প্রথমে দিল্লি থেকে ফোন করেছিলেন। কর্নাটকে ১০ মে আসন্ন বিধানসভা প্রচারে গিয়ে সেই বিতর্কিত নেতা কেএস ঈশ্বরাপ্পাকে পাশে নিয়েই ঘুরছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিজেপি এবং খোদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনি কিং মেকার।
কর্নাটক বিধানসভার ভোটে রাজ্যের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের অন্যতম অস্ত্র ‘ঘুষের বিনিময়ে চাকরি ও কাজ’-এর অভিযোগ, যাকে এককথায় ‘কমিশন রাজ’ বলা হচ্ছে। বিরোধীদের বক্তব্য, সরকারি প্রকল্পের কাজের টাকাই শুধু নয়, বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা, স্টুডেন্টস স্কলারশিপ থেকে একশো দিনের কাজের মজুরি, টাকা হাতে পেতে ৪০ ভাগ অর্থ সিন্ডিকেটকে কমিশন বাবদ দিতেই হবে। বিজেপি এবং সরকারি কর্তাদের এই কমিশনকে এড়িয়ে সরকারের ঘর থেকে এক টাকাও আদায় করা সম্ভব নয়।
পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকার সম্পর্কে যে কথা বলে থাকেন বিজেপি নেতারা, কর্নাটকে সেটাই তাঁদের নিজের দলের সরকার সম্পর্কে শুনতে হচ্ছে। আর এই ব্যাপারে বিরোধীদের নিশানায় খলনায়ক প্রবীণ ঈশ্বরাপ্পা। তিনি রাজ্যের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী এবং গত বছর অক্টোবর পর্যন্ত ছিলেন গ্রামোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী। সাতবারের বিধায়ক ঈশ্বরাপ্পাকে এবার টিকিট দেয়নি বিজেপি। কারণ, গত বছর এক ঠিকাদার গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার আগে সুইসাইড নোটে লিখে যান মন্ত্রী ঈশ্বরাপ্পাকে ঘুষ না দেওয়ায় তিনি মোটা টাকার বিল আটকে দিয়েছেন। পুঁজির অভাবে ব্যবসা চৌপাট হয়ে গিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাইকে চিঠি লিখেও একই অভিযোগ করেছিলেন সেই ঠিকাদার। ঘটনার প্রতিবাদে ঠিকাদাররা সরকারি কাজ বন্ধ করে দিলে ঈশ্বরাপ্পাকে অনেক বুঝিয়েসুঝিয়ে পদত্যাগ করানো হয়।
বিরোধীরা এবার প্রচারে সিন্ডিকেটরাজ আর ঘুষের বিনিময়ে চাকরি, কাজ নিয়ে সরব। রাহুল, প্রিয়ঙ্কা গান্ধীরা ভাষণের সিংহভাগ সময় জুড়ে ঘুষ নিয়েই বলছেন। যার পাল্টা হিসাবে প্রধানমন্ত্রী মোদী বুধবার গান্ধী পরিবারকে নিশানা করে পাল্টা তোপ দেগেছেন। তাঁর অভিযোগ, কংগ্রেস ও গান্ধী পরিবার কর্নাটককে পয়লা নম্বর এটিএম হিসাবে ব্যবহার করেছে। অর্থাৎ রাজ্যের রসদ যত ইচ্ছা ভোগ করেছে। যেভাবে কার্ড দিয়ে ইচ্ছেমতো এটিএম থেকে টাকা তোলা যায়।
ঈশ্বরাপ্পাকে নিয়ে বিরোধীদের প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী কি ভুলে গেলেন তাঁর নিজের দেওয়া স্লোগান, ‘না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা’? ঈশ্বরাপ্পার বিরুদ্ধে প্রয়াত ঠিকাদারের পরিবার আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে এফআইআর করেছে। ঘুষ নেওয়ার গুরুতর অভিযোগে মন্ত্রিত্ব খোয়ানো সেই নেতাকে পাশে নিয়ে ঘুরছেন প্রধানমন্ত্রী
মোদীর পাশে মূলত মহীশূর এলাকার সভাগুলিতে উপস্থিত থাকছেন ঈশ্বরাপ্পা। যা নিয়ে বিজেপির অন্দরেও প্রশ্ন আছে। অনেকেই মনে করছেন, এতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর লম্বাচওড়া কথা প্রশ্নের মুখে পড়ছে। দলেরও মুখ পুড়ছে।
আবার একথাও বলাবলি হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপি নেতৃত্ব কি এতই বোকা যে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে মন্ত্রিত্ব খোয়ানো নেতাকে পাশে নিয়ে ঘুরবেন ভোটের লাভ-লোকসান বিবেচনায় না রেখে। আসলে কর্নাটকে মহীশূরকে কেন্দ্র করে বিস্তীর্ণ এলাকায় বিজেপি হিন্দুত্বের তাস ছাড়াও জাতের অঙ্কেও সমান ভরসা রাখছে। রাজ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতিগোষ্ঠী লিঙ্গায়েতরা এবার নানা কারণে বিজেপি সরকারের উপর ক্ষিপ্ত। দ্বিতীয় প্রভাবশালী গোষ্ঠী ভোক্কালিগার উপর প্রভাব বেশি আঞ্চলিক দল জেডিএসের। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়া যে সম্প্রদায়ের মুখ।
অন্যদিকে, কুরুবা হল তৃতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং ক্ষমতাশালী জনগোষ্ঠী, যে সম্প্রদায়ের অন্যতম মুখ ঈশ্বরাপ্পা। ওবিসিভুক্ত এই জনগোষ্ঠীর ভোট পেতে ঈশ্বরাপ্পাই বিজেপির ঈশ্বর।
‘ঘুষখোর’ তকমা পাওয়া ওই নেতাকে বিজেপি আরও একটি কারণে প্রচারে নামিয়েছে। টিকিট না পেয়ে বসে যাওয়া ঈশ্বরাপ্পা যেমন কুরুবা সম্প্রদায়ের নয়নের মণি, তেমনই কট্টর হিন্দুত্বের মুখ। ভোট ঘোষণার ঠিক আগে আগে মসজিদে মাইক বাজানো নিয়ে যা নয় তাই বলেছিলেন। দাবি তোলেন মাইক বাজানো বন্ধ করতে হবে। আর দিন কয়েক আগে দলের মেরুকরণ অস্ত্রে ধার দিতে ঈশ্বরাপ্পা ঘোষণা করেন, “বিজেপি একজন মুসলিমের ভোটও চায় না। মুসলিমদের সমর্থন ছাড়াই আমরা ক্ষমতায় টিকে থাকব।”