মঙ্গলবার রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা জানায় যে মস্কোর দীর্ঘদিনের মিত্র বাশার আল-আসাদের উৎখাতের পর এই প্রথমবার রাশিয়ার সরকারি প্রতিনিধিদল সিরিয়া সফরে গেছেন।
এই সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন মস্কো সেখানে তাদের সামরিক ঘাঁটির ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে আগ্রহী এবং আসাদের পতনের পর মধ্যপ্রাচ্যে যে মস্কো কৌশলগত ভাবে “পরাজিত” হয়েছে সে কথা ভ্লাদিমির পুতিন অস্বীকার করার পর।
আরআইএ নভোস্তি সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশটির নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে রাশিয়ার যে প্রতিনিধিদল দেখা করবেন তাদের মধ্যে রয়েছেন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিখাইল বগদানভ,যিনি মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা বিষয়ে পুতিনের বিশেষ দূত এবং আলেকজান্দার লাভারেনতিয়েভ যিনি সিরিয়ায় প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত ।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ডিসেম্বরে গোটা দেশ জুড়ে বিদ্রোহীদের আচমকা অগ্রযাত্রার মুখে আসাদের পলায়নের পর এটি হচ্ছে “রুশ কর্মকর্তাদের প্রথম দামেস্ক সফর”।
মস্কো ছিল আসাদের প্রধান মদদদাতা, তার পক্ষে ২০১৫ সালের সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে রাশিয়া হস্তক্ষেপ করেছিল।
এক সময়ে আল-ক্বায়দার সঙ্গে সম্পৃক্ত তুরস্ক সমর্থিত বিদ্রোহীদের দ্বারা ক্ষমতাচ্যূত হবার পর আসাদ ও তাঁর পরিবার রাশিয়ায় পালিয়ে যান।
রাশিয়া এখন টারটাসে তার নৌঘাঁটি এবং খেয়েমিমে তার বিমানঘাঁটি সুরক্ষিত করতে চাইছে নতুন সিরীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। এ গুলো হচ্ছে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বাইরে রাশিয়ার এক মাত্র সামরিক চৌকি।
রাশিয়ার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত চ্যানেল আরটি অ্যারাবিক বলেছে এই প্রতিনিধিদল সিরিয়ার নতুন নেতা আহমেদ আল-শারা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আল-শাইবানি ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে কথা আছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট অনুযায়ী রাশিয়ার বোগদানভ সিরিয়ায় ১৯৮০ ও ১৯৯০ ‘এর দশকে কূটনীতিক ছিলেন এবং তিনি আরবী ভাষায় কথা বলতে পারেন।
শারা হায়াত তাহরির-আল শাম(এইচটিএস) নামের একটি ইসলামি গোষ্ঠীর নেতৃত্ব দেন যেটি “সন্ত্রাসী” সংগঠন হিসেবে রাশিয়ায় নিষিদ্ধ।
এই সংগঠনটির মূল আল-ক্বায়দার সিরীয় শাখার সঙ্গে সম্পৃক্ত তবে সাম্প্রতিক সময়ে এটি অনেক বেশি লঘু দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে।
আরটি অ্যারাবিক জানায় যে বোগদানভ এই সফরকে অভিন্ন স্বার্থের উপর ভিত্তি করে ঐতিহাসিক বন্ধন আরও দৃঢ় করার লক্ষ্য বলে বর্ণনা করেন এবং সিরিয়ার একতা ও স্বাধীনতার জন্য রাশিয়ার প্রত্যাশার উপর জোর দেন।
গভীর কূটনৈতিক স্বার্থসমূহ
ডিসেম্বর মাসে আল-আরাবিয়া টিভি চ্যানেলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে শারা “ রাশিয়া ও সিরিয়া গভীর কৌশলগত স্বার্থকে” তুলে ধরেন।
শারা আরও বলেন, “ সিরিয়ার সব অস্ত্রই রাশিয়ার তৈরি এবং বহু বিদ্যূৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন রুশ বিশেষজ্ঞরা… আমরা চাইনা সেই ভাবে রাশিয়া সিরিয়া ত্যাগ করুক যেমনটি কেউ কেউ আশা করেন”।
ইউক্রেনের কূটনীতিকরা ডিসেম্বর মাসে সিরিয়ার নতুন নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আঁদ্রেই সিবিগা সিরিয়া থেকে রাশিয়াকে বিতাড়িত করতে শারার উপর চাপ দেন।
এক বিবৃতি অনুযায়ী দামেস্ক সফরের সময়ে সিবিগা শারাকে বলেন, “ আমরা বিশ্বাস করি যে কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, সিরিয়ায় রাশিয়ার উপস্থিতি বন্ধ করা হলে, সেটি যে কেবল সিরিয়া রাষ্ট্রটির স্থিতিশীলতার প্রতি অবদান রাখবে তাই-ই নয়, গোটা মধ্য-প্রাচ্য ও আফি্রকার জন্যো তা জরুরি”।
সিরিয়ার নতুন শাসকরা সম্পর্ক স্থাপনের ও নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার লক্ষ্য নিয়ে যখন কুটনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধি করছে ঠিক সেই সময়ে রাশিয়ার প্রতিনিধিদল এই সফর করছে।
ইইউ’র পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সোমবার সহমত হন যে তাঁরা সিরিয়ার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করবেন, যেমন শুরুতেই তাঁরা জ্বালানি ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করবেন।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও “যাতে সিরিয়াকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের উৎস করা না হয় সে ব্যাপারে নিশ্চয়তার” এবং “ বিদেশের বৈরি পক্ষগুলি যারা সিরিয়ার এই পরিবর্তনের সুযোগ নিতে চায় তাদের অস্বীকৃতি জানানোর গুরুত্বের উপর জোর দেন।
সৌদি আরবের শীর্ষ কূটনীতিক ফায়সাল বিন ফারহানকে শুক্রবার শারা স্বাগত জানান। এটি ছিল আসাদের পতনের পর তাঁর প্রথম সফর।