Thursday, February 13, 2025

সপ্তাহে শীর্ষে

প্রাসঙ্গিক বার্তা

আউশভিটজঃ গণহত্যার প্রতীক নাৎসি মৃত্যু শিবির মুক্ত হওয়ার ৮০তম বার্ষিকী পালন

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন মৃত্যু শিবির আউশভিটজ-এর মুক্তির ৮০তম বার্ষিকী সোমবার (২৭ জানুয়ারি) পালন করা হচ্ছে। প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের রেড আর্মি সৈন্যরা ১৯৪৫ সালের এই দিনে আউশভিটজ মুক্ত করেছিল। ধারণা করা হচ্ছে, হয়তো এই বার্ষিকীর অনুষ্ঠানেই মৃত্যু শিবির থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষজন শেষবারের মত উপস্থিত থাকতে পারবেন।

যারা অনুষ্ঠানের জন্য আউশভিটজে এসেছেন, তাদের মধ্যে আছে ৮৬-বছর বয়সী টোভা ফ্রিডম্যান। আশি বছর আগে যেদিন ৭,০০০ বেঁচে যাওয়া মানুষ মুক্ত হয়, তখন তাঁর বয়স ছিল ছয়। তাঁর বিশ্বাস এবারই বেঁচে যাওয়া মানুষরা শেষবারের মত আউশভিটজে সমবেত হচ্ছে, এবং তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি থেকে এসেছেন ক্রমবর্ধমান ঘৃণা এবং ইহুদী বিদ্বেষের ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিতে।

“পৃথিবী এখন বিষাক্ত হয়ে গেছে,” তিনি পোল্যান্ডের ক্রাকোভ শহরের কাছে স্মরণসভার এক দিন আগে দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন। “আমি বুঝতে পাড়ছি আমরা আবার সংকটে পড়েছি, চারপাশে অনেক ঘৃণা, অনেক অবিশ্বাস, আমরা যদি না থামি সেটা আরও অবনতির দিকে যাবে। আরেকটা ভয়ানক ধ্বংসলীলা আসতে পারে।”

পোল্যান্ডের এই এলাকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির দখলে ছিল। দক্ষিণ পোল্যান্ডে অবস্থিত এই কনসেন্ট্রেশন শিবিরে নাৎসি জার্মান বাহিনী কারখানার পদ্ধতিতে, গ্যাস চেম্বারে ১১ লক্ষ মানুষ হত্যা করে, যাদের বেশির ভাগ ছিল ইহুদী।

কিন্তু ইহুদী ছাড়াও এই শিবিরে পোলিশ এবং রোমা জাতিভুক্ত মানুষ, সোভিয়েত যুদ্ধবন্দী, সমকামী মানুষ এবং অন্যান্যদের নাৎসি বর্ণবাদী আদর্শের ভিত্তিতে হত্যার জন্য বাছাই করা হয়।

আউশভিটজ মৃত্যু শিবিরের প্রবেশ পথে লেখা ছিল, “শ্রম আপনাকে মুক্তি দেবে।” ফাইল ফটো।

ক্যাম্প থেকে বেঁচে যাওয়া বয়োবৃদ্ধ মানুষরা এক সাথে হেঁটে “মৃত্যু প্রাচীর”-এর কাছে যান, যেখানে বন্দীদের হত্যা করা হতো। তাদের মধ্যে ছিল পোল্যান্ডের নাগরিক যারা দখলদার জার্মানদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। তাদের সাথে যোগ দেন পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রে ডুডা। যুদ্ধে পোল্যান্ডের ৬০ লক্ষ নাগরিক মারা যায়।

“আমাদের ভূমির উপর দখলদার নাৎসি জার্মানরা এই মৃত্যু কারখানা, এই কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প তৈরি করেছিল, এবং আমরা পোলিশ জনগণ এখন এই স্মৃতির রক্ষণাবেক্ষণ করি,” ডুডা সাংবাদিকদের বলেন।

