Skip to content

‘চন্দ্রযান-৩’ নিয়ে সিনেমা নির্মাণের হিড়িক! | দেশ রূপান্তর

‘চন্দ্রযান-৩’ নিয়ে সিনেমা নির্মাণের হিড়িক! | দেশ রূপান্তর

পাঁচ দেশের জোট ব্রিকসের এবারের শীর্ষ সম্মেলনের শেষ দিনে ছয়টি দেশকে সদস্য হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ নেই। ছয় মাস ধরে বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়টি জোরালোভাবে আলোচনায় ছিল। প্রভাবশালী দেশ চীনেরও জোরালো সমর্থন ছিল। নির্বাচনের আগে পশ্চিমা চাপের মধ্যে ব্রিকসের সদস্যপদ লাভের ব্যাপারে সরকারের আগ্রহ ও প্রত্যাশা ছিল। ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্রিকসের সদস্য হতে পারলে তাতে নতুন মাত্রা যোগ হতো। সেই প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় কেউ কেউ মনে করছেন, কূটনৈতিকভাবে হোঁচট খেয়েছে বাংলাদেশ।

তবে কারও কারও মত হলো, বাংলাদেশ শেষ মুহূর্তে আবেদন করেছে। তাছাড়া এমন একটি ফোরামে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে যে ধরনের কূটনৈতিক প্রয়াস চালাতে হয়, সেটা করেনি। হতে পারে, এবার বাংলাদেশ সদস্যপদ পাবে ভাবেনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে তিন দিনের ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন শেষ হয়। ১৫তম শীর্ষ সম্মেলনে এ জোটে ছয় দেশকে সদস্য করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ ছয়টি দেশ হলো সৌদি আরব, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, ইথিওপিয়া ও আর্জেন্টিনা। আগামী বছর ১ জানুয়ারি থেকে তাদের সদস্যপদ কার্যকর হবে। অর্থাৎ পাঁচ দেশ থেকে এগারো দেশের জোটে পরিণত হবে ব্রিকস।

৪০টিরও বেশি দেশ এবার ব্রিকসে যোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। এর মধ্যে ২২টি দেশ এ জোটে যোগ দেওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিক আবেদন করে।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ব্রিকসে সম্প্রসারণ বিষয়ে ঘোষণা এলেও নীতিমালা, মানদ- ও প্রক্রিয়া নিয়ে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে দ্বিমত ছিল। শেষ পর্যন্ত গতকাল এসব বিষয়ে সবাই একমত হওয়ার পর ছয়টি দেশকে অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দেওয়া হয়।

গত জুনে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) একটি অনুষ্ঠানের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার বৈঠক হয়। এরপর ব্রিকসে যোগ দেওয়ার বিষয়টি জোরালোভাবে সামনে আসে। দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বাংলাদেশ আগস্টে ব্রিকসের সদস্য হিসেবে যুক্ত হতে পারে। তবে ওই বৈঠকের পর, অর্থাৎ ১৪ জুনের পরই বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিকসের সদস্যপদের জন্য আবেদন করে। বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশ আবেদন করেছে চলতি বছর।

বাংলাদেশকে সদস্য করার ক্ষেত্রে জোটের অন্যতম শক্তিশালী দেশ চীনের জোরালো সমর্থনের বিষয়টি গত দুই মাস ধরেই আলোচনায় ছিল। এমনকি সম্মেলনের সাইড লাইনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকেও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চীনা প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ব্রিকসের সদস্য হতে চীন বাংলাদেশকে সমর্থন দেবে।

