ভারতের মধ্য প্রদেশের কুনো জাতীয় উদ্যানে পরপর চিতা মৃত্যুর কারণ কী, জানতে চেয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নামিবিয়ার চিতা বিশেষজ্ঞেরাও চিতা মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে রিপোর্ট পাঠিয়েছিল। তারই ভিত্তিতে কেন্দ্রকে শীর্ষ আদালত বলেছিল, “বিষয়টা নিয়ে ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’ বানাবেন না।” এর জবাবে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে জানানো হল, চিতা মৃত্যুর ঘটনা তেমন উদ্বেগের নয়। সুদূর নামিবিয়া থেকে ভারতে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জায়গা বদলের কারণে এমনটা ঘটছে। চিতা-প্রজেক্ট খুবই ভালো চলছে বলেও দাবি করা হয়েছে কেন্দ্রের তরফে।
মধ্য প্রদেশে কুনো জাতীয় উদ্যানে পরপর আফ্রিকার চিতা মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। বিচারপতি বিআর গাভাই-এর নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চে মামলা চলছে। সোমবার মামলার শুনানির দিন সরকারপক্ষের আইনজীবী ঐশ্বর্য ভাটি আদালতে বলেন, “আফ্রিকা থেকে এত বছর পরে চিতা ভারতে আনা হয়েছে। একটা ঐতিহাসিক প্রকল্প নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। স্থান বদল হলে এমন ঘটনা ঘটতেই পারে, তাতে বিশেষ চিন্তার কিছু নেই।” সেই সঙ্গেই আইনজীবীর দাবি, কুনোতে ৬টি চিতার মৃত্যু হয়েছে এখনও পর্যন্ত, মিডিয়া সেই সংখ্যাকে বাড়িয়ে ৯ দেখাচ্ছে।
গত সাড়ে চার মাসে কুনোর অরণ্যে মারা গিয়েছে ন’টি চিতা। তাদের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নামিবিয়া থেকে আনা পূর্ণবয়স্কদের পাশাপাশি রয়েছে, ভারতে জন্মানো তিন সদ্যোজাত শাবকও। এই পরিস্থিতিতে বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখে চিতাদের মৃত্যুর কারণ খুঁজতেও বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। এর মধ্যেই দক্ষিণ আফ্রিকার পশুচিকিৎসা ও বন্যপ্রাণী বিভাগের বিশেষজ্ঞরা রিপোর্ট পাঠিয়ে দাবি করেছেন, নরেন্দ্র মোদী সরকারের চিতা সংরক্ষণ পদ্ধতিতে ত্রুটি রয়েছে। বিজ্ঞানীরা দাবি করেন, কুনো জাতীয় উদ্যানের যা পরিসর, সেখানে ৫০টি দূরের কথা ২০টি চিতার স্বচ্ছন্দ বসবাসেরও সুযোগ নেই। তা ছাড়া ওখানে চিতাদের শিকার করে খাওয়ার মতো হরিণ বা বনশুয়োরের অভাব রয়েছে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে বিচারপতি গাভাই চিতা মৃত্যুর কারণ জানতে চান কেন্দ্রের কাছে। অন্য কোনও অভয়ারণ্যের বদলে কেন আফ্রিকা থেকে আনা চিতাদের এক জায়গায় রাখা হয়েছে, সে প্রশ্নও তোলেন বিচারপতি গাভাই।
বিচারপতিদের প্রশ্নের উত্তরে সরকারপক্ষের আইনজাবী ঐশ্বর্য ভাটি দাবি করেন, দক্ষিণ আফ্রিকা আর ভারতে জলবায়ুগত পার্থক্য আছে। তাই চিতারা প্রথমটায় খাপ খাওয়াতে পারেনি। আইনজীবীর দাবি, গত কয়েক মাসে কুনোতে প্রচণ্ড গরমে ডিহাইড্রেশন হয়ে যায় চিতা শাবকদের, তাই মৃত্যু হয়। গরমের কারণে সংক্রমণও হয়েছিল চিতাদের। তবে এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে দাবি করেছেন তিনি। আইনজীবী ভাটি আদালতকে জানিয়েছেন, পশু চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি তৈরি করা হয়েছে। সেই কমিটির বিশেষজ্ঞরা সর্বক্ষণ চিতাদের শরীর স্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখে চলেছে। খুব কাছ থেকে চিতাদের উপর নজর রাখা চলছে। কাজেই চিন্তার কোনও কারণ নেই।
নামিবিয়া থেকে আনা চিতা ও কুনোতে পরবর্তী সময়ে জন্ম নেওয়া চিতা শাবক মিলিয়ে মোট ২৪টি আফ্রিকান চিতা ছিল জাতীয় উদ্যানে। এখন সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৫টিতে। ফিন্ডা নামে একটি পুরুষ চিতার আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে নামিবিয়া থেকে আনা ৫ বছরের স্ত্রী চিতা শাসা-র। ২৪ এপ্রিল মারা যায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা পুরুষ চিতা উদয়। বন দফতরের পশু চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ জানিয়েছিলেন, কুনোর এই চিতার মৃত্যুর কারণ, কার্ডিয়ো পালমোনারি ফেলিওর। পুরুষ চিতার সঙ্গে সঙ্গমের পরে মৃত্যু হয় স্ত্রী চিতা দাক্ষা-র। মৃত চিতাদের মধ্যে শাবকও আছে। নামিবিয়া থেকে আনা একটি মহিলা চিতা যে ৪টি শাবকের জন্ম দিয়েছিল, তারই ১টি মারা গেছে। মৃত্যুর কারণ হিসাবে প্রাথমিক ভাবে শারীরিক দুর্বলতাকে চিহ্নিত করেছেন চিকিৎসকেরা। পশু চিকিৎসকের দাবি, মারাত্মক ডিহাইড্রেশনে ভুগছিল শাবকটি। তাতেই মৃত্যু হয়েছে।