দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | বিশেষ প্রতিনিধি : প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২৩, ১০:৫৬ পিএম
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১০নং ওয়ার্ডের শতবর্ষী পুরাতন নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের অভ্যন্তরে অবস্থিত সেই পুরাতন দুর্গা মন্দিরেই অবশেষে হতে যাচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব। শেয়ারহোল্ডার ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের পরিদর্শন এবং হুঁশিয়ারি উচ্চারণের পরে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে দখলদার নিট কনসার্ন গ্রুপ।
নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলস দুর্গা মন্দির পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক তরুণ বেগী জানান, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১০নং ওয়ার্ডের শতবর্ষী পুরাতন নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের অভ্যন্তরে অবস্থিত দুর্গা মন্দিরে আমরা গত ৮১ বছর ধরে শারদীয় দুর্গোৎসব পালন করে আসছি। গেল বছরেও এই মন্দিরেই ৮০ তম শারদীয় দুর্গোৎসব হয়েছে। তবে চলতি বছরের জুন মাসে আকস্মিকভাবে মন্দিরটি ভেঙ্গে ফেলে নিট কনসার্ন গ্রুপ। এরপর খবর পেয়ে পূজা উদযাপন পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের শীর্ষ নেতারাসহ আমাদের শেয়ারহোল্ডাররা ঘটনাস্থলে গেলে তাদের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয় ও হুমকি দেয়া হয়। এরপর থেকে আমরা দুর্গামন্দিরটি রক্ষার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলাম। অবশেষ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের কঠোর মনোভাবে এবং প্রশাসনের সহযোগিতায় মিলের অভ্যন্তরের সেই মন্দিরেই এবছর শারদীয় দুর্গোৎসব হতে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, গোদনাইলে অবস্থিত নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের ভেতরে অবস্থিত মন্দিরটি গত জুন মাসে ভেঙ্গে ফেলে দখলদার নিট কনসার্ন গ্রুপ। গত ১৮ জুন মিলটির অভ্যন্তরে মন্দিরের অবকাঠামো ভেঙ্গে ফেলার খবর পেয়ে ছুটে যান পূজা উদযাপন পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সদস্য সচিব শিখন সরকার শিপন, মহানগর কমিটির সদস্য সচিব সুশীল দাস, প্রদীপ দাস, রঞ্জিত মন্ডলসহ কয়েকজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী নেতা। এসময় পূজা উদযাপন পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর কমিটির নেতাদের সঙ্গে নিট কনসার্ন গ্রুপের পরিচালক মনির হোসেন মনা অসদাচরণ করেন এবং পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের সামনেই শেয়ারহোল্ডারদের হুমকি দিয়ে বলেন, ‘গ্যানজাম লাগাইয়েন না। যদি জিদ উঠে তাইলে বাহির থেকে লোক খবর দিমু। সব পিডাইয়া ভাইঙ্গা দিমু।’
পরে এ বিষয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা আন্দোলন করাসহ সিদ্ধিরগঞ্জের সকল পূজা ম-পে পূজা করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলে মিলের বাহিরে একটি বিতর্কিত অর্পিত সম্পত্তিতে তড়িঘড়ি করে মন্দির নির্মাণের উদ্যোগ নেয় নিট কনসার্ন গ্রুপ। যদিও বিতর্কিত এই জায়গায় মন্দির নির্মাণ মেনে নেয়নি সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। তারা আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যেতে থাকে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন, দেবোত্তর বোর্ড ও হিন্দু ফাউন্ডেশন বাস্তবায়নের দাবিতে পূজা উদযাপন পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত এক সমাবেশে হিন্দু নেতারা লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিল দখল ও মিলের শতবর্ষী পুরনো মন্দির ভেঙে ফেলার অভিযোগ তুলে নিট কনসার্নের বিরুদ্ধে কথা বলেন। পাশাপাশি এ সময় নীট কনসার্ন গ্রুপকে ভূমিদস্যু উল্লেখ করে তারা পুলিশ সুপারকে মামলা দায়েরের সাথে দখলকারীদের আইনের আওতায় আনারও দাবি করেন। একই সাথে লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলে পূজা বন্ধ থাকলে নারায়ণগঞ্জের সমস্ত পূজা বন্ধ থাকবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তারা।
গত ১ অক্টোবর নিট কনসার্ন গ্রুপের দখলদারিত্ব থেকে ঐতিহ্যবাহী নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলটির সম্পদ রক্ষার দাবিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করে আন্দোলনরত শেয়ারহোল্ডাররা।
সর্বশেষ ৪ অক্টোবর নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের ভেতরে ভেঙ্গে ফেলা মন্দির পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, মিলটির ভেতরের মন্দিরে ভেঙ্গে এটা সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেয়ার সামিল বলে আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি। আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আমলে ভূমিখেকোরা যা খুশি করতে পারবে না। আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলে দিতে চাই নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের ভেতরে আগে যেখানে পুজা হতো সেখানেই পূজা হবে আর যদি সেটা না হয় তাহলে অধিকার কিভাবে আদায় করতে হয় সেটা আমরা জানি। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ডি এন চ্যাটার্জি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন মন্ডল, কার্যনির্বাহী সদস্য অধ্যাপক রজত কুমার সুর রাজু, পুজা উদযাপন পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সেক্রেটারী শিখন সরকার শিপন, মহানগর কমিটির সেক্রেটারী সুশীল দাস, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের জেলা সভাপতি প্রদীপ দাস প্রমুখ। পরে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হক ও পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেলের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ।
পূজা উদযাপন পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সেক্রেটারী শিখন সরকার শিপন বলেন, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের ভেতরে মন্দিরের স্থান পরিদর্শন করেছেন ও সেখানকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। পরে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ আমরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করি। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার আমাদেরকে আশ^স্ত করেছেন নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের ভেতরে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনের জন্য যা কিছু করণীয় সেটা করবেন।
সর্বশেষ ৫ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১০নং ওয়ার্ডের শতবর্ষী পুরাতন নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের অভ্যন্তরে অবস্থিত দুর্গা মন্দির রক্ষার দাবিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে স্মারকলিপি প্রদান করেছে নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলস দুর্গা মন্দির পরিচালনা পর্ষদ। নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলস দুর্গা মন্দির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বকুল বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক তরুণ বেগী স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় নিট কনসার্ন গ্রুপ জোরপূর্বক দুর্গা মন্দির, পুকুর ও মাঠের জায়গা দখল করেছে।