বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে। রবিবার (৪ জুন) শেখ হাসিনা ঢাকা-চিলাহাটি-ঢাকা রুটে নতুন আন্তঃনগর ট্রেন ‘চিলাহাটি এক্সপ্রেস’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
গণভবন থেকে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে, নীলফামারীর চিলাহাটি রেলস্টেশন-এ আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। এই ট্রেন সপ্তাহে ছয় দিন চলাচল করবে; এর যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৮০০ জন।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা এই বাজেট বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং আমরা তা করতে সক্ষম হবো। আওয়ামী লীগ তা করতে পারবে।” তিনি বলেন, “বিএনপির শাসনামলে ২০০৬ সালে বাজেটের আকার ছিলো ৬১ হাজার কোটি টাকা। বর্তমান সরকার গত ১ জুন ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে।”
বাজেটের সমালোচকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে ও বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে তারা সবসময় সরকার যাই করুক না কেন সেখানে ‘কিন্তু’ (ত্রুটি) খুঁজে বের করে এবং সমালোচনা করে। তারা জনগণকে হতাশ করতে ও বিদেশিদের সামনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য কিছু কথা ছড়ায়।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “বাজেট উপস্থাপনের পর প্রতিবার তারা পর্যবেক্ষণ করেন এবং বলেন এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা এটি করি এবং দেখাই যে তা সম্পন্ন হয়েছে।”
সিপিডি বলেছে, “বাজেট কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর দিকে মনোনিবেশ করেছে, তবে রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত নয়, তাই ঘাটতি অর্থায়নের পরিমাণ শেষ পর্যন্ত বাড়বে।”
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন গুলশানের একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত বাজেট পরবর্তী পর্যালোচনার নেতৃত্ব দেন। তিনি বলেন, “বাজেট এমন এক সময়ে পেশ করা হয়েছে, যখন বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে।”
সিপিডি প্রক্ষেপণ-এ বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট-এ ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, যা বর্তমান বাজেট অর্জনের তুলনায় প্রায় ৩৯ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা হবে। এ জন্য ১ দশমিক ৪২ লাখ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে হবে।”
ওদিকে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে যে চলমান অর্থনৈতিক সংকট, ক্রমবর্ধমান আয়-বৈষম্য ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমার মূল কারণ দুর্নীতি ও অর্থপাচারের মতো ঘটনাকে, প্রস্তাবিত বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী একেবারেই স্বীকার করেননি। একইভাবে সুশাসন ও ন্যায্যতার ভাবনাকেও উল্লেখ করা হয়নি।
টিআইবি বলছে, কোভিড সংকট ও ইউক্রেন যুদ্ধপ্রসূত বৈশ্বিক সংকটের ফলে অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সন্দেহ নেই। কিন্তু দেশে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পথে মূল অন্তরায় হলো অবারিত দুর্নীতি ও গগণচুম্বি অর্থপাচার। তা নিয়ন্ত্রণে কোনো প্রকার দিকনির্দেশনা নেই এই বাজেটে। আর এই উচ্চাভিলাষী বাজেট কীভাবে অর্থবহ বাস্তবায়িত হবে, তাও যেমন পরিস্কার নয়, তেমনিভাবে ক্ষমতার বলয়ের বাইরে দেশের জনগণের জন্য এই বাজেট কোনো ভূমিকা রাখবে, এমন আশা একেবারেই অমূলক।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানশুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, “অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তব্যে ডলার সংকট মোকাবেলা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠনের জন্য আমদানিতে কঠোরতা, ঋণপত্রে নজরদারি অব্যাহত রাখা এবং একাধিক মুদ্রা বিনিময় হার থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের পাশাপাশি দেশের সার্বিক অর্থনীতির অন্তর্নিহিত মরণব্যাধি দুর্নীতি ও অব্যাহত মুদ্রাপাচারের বিষয়টিকে নির্বিকার এড়িয়ে গেলেন।
টিআইবি বলছে, আয়হীন ও নিম্নআয়ের মানুষ যতোটা চাপে রয়েছে, সে তুলনায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বা সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়েনি। ভাতার পরিমাণও কোনো কোনো ক্ষেত্রে নামমাত্র বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে; বাস্তবে তা কোনোভাবেই অর্থবহ হবে না।