Skip to content

ইংল্যান্ডে সুনাক, স্কটল্যান্ডে ইউসুফ

ইংল্যান্ডে সুনাক, স্কটল্যান্ডে ইউসুফ

ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক যখন স্কটল্যান্ডের সদ্য নির্বাচিত ফার্স্ট মিনিস্টার ও স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি) নেতা হামজা ইউসুফকে অভিনন্দন জানাতে ফোন করেন, তখন কয়েক ডজন দক্ষিণ এশীয় পরিবার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে মিম শেয়ার করে জিজ্ঞেস করছিল– ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এবং পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত স্কটিশ ফার্স্ট মিনিস্টার ব্রিটেন বিভাজন বিষয়ে আলোচনা করবেন কিনা।

স্কটল্যান্ডের প্রথমমন্ত্রী হিসেবে প্রধানত খ্রিষ্টীয় ঐতিহ্যবাহী কোনো পশ্চিমা গণতন্ত্রে প্রথম মুসলিম জাতীয় নেতা ইউসুফ। ইউসুফ এবং তাঁর পরিবার তাঁদের রোজা ভাঙার সময় সরকারি বুট হাউসের বাসভবনে প্রথম রাতে যখন নামাজের চিত্রটি প্রকাশ করে, তখন কিছু ব্যতিক্রম বাদে সবাই বেশ উষ্ণভাবে তা গ্রহণ করেন। কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী কেট ফোর্বস প্রকাশ্যে প্রার্থনা করার জন্য হয়তো ভিন্ন প্রতিক্রিয়া পেতেন।

স্কটল্যান্ডের নেতৃত্বের এই নির্বাচনে ধর্মের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার বিষয়টি অস্বাভাবিক ছিল, বিশেষ করে ঋষি সুনাকের হিন্দু ধর্মবিশ্বাসের প্রতি মনোযোগ যতটা কম ছিল; তার সঙ্গে তুলনা করলে সেটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। চূড়ান্ত ফলাফলে উভয়ের অবস্থান কাছাকাছি ছিল– ৫২ থেকে ৪৮ শতাংশ। কেট ফোর্বস যেভাবে সমতা আইনের বিষয়টি মোকাবিলা করেছেন, সে কারণে সম্ভবত এই নির্বাচনে তাঁকে মূল্য দিতে হয়েছে। তবে তিনি যে লড়াইয়ের এতটা কাছাকাছি এসেছিলেন তা প্রমাণ করে– তাঁর প্রতি জনসমর্থন বেশ ভালোই রয়েছে। জরিপে আরও দেখা গেছে, খ্রিষ্টানসহ সব ধর্মবিশ্বাসই এখন সংখ্যালঘু। আমাদের উচিত সব ধর্মের অনুসারীদের পাশাপাশি অবিশ্বাসীদের সঙ্গে ন্যায়বিচারপূর্ণ আচরণের চেষ্টা করা।

রাজা চার্লস একজন সহজাত বহুসংস্কৃতিবাদী; কয়েক মাসের মধ্যে তিনি ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রাজমুকুট পরবেন। যুক্তরাজ্যের একজন হিন্দু প্রধানমন্ত্রী এবং স্কটল্যান্ডের একজন মুসলিম ফার্স্ট মিনিস্টারকে তাঁর সেই অভিষেকে আমন্ত্রণ জানাতে পেরে তিনি নিশ্চয় নিজেকে ভাগ্যবান মনে করবেন। প্রশ্ন হলো, জাতিগত পরিচয় এবং বিশ্বাসের বৈচিত্র্যের জন্য ব্রিটেন কীভাবে শীর্ষে পৌঁছল? এর কারণ নিহিত আমাদের দীর্ঘ ইতিহাসের মূলে। এই রাজ্যাভিষেকের বছরটি একই সঙ্গে  উইন্ডরাশ তথা ক্যারিবিয়ানদের ব্রিটেনে আগমনের ৭৫তম বার্ষিকী। যুদ্ধোত্তর অভিবাসন যেভাবে একটি বহু-জাতির ব্রিটেন তৈরি করেছিল, তার সূচনা বছর ১৯৪৮। যদিও সংখ্যালঘুর অধিকার নিশ্চিতে চার দশক অপেক্ষা করতে হয়।

