Skip to content

আর নয় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা

বাংলাদেশের ইতিহাসে যে কোনো নির্বাচন বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনের আগে এবং পরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা নতুন নয়। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই এ শঙ্কাটি দানা বাঁধতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে। বিশেষ করে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে নিরাপত্তার বিষয়টি তাদের ভাবিয়ে তুলেছে। সম্প্রতি দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের নেতৃস্থানীয়দের বক্তৃতায় আসন্ন নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার আশঙ্কার কথা উঠে আসে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংগঠন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত তার উদ্বেগ ও শঙ্কার কথা তুলে ধরে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি আবারও সামনে এনেছেন।

শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার চেষ্টা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী দুর্গাপূজার সময় বা তার পরও দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটতে পারে। এমনকি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও প্রায় একই সুরে কথা বলেছেন। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এ আশঙ্কা যে অবান্তর নয়, তা সবাই জানে। কেননা তারা অতীতে একবার নয়, দুবার নয়, অসংখ্যবার এ সহিংসতার শিকার হয়েছেন। শুধু নির্বাচনের আগে পরে নয়, বিভিন্ন সময়ই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গাপূজার সময়ও ঘটতে দেখা যায় এ বর্বরতা। আমরা কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ রেখে দেওয়ার ঘটনার কথা স্মরণ করতে পারি। ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর মহাঅষ্টমীর দিন ভোরে কুমিল্লা শহরের নানুয়াদীঘির একটি পূজামণ্ডপে কোরআন পাওয়া যায়। পরে একদল লোক কোরআন শরিফ অবমাননার অভিযোগ তুলে ওই পূজামণ্ডপে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। সেই ঘটনায় সারা দেশের বেশকয়েকটি জেলায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় সাতজন মারা যায়, যার মধ্যে দুজন হিন্দু সম্প্রদায়ের ও বাকিরা মুসলমান। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে যশোরের অভয়নগর উপজেলার চাঁপাতলা গ্রামের মালোপাড়ায় দুর্বৃত্তদের তাণ্ডবের কথা সবারই জানা। ভোটের দিন সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয় সেই তাণ্ডব। চলতে থাকে ভোটের পরও বেশ কয়েকদিন ধরে। শুধু যশোর নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয় তখন। ভোট দেওয়ার অপরাধে তাদের ওপর শারীরিক হামলা, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া, বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুটপাট করা হয়। শুধু যশোরেরই ১১২টি মৎস্যজীবী হিন্দু পরিবার এ হামলার শিকার হয়। অভয়নগর ছাড়াও দিনাজপুর সদর উপজেলার চেহেলগাজী ইউনিয়নের কর্ণাই গ্রামের ছয়টি হিন্দুপাড়ায় হামলা চালিয়ে দেড় শতাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি জেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আক্রান্ত হয়। এ হামলায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। শুধু হিন্দু সম্প্রদায় নয়, আদিবাসীদের ওপরও হামলা চালানো হয় তখন।

আমরা মনে করি, দেশের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল এবং বিরোধী দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের নেতৃস্থানীয়দের থেকে এমন আশঙ্কা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় তো বটেই, যে কোনো ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায়ের মানুষ, যারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও মানবতার আদর্শে বিশ্বাসী তাদেরও ভীতসন্ত্রস্ত করবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোকেই সবচেয়ে বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা, কেবল নির্বাচনের আগে পরেই নয়, কোনো সময়ই যেন সংখ্যালঘুরা আতঙ্কিত বা নিরাপত্তাহীনতায় না ভোগে, দেশে সেই পরিবেশ তৈরি হবে। আসন্ন নির্বাচনে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বীভৎস ঘটনার পুনরাবৃত্তি কারও কাম্য নয়। এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।



বার্তা সূত্র