কূটনৈতিক পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চীনের বেশি আগ্রহের ফলেই হয়তো শেষ পর্যন্ত সমর্থন পায়নি বাংলাদেশ। কারণ চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক সাপে-নেউলে অবস্থায় যাচ্ছে কয়েক বছর ধরে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার সঙ্গেও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক চরম খারাপ। আবার ব্রিকসের পাঁচ দেশের মধ্যে ভারত এবং ব্রাজিলের সঙ্গে পশ্চিমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকাও শুরুতে বাংলাদেশকে চাইলেও শেষ পর্যন্ত তেমন কোনো ভূমিকা রাখেনি। ব্রিকস জোটের বর্তমান সদস্যরাও চাইছিল নিজেদের জোটে আবার নতুন কেউ যেন প্রভাবশালী হয়ে না ওঠে। সে বিষয়ে সম্মেলনের আগে থেকেই সতর্ক ছিল দেশগুলো। ফলে ধারণা করা হচ্ছে ভারত ও ব্রাজিলের সমর্থন পায়নি বাংলাদেশ। আর দক্ষিণ আফ্রিকাও ছিল নীরব।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা চাপে রয়েছে সরকারপক্ষ। ব্রিকসের সদস্যপদকে পশ্চিমা চাপের বিপরীতে একটি শক্তি হিসেবে দেখেছিল সরকারের নীতিনির্ধারকরা। তাই হয়তো চলতি বছরের জুনেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এ জোটে সদস্য হওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। জুনেই বাংলাদেশ সদস্যপদের জন্য আবেদন করে।

তবে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, সাধারণত এ ধরনের কোনো ফোরামে যোগ দিতে শুধু আবেদন করে বসে থাকলেই হয় না। কারণ সদস্য দেশগুলোর নতুন কোনো দেশকে যুক্ত করার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হয়। ফলে ওইসব দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানের কাছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানোর পাশাপাশি সেসব দেশে বিশেষ দূত পাঠানোর মতো প্রয়াস চালাতে হয়। কিন্তু আবেদন করা ছাড়া সদস্য দেশগুলোর প্রধানদের সঙ্গে কোনো ধরনের সুপারিশ বা তদবির করেনি বাংলাদেশ।

সূত্রের দাবি, ব্রিকসে যুক্ত হতে বাংলাদেশের যতটা না আগ্রহ ছিল, তার থেকে বেশি আগ্রহ চীনের। পশ্চিমা আধিপত্য খর্ব করতে চীন ও রাশিয়া এ জোটের সম্প্রসারণ চেয়েছে। বাংলাদেশ সদস্যপদ না পেলেও যে ছয়টি দেশ সদস্যপদ লাভ করেছে, তাতেও চীন ও রাশিয়ার নেতৃত্বে ভূরাজনৈতিক মেরূকরণ ক্রমেই বাড়বে।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এবার না পেলেও পরেরবার বাংলাদেশ ব্রিকস জোটের সদস্যপদ পাবে। তবে সে ক্ষেত্রে ভারতের সমর্থন জরুরি। তারা বলেন, ভারত আঞ্চলিক ভারসাম্যের কথা ভেবেই এবার বাংলাদেশের পক্ষে হয়তো জোরালো সমর্থন দেয়নি। কারণ ভারতের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক অন্য যেকোনো সময়ের থেকে এখন বেশি বৈরী। তাই তারা ব্রিকসে চীনের সমর্থনে বাংলাদেশকে চায় না। একই সঙ্গে ভারতের অন্যতম মিত্র যুক্তরাষ্ট্র চায় না বাংলাদেশ চীনের বলয়ে ঢুকে পড়–ক। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক মিত্র ব্রাজিলের নজরেও বিষয়টি এসেছে। তবে এখানে বড় সমীকরণটি হতে পারে, এশিয়া অঞ্চলে চীনের আধিপত্য নিয়ে ভারতের আপত্তি। কারণ নতুন যে ছয়টি দেশকে সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে তিনটিই চীন ও রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, জোটের সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কিছু মানদণ্ড প্রস্তাব করেন। শেষ মুহূর্তে গতকাল জোটের সদস্য বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। এবারের ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের শুরু থেকেই মূল আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে জোটের সম্প্রসারণ।

গত বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নালেদি প্যানডর তাদের রাষ্ট্রীয় রেডিও স্টেশনকে বলেছিলেন, ‘আমরা এই জোট সম্প্রসারণের বিষয়ে একমত হয়েছি। আমাদের কাছে একটি নথি রয়েছে, যা আমরা গ্রহণ করেছি। এতে ব্রিকসের সদস্য হতে চায়, এমন দেশগুলোকে বিবেচনায় নেওয়ার জন্য নির্দেশিকা, নীতিমালা ও প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা আছে। …বিষয়টি খুবই ইতিবাচক।’

জোটের ভারসাম্য নিয়ে ভারতের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং লন্ডনের কিংস কলেজের অধ্যাপক হর্ষ পন্ত সম্প্রতি এক নিবন্ধে লিখেছেন, চীন সমমনা দেশগুলোকে ব্রিকসে স্বাগত জানানোর কথা বললেও ভারতের নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ে সতর্ক।

