নগরীর কেন্দ্র থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে গিয়ে লোকজনকে নানা ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা যাতায়াত ব্যবস্থা। ঐ এলাকায় কোনো গণপরিবহন চলাচল করে না। রিকশা-অটোরিকশা এবং ব্যক্তিগত যানবাহনই ভরসা। এ কারণে খুব গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ না হলে কেউ সাধারণত সাগরিকায় খেলা দেখতে যেতে চান না। দিনরাতের ম্যাচগুলোতে দেখা যায়, সন্ধ্যার আগেই গ্যালারি প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। বিশেষ করে নারী দর্শকরা রাত পর্যন্ত স্টেডিয়ামে থাকতে চান না। এর প্রধান কারণ, যানবাহন সংকট। স্টেডিয়াম থেকে বের হয়ে প্রায় এক কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে সাগরিকা মোড়ে আসার পর গাড়ির দেখা পাওয়া গেলেও ড্রাইভাররা আকাশচুম্বী ভাড়া হাঁকে। আবহাওয়া প্রতিকূল থাকলে ভাড়ার রেট আরো বাড়ে। মাঠে খেলা দেখতে আসা দর্শকরা বলেন, উন্নত দেশের আদলে অন্তত খেলার দিন শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত শাটল বাস সার্ভিস চালু করা যেতে পারে। এতে স্টেডিয়ামের দর্শক উপস্থিতি আরো বাড়বে বলে তারা মনে করেন। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সম্প্রতি নগরী থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত পর্যটন বাস পরিষেবা চালু হয়েছে যা ভ্রমণপিপাসুদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাইরে থেকে খাবার নিয়ে প্রবেশ করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ভেতরে হকারদের কাছে যেসব খাবার পাওয়া যায় তা অত্যন্ত নিম্নমানের, অস্বাস্থ্যকর এবং দামও অনেক বেশি। গ্যালারিতে খুবই নিম্নমানের একটি স্যান্ডউইচ বা বার্গারের দাম ৬০ টাকা যা বাইরে ৩০ টাকায় পাওয়া যায়। ৩৫ টাকার আইসক্রিম ৫০ টাকা। এক গ্লাস পানির দাম ১০ টাকা। বাসি ও পচা এসব খাবার খেয়ে গ্যালারিতে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন—যা তদারকি করার কেউ নেই।
এই স্টেডিয়ামে সবশেষ বড় ধরনের অবকাঠামোগত সংস্কার হয়েছিল ২০১১ বিশ্বকাপের আগে। এরপর থেকে অযত্ন-অবহেলায় স্টেডিয়ামটি এখন বেহাল হয়ে পড়েছে। গ্যালারিতে অনেক চেয়ার ভাঙা। প্রেস বক্সের ডেস্কগুলো নড়বড়ে হয়ে গেছে। ময়লা আর দুর্গন্ধের কারণে গ্যালারির টয়লেট ব্যবহার করা যায় না। নারী দর্শকরা পারতপক্ষে টয়লেট ব্যবহার করতে চান না। স্টেডিয়ামের চারপাশে লম্বা লম্বা ঘাস গজিয়েছে। দেখলে মনে হয় সেখানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কেউ ঘাসের চাষ করছে। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। দোতলার কোনো কোনো জায়গা থেকে নোংরা পানি পড়ে নিচে থাকা লোকজন ভিজে যায়।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ওডিআই সিরিজ দেখতে গিয়ে নানা বিড়ম্বনার মুখোমুখি হয়েছেন দর্শকরা। ভরা বর্ষার মধ্যে শীতের খেলা ক্রিকেট আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ক্রীড়ামোদীরা। বৃষ্টির কারণে স্টেডিয়ামে যাতায়াত করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন অনেকে। বিশেষ করে পশ্চিম দিকের চার নম্বর গেট দিয়ে যারা স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেছেন তাদের অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। রাস্তার অধিকাংশই ছিল কাদাপানিতে ভরা। আন্তর্জাতিক সিরিজের আগে কর্তৃপক্ষ কেন এই রাস্তাটি সংস্কার করেনি, এমন প্রশ্ন করেছেন অনেকে।
চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানার সাগরিকা এলাকায় জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের নাম একসময় ছিল বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম, যা বিভাগীয় স্টেডিয়াম নামে পরিচিত ছিল। এই স্টেডিয়ামে ২০০৪ সালে আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের আসর বসেছিল। এজন্য স্টেডিয়ামের ব্যাপক আধুনিকায়ন করা হয়।