Skip to content

এলকপের সেমিনার: নির্বাচনের সময় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ

বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থা ‘এলকপ’-এর আয়োজনে বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফারস হোটেল এন্ড রিসোর্টে ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার: নির্বাচন পূর্ববর্তী সহিংসতার দৃষ্টিকোণে’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এলকপ চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন।

পরে ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার: নির্বাচনের পূর্ববর্তী সহিংসতার দৃষ্টিকোণে’ শীর্ষক একটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়। এতে নির্বাচনের আগের সহিংসতার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং তার কারণগুলো তুলে ধরা হয়, যেসব কারণে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের আগে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য সহিংসতার পরিকল্পনা নিয়ে থাকে।

গবেষণাপত্রে একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ২০০১ সাল থেকে আসন্ন নির্বাচন পর্যন্ত প্রাক-নির্বাচন সহিংসতার সংখ্যা তুলে ধরা হয়, যেখানে ক্ষমতাসীন সরকারকে সমর্থন করার জন্য সংখ্যালঘু জনগণের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত সহিংসতার কথাও উঠে আসে। সহিংসতার বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে এবারের নির্বাচন পূর্ববর্তী সহিংসতা কতদূর যেতে পারে‒ সেই প্রশ্নও তোলা হয়।

ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মার্ক জ্যাকসন, দক্ষিণ এশিয়া ডেমোক্রেটিক ফোরামের নির্বাহী পরিচালক পাওলো কাসাকা, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ও ডাচ অর্থনীতিবিদ ড. উইলিয়াম ভ্যান ডার জিস্ট মনোনিত আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।

বক্তারা বাংলাদেশে নির্বাচন-পূর্ব সহিংসতার বর্তমান পরিস্থিতির ওপর জোর দেন। তারা নির্বাচনের সময় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সেমিনারে বক্তারা বাংলাদেশের সকল মানুষের সমান মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান এবং নির্বাচনের পূর্বে সকল ধরনের সহিংসতা বন্ধের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সকল মহলকে অনুরোধ জানান।

ড. উইলিয়াম ভ্যান ডার জিস্ট বলেন, নির্বাচনে বিজয় মানে সবকিছুর ওপর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া নয়, বরং দলগুলোকে একটি নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচনের ফলকে প্রভাবিত করতে হবে।

প্রফেসর ড. মার্ক জ্যাকসন বলেন, নির্বাচনপূর্ব সহিংসতা শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। তিনি আরও উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনপূর্ব সহিংসতার কারণে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। সহিংসতা আমাদের জীবনে একটি নিত্যদিনের ঘটনা, কিন্তু নির্বাচনপূর্ব সহিংসতা সাধারণ মানুষের জীবনকে অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত করে। তিনি সহিংসতার মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব এবং তরুণ প্রজন্মের ওপর এর প্রভাবের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

পাওলো কাসাকা বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহিংসতা বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার একমাত্র সমাধান নয়। বাংলাদেশেকে অন্যান্য দেশগুলোর নির্বাচনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগোতে হবে। নির্বাচনপূর্ব সহিংসতা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের উপায় নয় এবং এই সহিংসতা সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীকে দেশের সাধারণ মানুষের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্ব নিতে হবে। এই সহিংসতা কেবল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে এবং জনগণের অধিকারকে খর্ব করবে।

অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান তার সমাপনী বক্তব্যে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, বাংলাদেশ কোনোভাবেই তার জাতীয় বিষয়ে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ নিতে প্রস্তুত নয়। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশ এবং এটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তার কাজ চালিয়ে যাবে।

মুক্ত আলোচনা অধিবেশনে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, এনজিও ও আইএনজিও কর্মকর্তা, সাংবাদিক, আইনের শিক্ষার্থী এবং মানবাধিকার কর্মীরা প্রাণবন্ত আলোচনায় অংশ নেন। সেমিনারে বক্তব্য দেন একুশে পদকপ্রাপ্ত অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন, সাংবাদিক সেলিম সামাদ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নির্মল রোজারিও, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি সঞ্জীব দ্রং, ড. উলফাত হোসেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এস এম মাসুম বিল্লাহ, বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ম হামিদ, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভেন থেরো সুনন্দপ্রিয় প্রমুখ।

সেমিনারে এলকপ-এর নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল জাতি, গোষ্ঠী, ধর্ম, জাতি নির্বিশেষে সকল মানুষের বসবাসের জন্য দেশকে একটি উন্নত স্থান হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার নিয়ে নির্বাচনপূর্ব সহিংসতা বন্ধে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।



বার্তা সূত্র