Skip to content

গুরুগ্রামে বাংলাদেশি মুসলমানের রূপান্তরকামীকে হত্যার মিথ্যা দাবি ছড়াল

গুরুগ্রামে বাংলাদেশি মুসলমানের রূপান্তরকামীকে হত্যার মিথ্যা দাবি ছড়াল

সোশ্যাল মিডিয়াতে এক মহিলার বারান্দা থেকে ঝুলন্ত দেহ সম্প্রতি ছড়িয়ে দাবি করা হয় মহিলাটি ছিলেন একজন রূপান্তরকামী এবং গুরুগ্রামের (Gurugram) ধর্মপুরে তাকে খুন করে দেহটি বারান্দা থেকে ঝুলিয়ে দেয় বাংলাদেশি এক মুসলমান।

পশ্চিম গুরুগ্রামের এ.সি.পি শিব অর্চন বুমকে এবিষয়ে নিশ্চিত করে ভাইরাল এই দাবিটি ভুল বলে জানান। তিনি আরও বলেন, এই ঘটনার সাথে কোনো ধর্মীয় যোগাযোগ নেই এবং সেই রূপান্তরকামী মহিলা আসলে আত্মহত্যা করেছেন।

১ মিনিট ৩ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের এই ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে বেশ কিছু মানুষ এক বহুতলের বারান্দা থেকে ঝুলন্ত দেহটির ভিডিও রেকর্ডিং করছেন।

কলকাতা ইস্কনের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধারমণ দাস এই ভিডিওটি টুইটটি করে লেখেন, “কিছু বাংলাদেশি লোক এক রূপান্তরকামী মহিলাকে আমন্ত্রণ করে হিংসাত্বক ভাবে তাকে খুন করে তার দেহ বাড়ির বারান্দায় ঝুলিয়ে দিয়েছে। সমস্ত জিহাদী বাসিন্দারা যারা ভাড়া বাড়িতে থাকেন, তারা এখন পলাতক। এরকম বহু বাংলাদেশি বাসিন্দারা বেআইনি ভাবে গুরুগ্রামের ধর্মপুরে গ্রামে থাকছে।”

বুম এর আগেও ইস্কনের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধারমণ দাসের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের তথ্য যাচাই করেছে যেখানে তিনি ভুয়ো সাম্প্রদায়িক খবর প্রচার করেছেন।

টুইটটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

হিন্দুত্ববাদী সংবাদ মাধ্যম সুদর্শন নিউজের সাগর কুমার এই ভিডিওটি একই ভুয়ো দাবি করে টুইট করেন।

টুইটটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

ভুয়ো দাবি করে ভিডিওটি ফেসবুকেও ছড়িয়ে পড়েছে।

তথ্য যাচাই

বুম কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে এই সংক্রান্ত কিছু প্রতিবেদন খুঁজে পায় যেগুলির কোনোটাতেই ঘটনাটির সাথে সাম্প্রদায়িকতার যোগাযোগ রয়েছে এমন উল্লেখ করা নেই।

অন্যদিকে, বুম ৫ জুলাই, ২০২৩ তারিখে প্রকাশিত ইনশর্টস নামক সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিবেদন খুঁজে পায় যেখানে গুরুগ্রাম পুলিশ এই ধর্মীয় যোগের দাবিটি নাকচ করে দেয়।

এরপর আমরা গুরুগ্রাম পুলিশের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ৫ জুলাই, ২০২৩ তারিখ করা এই সংক্রান্ত কিছু টুইট খুঁজে পায় যেখানে তারা এই ভাইরাল ভুয়ো দাবিটি খণ্ডন করে।

গুরুগ্রাম পুলিশ টুইট করে লেখে, “সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বার্তা ভাইরাল হচ্ছে যেখানে দাবি করা হয়েছে যে ধর্মপুরী সেক্টর-১০৮-এ একজন বাংলাদেশি মুসলমান তাকে তালিবানি ঢঙে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর একজন রূপান্তরকামীকে ঝুলিয়ে দিয়েছে। এটি অসত্য।”

টুইটটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে

তারা আরও জানায়, “এটা একটা আত্মহত্যার ঘটনা। রূপান্তরকামী মহিলাটির নাম হল প্রিয়া যিনি রাজেন্দ্র পার্ক অঞ্চলের বাসিন্দা এবং এই ঘটনা ৩ জুলাই ২০২৩ তারিখে ঘটেছে। ক্রিমিনাল কোডের ১৭৪ নং ধারায় রাজেন্দ্র পার্ক থানা দ্বারা তদন্ত করা হয়েছে এবং এই হত্যা করার দাবিটি সম্পূর্ণ ভাবে অসত্য।”

আরও বিস্তারিত জানার জন্য বুম রাজেন্দ্র পার্ক থানার সাথে যোগাযোগ করে। ইন্সপেক্টর পঙ্কজ এবিষয়ে বুমকে জানায়, “এটি একটি আত্মহত্যার ঘটনা এবং তার অসুস্থতার বিষয়ও জানতে পারা গেছে। এই ঘটনায় মহিলাটির ময়না তদন্তও করা হয়েছে এবং এটা কোনো বাংলাদেশি মুসলমান দ্বারা হত্যার চেষ্টার ঘটনা নয়।”

বুম গুরুগ্রাম পশ্চিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসিপি) শিব অর্চনের সাথেও ভাইরাল ভিডিওটির বিষয়ে যোগাযোগ করে। তিনি বুমকে নিশ্চিত করে বলেন ঘটনাটি তার এলাকায় ঘটলেও ভিডিওটি নিয়ে যে দাবি করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

“এই ঘটনায় কোন মুসলমানের যোগসূত্র নেই। এটি একটি আত্মহত্যার ঘটনা মাত্র। আমরা সেইসব সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের উপর নজর রাখছি যারা এই ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক রঙ দিচ্ছে,” গুরুগ্রাম পশ্চিমের এসিপি শিব অর্চন বলেন।



বার্তা সূত্র