সাম্প্রতিক পরিবর্তনের ধারা এটা প্রমাণ করছে– ন্যায্য রাজনীতির জন্য সক্রিয় নেতৃত্ব প্রয়োজন। বারাক ওবামা যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তখনও এদেশে কোনো ব্রিটিশ-এশিয়ান মন্ত্রী ছিলেন না। বিভিন্ন দলের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা রয়েছে। ব্রিটেনে মুসলিম রাজনৈতিক সংহতি নিঃসন্দেহে ১১ সেপ্টেম্বরের পর দুই দশকের যাচাই-বাছাইয়ের ফসল। হামজা ইউসুফ নাইন-ইলেভেনের পরে তাঁর নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ১৬ এবং তাঁর স্কুলের কয়েকজন মুসলিম ছাত্র রাজনীতিতে তাঁর আগ্রহের জন্ম দিয়েছিলেন।
২০০১ সালে মাত্র দুইজন মুসলিম সাংসদ ছিলেন; সেখানে ২০১৯ সালে ১৯ জন নির্বাচিত হয়েছেন; যাঁদের বেশিরভাগই নারী। ব্রিটিশ এশীয় নেতৃত্বের এই ঢেউ এসেছে ব্রিটেনের একজন কৃষ্ণাঙ্গ দলের নেতার মাধ্যমে। এটি আংশিকভাবে জনসংখ্যার হারকেও প্রভাবিত করে। এশিয়ানরা জনসংখ্যার ১০ শতাংশ, কৃষ্ণাঙ্গ ব্রিটিশরা ৪ শতাংশ।

ব্রিটেনের শীর্ষ ১০০ কোম্পানি এখনও ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত জাতিগত সংখ্যালঘু কর্মচারীকে শীর্ষ পদে পদোন্নতি দেয়নি। আমাদের স্পষ্ট হওয়া উচিত যে, শীর্ষ পর্যায়ে বৈচিত্র্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্জিত হবে না। জাতিগতভাবে, বিশ্বাস কিংবা লিঙ্গের দিক থেকে আমাদের আরও বহু উন্মুক্ত অভিজাত রয়েছে। এসব আভিজাত্য দেখা যায় শিক্ষা ও পেশাগত দিক থেকে।

রাজনীতিতে আরও বৈচিত্র্য, আরও বেশি জাতিগত মেরূকরণ ঘটাতে পারে। এর ফলে বামদের আগের আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য ডানদের মধ্যে আরও বেশি আত্মবিশ্বাস দেখা যেতে পারে। এশিয়ান এবং কৃষ্ণাঙ্গ রাজনীতিবিদরা সংবাদমাধ্যম ও রাজনীতিতে সেতু বা সংস্কৃতি যোদ্ধার ভূমিকা পালন করতে পারেন, ঠিক যেমন তাঁদের শ্বেতাঙ্গ সহকর্মীরা তা পারেন। এই বৈচিত্র্য তাই নীতি পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যায় কিনা, তা নির্ভর করে সরকারের পছন্দের ওপর। ঋষি সুনাক এমন এক পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, তাঁকে থেরেসা মে বা ডেভিড ক্যামেরনের মতো জাতিগত অগ্রাধিকারের খেলায় মত্ত হতে হবে না।

জাতীয় রাজনীতি যে ধারার সূচনা ঘটিয়েছে, অন্য কোথাও এটি অনুকরণ করার জন্য চাপ থাকা উচিত। কীভাবে নিউজরুম এবং লবি সাংবাদিকরা হাউস অব কমন্সের জাতিগত বৈচিত্র্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে? একের পর এক জাতিগত সংখ্যালঘু চ্যান্সেলর থাকা সত্ত্বেও, কোনো অর্থনৈতিক কোম্পানি এখনও ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত জাতিগত সংখ্যালঘু কর্মচারীকে শীর্ষ পদে পদোন্নতি দেয়নি কেন? রাজনীতির ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, এটা তার সম্পূর্ণ বিপরীত। মেট্রোপলিটন পুলিশ সম্পর্কে লুইস কেসির পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, পুলিশিং কতটা খারাপ পরিস্থিতিতে আটকে গেছে। দাতব্য খাতটিও এদিক থেকে পিছিয়ে আছে। সেখানে জাতিগত বৈচিত্র্যের যে ঘাটতি রয়েছে, সে সম্পর্কে উদ্বেগজনক আলোচনা রয়েছে।

অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক শক্তির প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই ব্রিটেনের ক্রমবর্ধমান বৈচিত্র্যকে একেবারে সাধারণ একটা বিষয়ে পরিণত করার লক্ষ্যে আস্থার সঙ্গে চেষ্টা করে যেতে হবে। এই দৌড়ে শুধু রাজনীতির দিক থেকে শীর্ষ পদে যাওয়াই যথেষ্ট নয়।

সুন্দর কাতওয়ালা: ব্রিটিশ ফিউচারের পরিচালক ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ফ্যাবিয়ান সোসাইটি; গার্ডিয়ান থেকে ঈষৎ সংক্ষেপিত ভাষান্তর



বার্তা সূত্র