বাংলাদেশের কুষ্টিয়ায় অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীকে নির্যাতনের দায়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক পাঁচ নেতা-কর্মীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সোমবার (২১ আগস্ট) বিকালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে ক্যাম্পাসে জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন; পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা এবং তার সহযোগী ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান, চারুকলা বিভাগের হালিমা খাতুন ঊর্মি এবং আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মিম।
সভায় উপ-উপাচার্য এম মাহবুবুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ এম আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান-সহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। প্রক্টর এম শাহাদাত হোসেন আজাদ বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশে অন্তরা ও তার চার সহযোগীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বৈঠকের সিদ্ধান্ত আগামী ২৩ আগস্টের মধ্যে হাইকোর্টে পাঠানো হবে।”
উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী এই পাঁচ শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী শাস্তি না হওয়ায়, গত ২৬ জুলাই হাইকোর্ট এই বহিষ্কারের আদেশ বাতিল করে দেন। আদালত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ছাত্র আচরণবিধি ১৯৮৭ অনুযায়ী শাস্তি পুনর্নির্ধারণ করার নির্দেশ দেন।
চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে, সানজিদা চৌধুরী অন্তরা এবং তার সহযোগী তাবাসসুম, মিম, ঊর্মি ও মোয়াবিয়া নির্যাতন করে ও ভয়ভীতি দেখায়। তারা মোবাইল ফোনে নির্যাতনের ঘটনার ভিডিও ধারণ করে।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারপার্সন রেবা মণ্ডলের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। ইসলামী বিশ্ববিদ্যারয় কর্তৃপক্ষের গঠিত দুটি তদন্ত কমিটি গত ২৬ ফেব্রুয়ারি তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। হল প্রশাসন গত ২৭ ফেব্রুয়ারি পাঁচ অভিযুক্তকে বহিষ্কার করে।
গত ১ মার্চ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অন্তরা ও চার কর্মীকে, শিক্ষার্থী নির্যাতন ও হয়রানি করার দায়ে বহিষ্কার করে।২৮ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে হাইকোর্ট বেঞ্চ ১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়কে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী ও কর্মীদের সাময়িক বরখাস্ত করতে বলেন।
আদালত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ও রেজিস্ট্রারকে অবিলম্বে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট শামসুল আলম এবং হাউস টিউটর মৌমিতা আক্তার ও ইশরাত জাহানকে তাদের কর্তব্যে অবহেলার দায়ে অপসারণ করার নির্দেশ দেন। কর্তৃপক্ষ পরে অভিযুক্ত পাঁচ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরখাস্ত করার পাশাপাশি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট শামসুল আলমকে অপসারণ করে। আর, হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে আসন বরাদ্দ দেয়।