এ বিষয়ে ভারতের গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ব্রিকসের পরিধি বাড়ানোর প্রশ্নে জোটের অন্যতম সদস্য ভারতের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য হলো জোটে নিশ্চয়ই নতুন নতুন দেশকে স্বাগত জানানো দরকার। কিন্তু জোটের ভেতরে ‘আঞ্চলিক ভারসাম্য’ যাতে রক্ষিত হয় সেটাও দেখাটা খুব জরুরি। ব্রিকসে যাতে চীনের প্রভাব বলয়ে থাকা বেশি বেশি দেশ ঢুকে গিয়ে জোটের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্যটা নষ্ট না হয়ে যায়, ভারত সেদিকেও সতর্ক।

ভারতের সাবেক শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিবিদ পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী একাধিক গণমাধ্যমকে বলেছেন, চীন বা রাশিয়া উভয়ই চেয়েছে তাদের ঘনিষ্ঠ দেশগুলো ব্রিকসে আসুক। কারণ তাতে জোটের ভেতরে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তাদের পাল্লা শক্ত হবে। আবার ভারত নিশ্চিত হতে চেয়েছে ব্রিকস যাতে আরও বেশি চীনের দিকে ঝুঁকে না পড়ে। সেজন্য চীনের অনুমোদন নিয়ে যেসব দেশ ব্রিকসের সদস্য হতে চেয়েছে ভারত তাদের ব্যাপারে সাবধানী মনোভাব নিয়েছে। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ যদিও পুরোপুরি এর মধ্যে পড়ে না। বাংলাদেশ সরাসরি ব্রিকসেও আসুক, এটা কিন্তু কখনো ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশের সদস্যপদ চাওয়া অবশ্যই ইতিবাচক হয়েছে। সদস্যপদ না পাওয়াকে কূটনৈতিক ব্যর্থতা বলা যাবে না।’

তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত সপ্তাহে বলেছিলেন, এবার সদস্য হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অবশ্য তিনি বলেছিলেন, ব্রিকস জোট সম্প্রসারণ নাও হতে পারে। সেই হিসেবে বাংলাদেশের প্রত্যাশাও ছিল না।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালি উর রহমান বলেন, ‘সদস্যপদ পেলে বেশি ভালো হতো। তবে আমি যতদূর জানি সদস্যপদ নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তেমন কোনো তাড়া নেই বা ছিল না।’

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ব্রিকস জোটে নতুন যেসব দেশকে সদস্য করা হয়েছে তার মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে সবকটি দেশ বাংলাদেশ থেকে অগ্রসরমাণ। কাজেই এবার সদস্য না হওয়ার বিষয়টি কূটনৈতিক ব্যর্থতা বলা যাবে না। কারণ বাংলাদেশ এখনো স্বল্পোন্নত দেশের কাতারেই আছে। আর ব্রিকসে যারা আছে তারা আরও ওপরে।’ তিনি বলেন, ‘বিকল্প একটা অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি করার মতো সক্ষমতা রাখে এমন দেশকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো সেই ধরনের ভূমিকা পালন করতে পারবে কি না, তাও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।’

নতুন সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন ব্রিকসের বর্তমান চেয়ারম্যান দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এ ঘোষণার সময় রামাফোসার পাশে ছিলেন। ইউক্রেন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন সম্মেলনে অংশ নেননি। তার প্রতিনিধিত্ব করেছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।

পাঁচ সদস্য ছাড়াও এ জোটে যুক্ত হতে আগ্রহী দেশগুলোর প্রতিনিধিরাসহ বিশ্বের ৫০টি দেশ যোগ দিয়েছে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে।

ব্রিকস হলো উন্নয়নশীল অর্থনীতির পাঁচটি দেশ ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও সাউথ আফ্রিকার জোট। জোটের নামকরণ হয়েছে সদস্য দেশগুলোর নামের প্রথম অক্ষর মিলিয়ে। সর্বশেষ ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আগে এই জোট ‘ব্রিক’ নামে পরিচিত ছিল।

২০২১ সালে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক নামে পরিচিত ব্রিকসের ব্যাংকে যুক্ত হয় বাংলাদেশ।



বার্তা সূত্র