ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ হয়েছে বোরকা ও নেকাব। শুধু ইউরোপ নয়, অনেক মুসলিম প্রধান দেশেও বোরকা ও নেকাব বিভিন্ন কারণে নিষিদ্ধ।
বেলজিয়াম: ২০১১ সালের জুলাই মাসে বেলজিয়ামেও নেকাব নিষিদ্ধ করা হয়। দেশটিতে কোনো নারী তার পুরো মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে পারবে না বলে আইন করা আছে।
ফ্রান্স: ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্সই প্রথম আইন করে বোরকা ও নেকাব নিষিদ্ধ করে। ফ্রান্সে প্রায় ৫০ লাখ মুসলমান বসবাস করে। ২০১১ সালের ১১ এপ্রিল এই আইন কার্যকর হয়। বোরকা বা নেকাব পরলে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে দেশটিতে।
নেদারল্যান্ডস: নেদারল্যান্ডসে ২০১৫ সালে আইন করে বোরকা নিষিদ্ধ করা হয়। বিশেষ করে জনসম্মুখে অর্থাৎ স্কুল, হাসপাতাল ইত্যাদির মতো জায়গায় বোরকা ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আইনটি কার্যকর হয় ২০১৯ সালের ১ আগস্ট।
স্পেন: পুরো স্পেনে নয়, শুধু বার্সেলোনা শহর কর্তৃপক্ষ সেখানে বোরকা নিষিদ্ধ করেছে।
সুইজারল্যান্ড: ২০১৩ সালে সুইজারল্যান্ডের ইটালীয় ভাষা-ভাষীদের এলাকা টিসিনোতে বোরকা নিষিদ্ধের ওপর ভোট হয়। নিষিদ্ধ করার পক্ষে পড়ে ৬৫ শতাংশ ভোট। এরপর ২৬টি শহরে বোরকা নিষিদ্ধ হয়। কেউ জনসম্মুখে বোরকা পরলে ৯ হাজার ২০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানার বিধান রেখেছে দেশটি।
ব্রিটেন: ব্রিটেনে কোনো ইসলামি পোশাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে স্কুলগুলোতে নির্দিষ্ট পোশাক পরতে হয়। ২০০৭ সালে বেশ কয়েকটি মামলার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ ঠিক করে স্কুলে কেউ বোরকা বা নেকাব পরতে পারবে না।
ইতালি: ইতালির বেশ কয়েকটি শহরে নেকাব নিষিদ্ধ। উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর নোভারা কর্তৃপক্ষ সেখানে আইন করে বোরকা নিষিদ্ধ করেছে। ৭০-এর দশকেই মুখ ঢেকে রাখা সব ধরনের ইসলামিক পোশাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইতালি।
জার্মানি: জার্মানির বাডেন ভুর্টেমব্যার্গ রাজ্যের স্কুলে বোরকা-নিকাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে, স্কুলে বোরখা বা নিকাব পরে যাওয়া যাবে না। জরিপে দেখা গেছে, প্রায় তিন-চতুর্থাংশ জার্মানও প্রকাশ্যে বোরকাধারী মহিলাদের দেখতে নারাজ।
চাদ: ২০১৫ সালের জুন মাসে দুটি বোমা হামলার দুই দিন পর নারীদের মুখ ঢাকা পোশাক নিষিদ্ধ করেছে চাদ। বোরকা কোথাও বিক্রি করা হচ্ছে দেখলে তা সাথে সাথে পুড়িয়ে ফেলা হবে বলেও ঘোষণা দেন চাদের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। কেউ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে রাখা হয়েছে কারাদণ্ডের বিধান।
ক্যামেরুন: আফ্রিকার দেশ ক্যামেরুনেও একই সিদ্ধান্ত। বর্তমানে দেশটির পাঁচটি প্রদেশে বোরকা ও নেকাব নিষিদ্ধ।
তাজিকিস্তান: ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এশিয়ার মুসলিম প্রধান দেশ তাজিকিস্তান বোরকা ও হিজাব নিষিদ্ধ করে। ইসলামি মুখঢাকা পোশাক পরার চেয়ে দেশটির ঐতিহ্যগত পোশাক পরায় মনোযোগী হতে নারীদের আহ্বান জানায় দেশটির সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। এই আইন অমান্য করলে কোনো সাজার ব্যবস্থা রাখা হয়নি, তবে শিগগিরই জরিমানা বা কারাদণ্ড চালু করা হতে পারে বলে আলোচনা চলছে দেশটিতে।
মরক্কো: আফ্রিকার ৯৯ শতাংশ মুসলিম ধর্মাবলম্বীর দেশ মরক্কোতে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে বোরকার উৎপাদন, আমদানি ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়। তবে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি দেশটির সরকার। বোরকা পরার ব্যাপারে কোনো নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কিনা, তাও স্পষ্ট করা হয়নি এখনো। ফলে দেশটিতে এখনো এ নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা রয়েছে।
নাইজার: উগ্রবাদী গোষ্ঠী বোকো হারামের কার্যক্রম বেশি থাকায় দেশটির দিফা এলাকায় পর্দা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, প্রয়োজনে মাথা ঢাকা পোশাক হিজাবও আসতে পারে নিষেধাজ্ঞার আওতায়।
শ্রীলঙ্কা: ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল খ্রিস্টানদের ইস্টার সানডের প্রার্থনা চলাকালে গির্জায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হন অন্তত ২৫৩ জন। ঘটনার এক সপ্তাহ পরেই মুখ ঢাকা পোশাক নিষিদ্ধ করে দেশটির সরকার।
তিউনিসিয়া: ২০১৯ সালের ৫ জুন গণ-জমায়েতের স্থান, গণ-পরিবহন ও সরকারি অফিস-আদালতে নিকাব নিষিদ্ধ করে তিউনিসিয়া সরকার। উগ্রবাদী আক্রমণ মোকাবেলাই হচ্ছে এর প্রধান কারণ বলে জানায় আফ্রিকার মুসলিমপ্রধান দেশটির সরকার।
সূত্র : ডয়চে ভেলে