তারল্য সংকটের কারণে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যায় রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি)। পাশাপাশি ব্যাংকের কাছ থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধের চাপও বাড়তে থাকে।
এ অবস্থায় সরকারের কাছে ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ সুবিধা চায় প্রতিষ্ঠানটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ঋণ অনুমোদন দেয়। সম্প্রতি এ ঋণের অর্থ প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইসিবি।
ঋণের অর্থ হাতে পাওয়ার বিষয়টি মূল্য সংবেদনশীল তথ্য হিসেবে প্রকাশ করেছে আইসিবি। এতে বলা হয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে গত ১৩ নভেম্বর রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আনার লক্ষ্যে বিনিয়োগ ও উচ্চ সুদহারে নেয়া আমানত ও ঋণ পরিশোধের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে নিজস্ব বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক গত ২৭ নভেম্বর ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর করা হয়।
৩ ডিসেম্বর এ ঋণের সুদহার পরিবর্তন করে ব্যাংক রেটে (৪ শতাংশ) নির্ধারণ করা হয়। মঞ্জুরীকৃত ঋণের অর্থ ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আইসিবির ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
আইসিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ ঋণের দুই-তৃতীয়াংশ প্রতিষ্ঠানটির বিদ্যমান ঋণ পরিশোধে ব্যয় করা হবে। অবশিষ্ট অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ নভেম্বর ঋণ সহজীকরণে আইসিবিকে সার্বভৌম গ্যারান্টি দেয় সরকার। এর ভিত্তিতে গত ২৭ নভেম্বর আইসিবিকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে ১০ শতাংশ সুদে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
পরে আইসিবি বাংলাদেশ ব্যাংককে জানায়, ১০ শতাংশ সুদহার প্রতিষ্ঠানটির জন্য টেকসই নয় এবং তা কমিয়ে ৪ শতাংশ করার অনুরোধ করে। ওই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশোধিত সুদহারে ঋণ অনুমোদন করে।
আইসিবির অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, এ বছরের সেপ্টেম্বর শেষে বিভিন্ন সিকিউরিটিজে প্রতিষ্ঠানটির বাজারমূল্যে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। ক্রয়মূল্যে এ বিনিয়োগের পরিমাণ ১৩ হাজার ৩২২ কোটি টাকা।
এক্ষেত্রে বিনিয়োগজনিত ক্ষতির পরিমাণ ৩ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা। এর বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি ১ হাজার ৪৬ কোটি টাকার সঞ্চিতি সংরক্ষণ করেছে। সঞ্চিতি ঘাটতি রয়েছে ২ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা।
চলতি ২০২৪-২৫ হিসাব বছরে প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আইসিবির কর-পরবর্তী সমন্বিত নিট লোকসান হয়েছে ৭৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা, আগের হিসাব বছরের একই প্রান্তিকে যা ছিল ২৩৬ কোটি ৫২ টাকা। সে হিসাবে কোম্পানিটির সমন্বিত লোকসান কমেছে ৬৮ শতাংশ।
প্রথম প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) হয়েছে ৮৭ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ২৩৬ টাকা ৫২ পয়সা। গত ৩০ সেপ্টেম্বর শেষে আইসিবির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৫১ টাকা ৮ পয়সায়।
গত রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আইসিবির শেয়ার সর্বশেষ ৬৮ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। গত এক বছরে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার ৪৭ টাকা ৬০ থেকে ৮৭ টাকা ৬০ পয়সার মধ্যে ওঠানামা করেছে।