলেজ নির্বাচন করে দিতে পারে না।

এই কর্মকর্তা বলেন, সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজ করতে উৎসাহ দিচ্ছে, অনবরত বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউট খোলার জন্য অনুমোদন দিচ্ছে। কারণ দেশে জনসংখ্যা অনুপাতে চিকিৎসক নেই। সরকারি মেডিকেল কলেজ প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক তৈরি করতে পারছে না। অন্যদিকে, নিত্য নতুন পদ্ধতি করে সংকট তৈরি করছে। এখন মেডিকেল কলেজ যদি ছাত্র না পায়, তা হলে যে বিনিয়োগ সেটা উঠে আসবে না। ভবিষ্যতে কেউ এই সেক্টরে বিনিয়োগ করবে না।

গ্রেডিং নেই, গ্রেডিং আছে: বিপিএমসিএ দাবি করেছে, সরকার কলেজগুলোর একটা গ্রেডিং করেছে। সেটা কিভাবে করেছে বলে না। সেই গ্রেডিং অনুযায়ি শিক্ষার্থী বণ্টন করছে। যে কারণে শিক্ষার্থীদের পছন্দ আর গুরুত্ব পেল না। একেক জন একেক দিকে চলে গেল। এই গ্রেডিংয়ের কারণেই অনেক কলেজ একজন ছাত্রও পাচ্ছে না।

কিন্তু মেডিকেল কলেজের কোনো গ্রেডিং নেই বলে জানান রাজধানীর বড় মগবাজারের ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. ওমর শরীফ ইবনে হাসান। তিনি বলেন, এই পদ্ধতিতে কলেজ র‍্যাংকিংয়ের প্রয়োজন নেই। সু্টডেন্ট র‍্যাংকিং করবে। স্টুডেন্ট পছন্দ দেবে। তারা পছন্দ দিলে মেধা অনুযায়ী সেখানে ভর্তির সুযোগ পাবে। যেমন- একজন প্রথম চয়েস দিয়েছে ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ। এখানে সিট ১০০টা। যত আবেদন পড়েছে, সেখান থেকে মার্ক অনুযায়ী প্রথম ১০০ জনকে নেওয়া হবে। ১০১ নম্বর জন বাদ পড়ে যাবে। সে চলে যাবে তার দ্বিতীয় চয়েসের কলেজে। আর যদি এখানে ৯৫ জনই ১ নম্বর চয়েস দেয়, তাহলে ৯৫ জনই চান্স পেয়ে যাবে। কলেজের কোন র‍্যাংকিং না, র‍্যাংকিংকিং হবে ছাত্রদের পছন্দ থেকে। দ্বিতীয় অপসনেও যদি মার্কে না হয়, তাহলে চলে যাবে তৃতীয় চয়েসে। এভাবে কোনো না-কোনো মেডিকেল কলেজে সে চান্স পাবেই।



বার্তা সূত্র