Skip to content

আসামে কৌশলে সংখ্যালঘুদের আসন হ্রাস

আসামে কৌশলে সংখ্যালঘুদের আসন হ্রাস

রাশিদুল ইসলাম: ভারতে বিজেপিশাসিত আসামে আসন পুনর্বিন্যাসের নামে কৌশলে সংখ্যালঘুদের আসন কমানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ‘এআইইউডিএফ’-এর বিধায়ক আমিনুল ইসলাম। পারসটুডে

রোববার মানকাচরের ‘এআইইউডিএফ’ বিধায়ক আমিনুল ইসলাম ওই মন্তব্য করায় রাজনৈতিক মহলে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। আমিনুল ইসলাম বলেন, সংখ্যালঘুদের আসন ৩১টি থেকে ২০/২২টিতে নিয়ে আসার কৌশল রচনা করা হয়েছে। আর এসব কিছুই করা হয়েছে বিজেপির কথামতো। তিনি বলেন, একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে চাপে রাখার পাশাপাশি ‘এআইইউডিএফ’কে নিঃশেষ করার ব্লুপ্রিন্ট রচনা করেছে বিজেপি।

প্রসঙ্গত, গত ২০ জুন ভারতের নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নির্বাচনী এলাকা পুনর্বিন্যাসের খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে। এরপর থেকে ওই ইস্যুতে বিভিন্ন মহল থেকে নানাভাবে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার জামাতে ইসলামী হিন্দের দক্ষিণ আসাম জোনের সূরা সদস্য ও বিশিষ্ট সমাজকর্মী আহমেদ আলি বড়ভুঁইয়া বলেন, ‘আসামে সংখ্যালঘু আসন কমিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এটা করা হয়েছে এটা ১০০ শতাংশ নিশ্চিত।’

ওই ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে তিনি বলেন, ‘আসামের যিনি মুখ্যমন্ত্রী, উনার বিভিন্ন সময়ে বক্তব্যগুলো অত্যন্ত ধিক্কারজনক এবং সমস্ত মানবজাতির জন্য এটা লজ্জাজনক! সুতরাং, তার মানসিকতা যেটা সেটা কোনও অবস্থাতেই ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ মানসিকতার পরিচয় বহন করে না। গণতান্ত্রিক বা সাংবিধানিক দায়বদ্ধতাও তিনি মানতে চান না। যে ব্যক্তি অহরহ একটা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ বক্তব্য দিচ্ছেন, তিনি সাফাইতে এটা বলতেই পারেন যে, আসন সংখ্যার বিষয়টি কোনও ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করে নয়। কিন্তু আমরা এটা দেখতে পাচ্ছি যে তিনি এই কাজটাই করছেন যাতে একটা বিশেষ সম্প্রদায়, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনপ্রতিনিধিত্ব কমিয়ে দেওয়া যায়। তার কাছ থেকে এটা অপ্রত্যাশিত নয়। তার বিভিন্ন বক্তব্য এবং কাজকর্ম থেকে এটা স্পষ্ট। তিনি সংখ্যালঘুদের বঞ্চিত করার জন্য এটা করেছেন।’    

‘নির্বাচন কমিশনের যারা আসছেন তাদেরকে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক  সংস্থার পক্ষ থেকে স্মারকলিপি দিয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। আদালতে  ওই প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করার প্রস্তুতিও নেওয়া চলছে। নির্বাচন কমিশন কী পদক্ষেপ নেয় তার উপর সবকিছু নির্ভর করছে বলেও জামাতে ইসলামী হিন্দের দক্ষিণ অসম জোনের সূরা সদস্য ও বিশিষ্ট সমাজকর্মী আহমেদ আলি বড়ভুঁইয়া মন্তব্য করেন।

আসন পুনর্বিন্যাস ইস্যুতে বিধায়ক আমিনুল ইসলাম জনপ্রতিনিধিত্ব আইন ১৯৫০-এর ৮(এ) ধারার সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ৮(এ) ধারাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের কথাও জানিয়েছেন বিধায়ক আমিনুল ইসলাম। তার দাবি- নির্বাচন কমিশন নয়, আসন বা নির্বাচনী কেন্দ্র পুনর্বিন্যাসের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশন নয়, এই ক্ষমতা যেন ডিলিমিটেশন কমিশনকেই দেওয়া  হয়।

আমিনুল ইসলাম কংগ্রেসের সমালোচনা করে বলেন, ২০০৮ সালে কংগ্রেসের আমলেই জনপ্রতিনিধিত্ব আইন ১৯৫০-এর ৮ ধারা সংশোধন করে ৮(এ) ধারা তৈরি করা হয়েছিল। সেই ৮(এ) ধারাতেই আসন পুনর্বিন্যাসের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল নির্বাচন কমিশনকে। আর সেই ক্ষমতায় খেয়াল খুশিমতো কাজ করছে নির্বাচন কমিশন। তাও আবার আরএসএস এবং বিজেপির শ্রুতলিপি মেনেই বলে অভিযোগ করেছেন বিধায়ক আমিনুল ইসলাম। কংগ্রেসের তৈরি করা মাঠেই বিজেপি এখন  খেলছে বলেও কটাক্ষ করেছেন মানকাচরের ‘এআইইউডিএফ’ বিধায়ক আমিনুল ইসলাম। 

আসামের মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্ব শর্মা অবশ্য বলেছেন, ‘সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু অধ্যুষিত আসনের প্রশ্ন আসছে কোত্থেকে? আসন সবার জন্য। ‘এআইইউডিএফ’ বিধায়কের বিশ্বাস সংখ্যালঘু অধ্যুষিত আসন রয়েছে। সেটা তার ভুল ধারণা। সেই ধারণা ভেঙে গেলেই ভালো। ‘সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু অধ্যুষিত আসন বলতে কিছুই নেই।সবার জন্যই আসন।’

যদিও বিধায়ক আমিনুল ইসলামের দাবি- আসন পুনর্বিন্যাসের খসড়ায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আসনের বিপুপ্তি ঘটানো হয়েছে। গোয়ালপাড়ায় একটি আসন তফসিলি উপজাতির জন্য সংরক্ষিত করে গুয়াহাটি লোকসভা কেন্দ্রে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যাপক পরিবর্তন করা হয়েছে বরপেটা লোকসভা আসনে। একইসঙ্গে বরপেটায় দু’টি বিধানসভা আসনও হ্রাস করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে খসড়ায়। তার মতে, বরপেটা লোকসভা কেন্দ্র এমনভাবে কাটাকাটি করা হয়েছে যাতে মুসলমান জনপ্রতিনিধির সংখ্যা কমে। খসড়ায় তপসিলি জাতি-উপজাতির জন্য সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হলেও কৌশলে সংখ্যালঘুদের আসন হ্রাস করা হয়েছে’ বলেও অভিযোগ করেছেন মানকাচরের  ‘এআইইউডিএফ’ বিধায়ক আমিনুল ইসলাম।     

বার্তা সূত্র