Skip to content

উগান্ডায় সমকামিতা বিরোধী কঠোর আইন বাড়িয়েছে এইডস মহামারীর ঝুঁকি

উগান্ডায় সমকামিতা বিরোধী কঠোর আইন বাড়িয়েছে এইডস মহামারীর ঝুঁকি

পূর্ব আফ্রিকার দেশ উগান্ডায় সম্প্রতি সমকামিতা বিরোধী সবচেয়ে কঠোর আইনের বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। যার ফলে দেশটির এইচআইভি/এইডস চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো রোগী শূন্য হয়ে পড়েছে।

রাজধানী কাম্পালার এমনই একটি ক্লিনিকে আগে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসতেন বলে জানান চিকিৎসা কেন্দ্রটির কর্মীরা। কিন্তু নতুন আইনের বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার পর এখন একজন রোগীরও দেখা মিলছে না।

অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ওষুধগুলি অব্যবহৃত পড়ে আছে।

যুক্তরাষ্ট্রের তহবিলে চলা ক্লিনিকটির আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা অ্যান্ড্রু টেনডো এ বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, এইচআইভি/এইডস সংক্রমণের নতুন নতুন ঢেউ তৈরি হচ্ছে এবং যেকোনো সময় সেটি ভয়াবহ রূপে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

নতুন আইন কার্যকর হওয়ার পর এইডস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা লোকজন পরিচয় প্রকাশ পেয়ে যাওয়া এবং গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো থেকে দূরে থাকছেন।

তিনি বলেন, ‘‘উগান্ডার এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মধ্যে এখন লকডাউন চলছে।

‘‘তারা এইচআইভি প্রতিরোধক কোনো পরিষেবা গ্রহণ করছে না। তারা কনডম পাচ্ছে না…তারা এআরটিএস পরিষেবাও পাচ্ছে না।”

সমকামের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রেখে উগান্ডার পার্লামেন্টে যে বিল উত্থাপন করা হয়েছিল গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ইওয়েরি মুসেভেনি তাতে সই করে সেটিকে আইনে পরিণত করেছেন।

নতুন আইনে ‘প্রলুব্ধ করে সমকামী যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হলে’ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা হতে পারে। আর যদি সমকামী যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে এইডস সংক্রমণ ঘটে তবে মৃত্যুদণ্ডের সাজা রাখা হয়েছে।

রাষ্ট্র পরিচালিত উগান্ডার এইডস কমিশনের তথ্যানুযায়ী, দেশটিতে প্রায় ১৪ লাখ মানুষ এইডস আক্রান্ত এবং প্রতিবছর এ রোগে আক্রান্ত হয়ে সেখানে প্রায় ১৭ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।

এ বছরের আগ পর্যন্ত কাম্পালা ক্লিনিক উগান্ডায় এইচআইভির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়ে আসছিল।

অথচ, এখন, খুব বেশি বিপদে না পড়লে রোগী আসছে না বলে জানান ডা. টেনডো। বলেন, ‘‘মানুষ যত চিকিৎসা গ্রহণ থেকে দূরে থাকবে তত এইচআইভি ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়বে।”

কঠোর এই আইনের ফলে এইচআইভি/এইডস এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উগান্ডা যতটা সাফল্য পেয়েছিল তার সবই এখনো উল্টোপথে চলতে শুরু করবে বলে সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা।

যা অস্বীকার করে গত সপ্তাহে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, যাদের প্রয়োজন তারা যেন প্রতিরোধ কর্মসূচির আওতায় পরিষেবা পেতে পারে সেটা সরকার নিশ্চিত করবে।

তবে রয়টার্স থেকে তাদের এই প্রতিবেদনের বিষয়ে মতামত নিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হলে তাতে সাড়া মেলেনি।

এ বিষয়ে ইউএস প্রেসিডেন্টস ইমার্জেন্সি প্ল্যান ফর এইডস রিলিফ (পিইপিএফএআর) এর কান্ট্রি ডিরেক্টর মেরি বোর্গম্যান বলেন, নতুন আইন কার্যকর হওয়ার পর পুরে দেশজুড়েই এইচআইভি আক্রান্তদের মধ্যে চিকিৎকেন্দ্র থেকে দূরে থাকার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

পিইপিএফএআর থেকেই কাম্পালা ক্লিনিকসহ উগান্ডা জুড়ে আরো প্রায় ৮০টি ক্লিনিকে এইডস এর চিকিৎসায় তহবিলের যোগান দেওয়া হয়।

বোর্গম্যান বলেন, গত মার্চে উগান্ডার পার্লামেন্টে সমকাম বিরোধী বিলটি উত্থাপনের পর থেকেই লোকজনের মধ্যে চিকিৎসা গ্রহণে ক্লিনিকে আসা নিয়ে আতঙ্ক বাড়তে শুরু করেছিল।

যে দুই-একজন এখন হঠাৎ হঠাৎ কাম্পালা ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসেন তাদের একজন ২৭ বছরের এক সমকামী তরুণ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, নতুন আইনে তিনি মারাত্মক হতাশ হয়ে পড়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই তরুণ বলেন, ‘‘নতুন আইন কার্যকর হওয়ার পর আমি খুবই দুঃখ পেয়েছি। কারণ আমাদের ভয় হচ্ছে হয়তো পিইপিএফএআর-এর তহবিল কেটে নেওয়া হবে। যেখান থেকে আমরা বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছি।

‘‘এলজিবিটি কমিউনিটির সদস্যরা এখন নিজেদের বাড়ি থেকে বের হতে ভয় পায়। যার অর্থ যদি তহবিল কেটে নেওয়া নাও হয় তবুও কেউ কেউ এইডস ক্লিনিকগুলো থেকে সেবা নিতে পারবে না। এটা চিন্তা করেও আমি খুব হতাশ হয়ে পড়ছি।”

বার্তা সূত্র