বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের বড় মেয়ে শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে চলেছেন তিনি। লাল–সবুজের দেশকে মাথা উঁচু করে দাঁড় করানোর প্রধান নায়ক তিনি। তবে এসবের বাইরে আরও একটি বড় পরিচয় আছে ৭৫ বছর বয়সী বঙ্গবন্ধুকন্যার। আর সেটা হচ্ছে তিনি হচ্ছেন নিখাদ খেলাপ্রেমী। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের যে কোনো ইভেন্টে সাফল্য আসলে সবার আগে উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা হন শেখ হাসিনা। শুধু উচ্ছ্বাসেই থেমে থাকেন না; খেলোয়াড়দের যাবতীয় চাহিদা পূরণ করে চলেছেন। যার সবশেষ নিদর্শন রেখেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল খানের ইস্যুতে।
বাংলাদেশের বর্তমান ওয়ানডে অধিনায়ক বৃহস্পতিবার গোটা বাংলাদেশ ও ক্রিকেট বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তামিমের এ সিদ্ধান্তে তোলপাড় সৃষ্টি হয় দেশজুড়ে। অবশেষে একদিনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর জাদুকরী ছোঁয়ায় সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে ক্রিকেটে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তামিম। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় সাফল্য দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা। সেই সঙ্গে দেশের খেলাধুলার উন্নয়ন ও সাফল্যের জন্যও নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তিনি। দেশের ক্রীড়াঙ্গন বিশেষ করে ক্রিকেটের আজকের অবস্থানে আসার পেছনেও আছে শেখ হাসিনার অনন্য অবদান। চোখের জলে তামিম যখন বিদায় বলে দিয়েছিলেন তখন হাজার চেষ্টা করেও তাঁর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করাতে পারেননি কেউ। স্বয়ং বিসিবি প্রধানও তামিমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন। কিন্তু বাংলাদেশের যে আছে একজন পরশ পাথর। যার পরশে সবকিছুই খাটি সোনায় পরিণত হন। সব সমস্যার সমাধান মিলে যায় তাঁর জাদুকরী ছোঁয়ায়।
সে স্বাক্ষর মিলেছে আরেকবার। নিজের জাদুকরী ছোঁয়ায় অভিমানী তামিমকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে বড় ধাক্কা থেকে রক্ষা করেছেন। যে কারণে খেলাপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও জয়োধ্বনি চলছে। প্রধানমন্ত্রীর সবচেয়ে বড় সমালোচকও ক্রীড়াক্ষেত্রে তাঁর অবদান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করতে পারবেন না। রাষ্ট্রপ্রধান, বঙ্গবন্ধুকন্যা, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী পরিচয়ের পাশাপাশি ইতিহাস তাঁকে একজন ক্রীড়াপাগল মানুষ হিসেবেও চিরকাল মনে রাখবে। দেশের প্রতিটি সেক্টরের পাশাপাশি ক্রীড়াঙ্গনে তাঁর মতো অভিভাবক জাতির জন্য খুবই প্রয়োজন। তাঁর ছায়াতলে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশ সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চলেছে। ক্রীড়াপ্রেমী–ক্রীড়াবান্ধব হিসেবে বাংলাদেশের খেলাধুলার ইতিহাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। শুধু তামিমের বেলাতেই নয়। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের সবকিছুর সঙ্গেই জড়িয়ে আছে প্রধানমন্ত্রীর নাম। কেননা তাঁর রক্তের সঙ্গেই মিশে আছে নির্মল বিনোদনের সেরা মাধ্যম খেলাধুলা। এটি তিনি পেয়েছেন পরিবার থেকেই। কারণ ক্রীড়া পরিবারেই যে তাঁর জন্ম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তরুণ বয়সে ছিলেন একজন ফুটবলার। ঐতিহ্যবাহী ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে চল্লিশের দশকে খেলেছেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি। তাঁর বড় ছেলে শেখ কামাল ছিলেন বাংলাদেশের আধুনিক ক্রীড়াঙ্গনের পথিকৃৎ। খেলেছেন ফুটবল, ক্রিকেট, বাস্কেটবল, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল ও অ্যাথলেটিক্স। ছিলেন সফল সংগঠক ও আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাতা। ছোট ছেলে শেখ জামালও ছিলেন সফল ক্রীড়াবিদ। শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল খুকু ছিলেন দেশের খ্যাতনামা অ্যাথলেট। এমন ক্রীড়া পরিবারের মধ্যে বেড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্রীড়াপ্রেম থাকবে না তো, কার মাঝে থাকবে?
দেশের মধ্যে খেলা হলে যদি সময় পাওয়া যায়, তাহলে হুট করেই ক্রিকেট বা ফুটবল স্টেডিয়ামে গিয়ে হাজির হয়ে সবাইকে চমকে দেন শেখ হাসিনা। এমন দৃশ্য দেখা গেছে বহুবার। এমন ক্রীড়াপ্রেমী–ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রী বিশ্বে বিরল। জনসম্মুখে জননেত্রী ও গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনার ক্রীড়াপ্রেমের প্রথম দৃষ্টান্ত ১৯৯৭ সালে। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল আইসিসি ট্রফির সেমিফাইনালে (মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত) স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল। ফাইনাল ম্যাচের আগেই তিনি রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে জাতীয় ক্রিকেটারদের গণসংবর্ধনার ঘোষণা দেন। ফাইনাল ম্যাচে কেনিয়াকে হারিয়ে বাংলাদেশ শিরোপা জয় করায় সেই গণসংবর্ধনা জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছিল।
সেই থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে যত সাফল্য এসেছে সংশ্লিষ্ট সবাইকে পুরস্কৃত করেছেন শেখ হাসিনা। মহিলা ফুটবল উন্নতির সোপান বেয়ে ওপরে উঠে যাচ্ছে তরতর করে। আর এটা সম্ভব হয়েছে প্রধামন্ত্রীর বদৌলতেই। সাফ জয়সহ মেয়েদের সব সাফল্যে পুরস্কৃত করেছেন হাতখুলে। ২০১৯ বিশ্বকাপে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান ৬০৬ রান করেন ও ১১ উইকেট কব্জা করেন। বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফর্ম্যান্সের কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে সেসময় সাকিব বলেছিলেন, ‘বড় কারণ প্রধানমন্ত্রী’। কারণ হিসেবে সাকিব মনে করিয়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এক বক্তব্যকে। যা তার মাঝে জাগিয়ে দিয়েছিল বড় কিছু করার স্পৃহা। তেমন এক স্পৃহা এবার পেলেন ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম। তাহলে কি আসছে বিশ্বকাপ নিজেদের করে নিতে চলেছে বাংলাদেশ!? উত্তরটা আপাতত সময়ের হাতেই বন্দি।