নাৎসি জার্মানি সারা ইউরোপে ৬০ লক্ষ ইহুদী হত্যা করে। তারা ইউরোপের ইহুদীদের দুই-তৃতীয়াংশ এবং বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ ইহুদী নিধন করে। জাতিসংঘ ২০০৫ সালে ২৭ জানুয়ারিকে আন্তর্জাতিক হলোকস্ট স্মরণ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

পুতিনের বার্তা

ইউরোপের অন্যান্য জায়গায় কর্মকর্তা এবং সাধারণ মানুষ দিনটি স্মরণ করছে।

আউশভিটজ সোভিয়েত রেড আর্মি মুক্ত করার স্বীকৃতিস্বরূপ রাশিয়ার প্রতিনিধিরা অতীতে এই অনুষ্ঠানের মূল অতিথি হতেন। নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে মিত্রদের যুদ্ধ জয়ে সোভিয়েত বাহিনীর ব্যাপক প্রাণহানী হয়। কিন্তু ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ চালানোর পর থেকে তাদের এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করা হয় না।

ক্রেমলিন জানায় যে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে একটি বার্তা পাঠিয়েছেন, যেখানে তিনি বলেছেনঃ “আমরা সব সময় স্মরণ করবো যে, সোভিয়েত সেনারাই এই ভয়ঙ্কর, সম্পূর্ণ অশুভ শক্তিকে ধ্বংস করেছিল এবং বিজয় অর্জন করেছিল। সেই বিজয়ের মাহাত্ম্য চিরকাল বিশ্ব ইতিহাসে রয়ে যাবে।”

সোভিয়েত বাহিনী ১৯৪৫ সালের ২৭ জানুয়ারি আউশভিটজ মুক্ত করার পর নেয়া ছবিতে বেঁচে যাওয়া কয়েকজন শিশুকে বন্দীদের পোশাক পরে কাঁটাতারের বেড়ার ভেতরে দেখা যাচ্ছে। ফাইল ফটো।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেন্সকি, যার দেশ রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, এক দিন আগে রাজধানী কিয়েভে বাবিন ইয়ার হলোকস্ট স্মারকচিহ্নে একটি মোমবাতি জ্বালান। এখানে নাৎসি দখলের সময় হাজার হাজার ইহুদীকে হত্যা করা হয়। তিনি স্মরণসভায় যোগ দিতে সোমবার পোল্যান্ডে পৌঁছেছেন।

জার্মানির শুল্টজ আর ফ্রান্সের ম্যাক্রো

স্মারক অনুষ্ঠানের চূড়ান্ত পর্যায়ে বিশ্বনেতারা ক্যাম্প থেকে বেঁচে যাওয়া বয়োবৃদ্ধ মানুষদের সাথে আউশভিটজ-এর বারকেনাউ অংশে যোগ দেবেন, যেখানে ইহুদীদের গণহত্যা সংঘটিত হয়।

যারা অংশগ্রহণ করছেন, তাদের মধ্যে রয়েছে জার্মানির চ্যান্সেলর (প্রধানমন্ত্রী) ওলাফ শুল্টজ এবং প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ভালটার স্টাইনমাইয়ার। জার্মান বার্তা সংস্থা ডিপিএ’র তথ্য অনুযায়ী, এর আগে জার্মানি থেকে সর্বোচ্চ দুই পদধারি এক সাথে এই অনুষ্ঠানে আসেননি।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রো প্যারিসের শোয়াহ মেমোরিয়ালে ৬০ লক্ষ ইহুদীর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর আউশভিটজ অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।

ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস সেখানে থাকবেন, যেমন থাকবেন স্পেন, ডেনমার্ক এবং নরওয়ের রাজা এবং রানী।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া যাহারোভা বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এই অনুষ্ঠানের আয়োজক এবং সেখানে সেসব ইউরোপিয়ানরা যাবে তাদেরকে একটা কথা বলা প্রয়োজনঃ আপনাদের জীবন, আপনাদের কাজ এবং বিশ্রাম, আপনাদের সন্তান, আপনাদের দেশের অস্তিত্ব নিশ্চিত করেছে সোভিয়েত সেনারা, তাদের জীবন, তাদের রক্ত।”

–ভয়েজ অব আমেরিকা

পাঠক প্রিয়