Thursday, January 16, 2025

সপ্তাহে শীর্ষে

প্রাসঙ্গিক বার্তা

গ্রিনল্যান্ড পরিস্থিতির দিকে ‘নজর’ রাখছে রাশিয়া; ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে সতর্ক ইউরোপ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ডেনমার্কের কাছ থেকে গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে সামরিক বা অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নাকচ করতে অস্বীকার করার পর রাশিয়া বলেছে, তারা এই ভূখণ্ডের পরিস্থিতি মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বৃহস্পতিবার সংবাদদাতাদের বলেছেন, “আমরা পরিস্থিতির এই নাটকীয় ওঠা-নামা পর্যবেক্ষণ করছি, তবে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, এখনও পর্যন্ত এটি বিবৃতির স্তরে (রয়ে গেছে)।”

পেসকভ আরও যোগ করেছেন, “আর্কটিক জোনটি আমাদের জাতীয় এবং কৌশলগত স্বার্থের একটি অঞ্চল। আমরা আর্কটিক অঞ্চলে উপস্থিত আছি এবং আমরা সেখানেই থাকব।”

গ্রিনল্যান্ডের বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড (যার বেশিরভাগই আর্কটিক বলয়ে অবস্থিত) আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৫৩ সাল থেকে ডেনমার্ক রাজত্বের অংশ; যদিও দ্বীপটির নিজস্ব স্বায়ত্বশাসিত সরকার রয়েছে।

জাতীয় নিরাপত্তা

ফ্লোরিডায় মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প বলেছেন, নিরাপত্তার উদ্দেশ্যেই গ্রিনল্যান্ডকে দরকার যুক্তরাষ্ট্রের এবং সেই লক্ষ্য অর্জনে অর্থনৈতিক বা সামরিক পদ্ধতি বা উপায় ব্যবহারের বিষয়টি নাকচ করতে তিনি অস্বীকার করেছেন।

ট্রাম্প বলেছেন, “মানুষ সত্যিই জানেনও না, এর (গ্রিনল্যান্ড) উপর ডেনমার্কের কোনও বৈধ অধিকার রয়েছে কিনা। তবে, যদি তাদের থাকে, তাহলে তাদের তা ছেড়ে দেওয়া উচিত কারণ জাতীয় নিরাপত্তার জন্য আমাদের এটা দরকার। মুক্ত বিশ্বের জন্য এটা দরকার। আমি মুক্ত বিশ্বকে রক্ষা করার বিষয়ে কথা বলছি।”

তিনি আরও যোগ করেন, “সব জায়গায় চীনের জাহাজ রয়েছে। সব জায়গায় রুশ জাহাজ রয়েছে। আমরা এটা হতে দিচ্ছি না।”

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক পরিষদের (কাউন্সিল অফ ফরেন রিলেশন্স) বিশ্লেষক লিয়ানা ফিক্স বলেছেন, আর্কটিকের অধিকাংশ অঞ্চলের মতো গ্রিনল্যান্ড দ্রুত উষ্ণ হয়ে উঠছে। এটাই এই অঞ্চলের ভূ-রাজনীতিকে বদলে দিচ্ছে।

ফিক্স বলেছেন, “আর্কটিক ক্রমশ এক বৃহৎ শক্তির প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্র হয়ে উঠছে। এবং যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন যে, তারা এই খেলায় হেরে যাচ্ছে।”

ফিক্স আরও বলেন, “আর্কটিক অনেক বেশি ব্যবহারযোগ্য ও সহজলভ্য হয়ে উঠছে; পণ্যের ব্যবসা ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ উভয়ের জন্য, বিশেষ করে বিরল ভূ-গর্ভস্থ খনিজ সম্পদের জন্য। এটি ক্রমবর্ধমান হারে সামরিক অঞ্চলেও পরিণত হচ্ছে।” তিনি উল্লেখ করেছেন, রাশিয়া এই অঞ্চলে চীনা উপকূলরক্ষীদের সঙ্গে সহযোগিতা করছে।

ফাইল ছবিঃ প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ডনাল্ড ট্রাম্প

‘বিক্রির জন্য নয়’

ডেনমার্ক সাফ জানিয়ে দিয়েছে, গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোককে রাসমুসেন এই পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করেছেন যে, ট্রাম্পের মন্তব্য তার সরকারের জন্য একটি বৈদেশিক নীতিগত সংকট হাজির করেছে।

রাসমুসেন বুধবার বলেছেন, “আমি দেখছি, হোয়াইট হাউসের পথে রয়েছেন, এমন একজন প্রেসিডেন্টের আর্কটিকের উপর তীব্র দৃষ্টি রয়েছে এবং আমি বুঝতে পারি যে, তার সেটা রয়েছে। ডেনিশদের পক্ষ থেকেও (এই নজর) রয়েছে এবং নেটোর মধ্যেও রয়েছে।”

বিশ্লেষক ফিক্স বলেছেন, ডেনমার্ক এক ধরনের দ্বিধার সম্মুখীন হচ্ছে।

ফিক্স ভয়েস অফ আমেরিকা-কে বলেছেন, “ডেনমার্কের জন্যও এটা খুবই স্পষ্ট যে, গ্রিনল্যান্ডে বিনিয়োগের পাশাপাশি সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়লে সকলের স্বার্থেই তা কাজে আসবে।”

বেশ কয়েকজন ইউরোপীয় নেতা ট্রাম্পের মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন, যদিও বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্টের সরাসরি সমালোচনা করা থেকে বিরত ছিলেন।

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ বলেছেন, মৌলিক পশ্চিমা মূল্যবোধ ঝুঁকির মুখে।

তিনি বলেছেন, “সীমান্ত অলঙ্ঘনীয়তার নীতি প্রতিটি দেশের জন্য প্রযোজ্য, তা আমাদের পূর্ব বা পশ্চিমে যা-ই হোক না কেন।”

ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাঁ-নোয়েল ব্যারো আরও সরাসরি মন্তব্য করেছেন। তিনি বুধবার বলেছেন, “ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিশ্বের কোনও দেশকেই, রাশিয়া থেকে শুরু করে যে দেশই হোক না কেন, এর সার্বভৌম সীমান্ত সংজ্ঞায়িত করতে দেবে না; এ নিয়ে কোনও প্রশ্নই ওঠে না।”

গ্রিনল্যান্ডের ‘স্বাধীনতা’

গ্রিনল্যান্ডের সরকার, ইতোমধ্যে, পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য গণভোটের চাপ দিচ্ছে এবং বলেছে যে, শুধুমাত্র জনগণই গ্রিনল্যান্ডের ভবিষ্যত নির্ধারণ করবেন।

কোপেনহেগেন সফরকালে গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিউট এগেদে বৃহস্পতিবার বলেছেন, “গ্রিনল্যান্ড একটি নতুন যুগ ও নতুন বছরের পথে চলেছে যেখানে গ্রিনল্যান্ড বিশ্বের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। গ্রিনল্যান্ডের লোকেরা যেখানেই থাকুক না কেন তারা একতাবদ্ধ। আমরা যে সময়ে বাস করছি সেই সময়ের মানুষ হিসাবে আমাদের দেশ যে নতুন ভবিষ্যতের পথে চলছে তার জন্য প্রস্তুত হতে আমাদেরকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”

–ভয়েজ অব আমেরিকা

পাঠক প্রিয়