লিবিয়া থেকে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ঘটনায় ফরিদপুরের দুই যুবক জীবিত উদ্ধার হলেও এখনো চার যুবক নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের কোনো খোঁজ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পায়নি পরিবার৷ ফলে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে সময় পার করছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা।
নিখোঁজ যুবকদের পরিবারের সদস্যরা জানান, এসব যুবকেরা প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা খরচ করে দালাল চক্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে গত ৫ জানুয়ারি ফরিদপুর থেকে প্রথমে ঢাকায় যান। এরপর তারা ৮ জানুয়ারি দুবাই যান। দুবাইয়ে ৪ দিন থাকার পর মিসর হয়ে ১২ জানুয়ারি নাগাদ তারা লিবিয়া পৌঁছান। এরপর বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) তাদের নৌকায় উঠিয়ে দেওয়া হয়।
গত রবিবার (১২ মার্চ) বৈরি আবহাওয়ার মধ্যে পড়ে লিবিয়া থেকে ৩০ ব্যক্তিকে নিয়ে ইতালি অভিমুখে যাত্রা করা নৌকাটি উল্টে যায়। এদের মধ্যে ১৭ জনকে সোমবার পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়। যাদের সবাই অভিবাসনপ্রত্যাশী বাংলাদেশি নাগরিক। তাদের সিসিলির শহর পোজালোতে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে নগরকান্দার ডাঙ্গী ইউনিয়নের বিলগোবিন্দপুর গ্রামের নান্নু সররদারের ছেলে হৃদয় সরদার (২৫) ও আহমেদ ফরাজীর ছেলে রাসেল ফরাজী (২০) নামে দুজন রয়েছেন।
তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার ডাঙ্গী ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের মোস্তফা মাতুব্বরের ছেলে আল আমিন মাতুব্বর (২০), সোবাহান মোল্লার ছেলে মাহফুজ মোল্লা (২২), এসকেন মোল্লার ছেলে নাজমুল মোল্লা (২৩) ও সেকেন ব্যাপারীর ছেলে আকরামুল ব্যাপারী (২৭) নামে চারজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে।
নিখোঁজ আল আমীনের মা চামেলী বেগম বলেন, দুই মাস আগে তাঁর ছেলে বিদেশ রওনা হয়। এরপর বিভিন্ন দেশ হয়ে গত বৃহস্পতিবার তাদের সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি নেওয়ার জন্য নৌকায় ওঠানো হয়।
তিনি জানান, দালাল চক্রের এক সদস্য কৃষ্ণনগর গ্রামের বাসিন্দা মুরাদ ফকির (৩৬) গত সোমবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে সাগরে নৌকাডুবির পর আল আমিনের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানান।
চামেলী বেগম আরও বলেন, ৯ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তাঁর ছেলের সঙ্গে সবশেষ কথা হয়। ওই দিন ভোর সাড়ে ৪টার দিকে মুরাদ চামেলী বেগমকে ইমোতে জানান, তাদের ইতালি যাওয়ার জন্য স্পিডবোটে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, দালাল চক্রের মুরাদ ফকিরের সঙ্গে ডাঙ্গী ইউনিয়নের মশাউজান গ্রামের ফরহাদ ফকির, বিলগোবিন্দপুর গ্রামের লিটন সরদার ও আবুল হোসেন এবং বাসাগাড়ি এলাকার কাদের মাতুব্বর নামে আরও চারজন রয়েছেন। মুরাদ ফকির লিবিয়া থাকেন। কিছুদিন আগে তিনি দেশে এসেছিলেন। ১৫ দিন আগে আবার লিবিয়া চলে যান।
ডাঙ্গী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কাজী আবুল কালাম জানান, মুরাদ একজন মানবপাচারকারী। তিনি এ পর্যন্ত অন্তত ২০০ তরুণকে পাঠিয়েছেন। তিনি লোক পাঠিয়ে কয়েক কোটি টাকা আয় করেছেন। তার অবস্থা রাতারাতি ফুলে ফেঁপে উঠেছে। গ্রামে বড় বিল্ডিং করেছেন। এলাকায় তিনি ‘বিদেশে পাঠাইনা মুরাদ’ নামে পরিচিত।
নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন বলেন, এসব বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ঘটনায় ১৭ বাংলাদেশিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। লিবিয়া থেকে অবৈধ পথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে তারা ইতালি যাচ্ছিলেন। সোমবার ইতালি কর্তৃপক্ষ তাদের উদ্ধার করে উপকূলে নিয়েছে।
ইতালির স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এএনএসএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উদ্ধার হওয়া ১৭ অভিবাসন প্রত্যাশীর সবাই বাংলাদেশি নাগরিক। তাদের ইতালির সিসিলির শহর পোজালোতে রাখা হয়েছে।
ইতালির কোস্টগার্ড জানিয়েছে, লিবিয়া থেকে ৩০ ব্যক্তিকে নিয়ে ইতালি অভিমুখে যাত্রা করা নৌকাটি গত রবিবার বৈরি আবহাওয়ার মধ্যে পড়ে এবং উল্টে যায়।