Skip to content

‘অস্বাস্থ্যকর’ ঢাকা বায়ুদূষণ তালিকায় দ্বিতীয় | দেশ রূপান্তর

‘অস্বাস্থ্যকর’ ঢাকা বায়ুদূষণ তালিকায় দ্বিতীয় | দেশ রূপান্তর

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নজরে পড়ার রাজনীতি নিয়ে এখন ভীষণ ব্যস্ত পেশাজীবী সংগঠনগুলো। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বড় বিরোধী দল বিএনপির সমর্থক বেশ কয়েকটি পেশাজীবী সংগঠন গড়ে উঠেছে। এসব সংগঠন এখন পাল্লা দিয়ে নানা কর্মসূচি দিয়ে মূল দলের রাজনীতি চাঙ্গা করার চেষ্টা করছে। প্রায় প্রতিদিনই ঢাকায় ও ঢাকার বাইরে সভা-সমাবেশ, সেমিনারসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করছে সংগঠনগুলো। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের বাসায় এসব সংগঠনের নেতারা ভিড় করেন।

রাজনৈতিক মহল ও রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের কর্মসূচির আয়োজকদের লক্ষ্য থাকে নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া। রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার পাশাপাশি সারা দেশে অসংখ্য বড় বড় ব্যানার, পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ করে মূল দলের নীতিনির্ধারণী মহলে কদর পাওয়া। ব্যক্তি পরিচিতি লাভ করতে পেশাগত দায়িত্ব পালনে নয়ছয় করতেও কুণ্ঠিত হন না কোনো কোনো পেশাজীবী নেতা।

আওয়ামী লীগ সমর্থক পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা সরকারের গুণগান গাইছেন। নানা আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখার প্রত্যাশার কথা জানাচ্ছেন তারা। বিএনপি সমর্থক পেশাজীবী নেতারা সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন। আন্দোলনের মাঠ গরমের জন্য নিজেরা কর্মসূচি দিচ্ছেন। শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের দাবির আন্দোলন সফল করার জন্য কাজ করছেন। দুই দলের পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের স্বপ্ন একই। সক্রিয়তা দেখিয়ে রাজনৈতিক দলের চোখে পড়া, সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া।

পেশাজীবী সংগঠনগুলোর নেতাদের রাজনৈতিক ব্যস্ততায় সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ জনগণ। নিজ পেশার চেয়ে রাজনৈতিক এ ব্যস্ততায় যেখানে বিরূপ প্রভাব পড়ছে, সেগুলো হলো হাসপাতালে গেলে সময়মতো ডাক্তার পাওয়া না যাওয়া, আদালতে গেলে সময়মতো আইনজীবীর দেখা মেলে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঠিকমতো ক্লাস হয় না।

তবে বিরূপ প্রভাবের কথা অস্বীকার করেছেন পেশাজীবী সংগঠনগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। তাদের দাবি, দায়িত্ব পালন শেষ করেই তারা পেশাগত রাজনীতিতে সময় দিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগ ঘরানার পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলে পেশাজীবী রাজনীতির আধিপত্য ছিল এ দেশে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধে আন্দোলনের সূতিকাগার ছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ। ১৯৯০ সালের গণ-আন্দোলনেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে দেশের চিকিৎসক সমাজসহ পেশাজীবী সংগঠনগুলো।’ তিনি বলেন, তাদের রাজনীতির মূল লক্ষ্য মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বাস্তবায়ন করা। সংসদ সদস্য নির্বাচন করতে চান কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. কামরুল হাসান বলেন, ‘অবশ্যই। জাতীয় সংসদ পলিসি মেকিংয়ের জায়গা। দেশ ও জাতির উন্নয়নের স্বার্থে সেখানে পেশাজীবীদের ভূমিকা রাখার জায়গা। নিজ নিজ পেশার বিশেষজ্ঞদের সংসদে যাওয়ার সুযোগ হলে দেশের অনেক কাজই সহজ হয়ে যাবে।’

পেশাজীবী সংগঠনের রাজনীতি করেন বিএনপির শীর্ষ নেতাদের একজন অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রত্যেক মানুষেরই রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে। পেশাজীবী রাজনীতি সুদীর্ঘকাল ধরে চলমান রয়েছে।’ তিনি বলেন, এখনো দেশে বিদ্যমান রয়েছে পেশাজীবী রাজনীতি।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ), বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ, বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদএসব সংগঠন আওয়ামী লীগ সমর্থক পেশাজীবী সংগঠন।

যদিও সারা দেশের চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)। এর বাইরে আওয়ামী লীগ সমর্থক সংগঠন স্বাচিপ যেমন আছে, তেমনি বিএনপি সমর্থক সংগঠন হলো ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। এ ছাড়া দলটির সমর্থক আইনজীবীদের সংগঠন হলো জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। এ ছাড়া আছে ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, অ্যাগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্য জোট।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এই দুই দলের লেজুড়বৃত্তি করা শিক্ষক-সাংবাদিক সংগঠনও রয়েছে। তারাও বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম আয়োজন করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মকান্ডকে সমর্থন দেয়। এর বাইরে নামসর্বস্ব কিছু সংগঠনও এই মুহূর্তে একই কাজ করছে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে থাকা বিএনপি ও তাদের আন্দোলন মোকাবিলায় মাঠে থাকা আওয়ামী লীগের সব কর্মসূচিতে পেশাজীবী সংগঠনগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে। শুধু মূল দলের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণই নয়, পেশাজীবী সংগঠনগুলো নিজেদের ব্যানারেও নিয়মিত কর্মসূচি পালন করে চলেছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, এই সংগঠনগুলোর অনেকেই পেশার চেয়ে বেশি সময় দিচ্ছেন রাজনীতিতে।

পেশাজীবী সংগঠনের লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি করার পেছনের কিছু কারণও জানা গেছে। প্রথমত, নির্বাচনকে টার্গেট করে মনোনয়নপ্রত্যাশা, সে কারণে মূল দলগুলোর চোখে পড়ার সময় ও তাদের আস্থা অর্জন করা। তা ছাড়া যখন যে দল ক্ষমতায় থাকবে পেশাভিত্তিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা, ক্ষমতার চর্চা ইত্যাদি কারণে রাজনীতিতে সক্রিয় তারা। এ ছাড়া পেশাজীবী রাজনীতি সফলভাবে করা সম্ভব হলে মূল দলের নেতা হওয়ার সুযোগ হয়। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে বহু নেতা আছেন, যারা পেশাজীবী রাজনীতি করে এসেছেন। মূল দলের নেতৃত্বের পাশাপাশি সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীও হয়েছেন।

বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য। ডা. জালাল ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর প্রকৌশলী সংগঠনে রাজনীতি করেছেন। পেশাজীবী সংগঠন করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হয়েছেন ডা. আ ফ ম রুহুল হক। অন্যদিকে পেশাজীবী সংগঠন করে বিএনপির এখন বড় নেতা এ জেড এম জাহিদ হোসেন। নজরুল ইসলাম খান, কায়সার কামালসহ অনেকেই রয়েছেন এ তালিকায়। এ ধরনের দৃষ্টান্ত পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের উৎসাহিত করে তোলে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত তিন মাসে আওয়ামী লীগ সমর্থক পেশাজীবী সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ), শ্রমিক লীগ, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ ঢাকায় অন্তত ৩৫টি কর্মসূচি পালন করেছে। স্বাচিপ ঢাকার বাইরেও একাধিক জেলায় সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালন করেছে।

অনুসন্ধানে আরও উঠে এসেছে, পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিটিতেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও সরকারের মন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। এসব অনুষ্ঠানে পেশার সুবিধা-অসুবিধা ও মানোন্নয়নের প্রসঙ্গ কমই থাকে; বরং রাজনৈতিক বক্তৃতা, হুমকি-পাল্টাহুমকি এসবেরই চর্চা হয়।

একই অবস্থা বিএনপি সমর্থক পেশাজীবী সংগঠনগুলোরও। দলটির সমর্থক পেশাজীবীদের নিয়ে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে গত তিন মাসে ড্যাব, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্য জোট, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী ফোরাম, ঢাকা আইনজীবী সমিতি, প্রকৌশলী ও কৃষিবিদদের সংগঠন পৃথক কর্মসূচি পালন করেছে। আইনজীবী সংগঠন আদালত অঙ্গনে সরকারের বিরুদ্ধে দফায় দফায় কর্মসূচি পালন করেছে। আদালত অঙ্গনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের মধ্যে মারামারি-হাতাহাতি, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির তৎপরতা এখন নির্বাচনকেন্দ্রিক নয়, তাদের প্রধান দাবি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। তবে, এর মধ্যেও কেউ যদি ব্যক্তিগত আকাক্সক্ষা থেকে নির্বাচনী তৎপরতা চালিয়ে যান, সেটি তার ব্যক্তিগত বিষয়।’



বার্তা সূত্র