Skip to content

অবর্ণনীয় দুর্ভোগ : নীলফামারিতে বাঁশের সাঁকো নির্ভর দুই গ্রামের মানুষ

সাজু আহমেদ * গ্রাম আর শহর এখন প্রায়় একাকার।  খুব কম গ্রামই আছে যেখানে এখনও নাগরিক সুবিধা পৌঁছেনি। প্রত্যন্ত গ্রামের ঘরে বসেই মুহূর্তে পুরো পৃথিবী ঘুুুরে আসা যায়। তিন দিনের পথ এখন মাত্র কয়েক ঘন্টায় অতিক্রম্য। স্বপ্নের মানুষ প্রযুক্তি বিজ্ঞানী সজীব ওয়াজেদ জয় তাঁর প্রিয় মাতৃভূমিকে উন্নতির সোপানে পৌঁছে দিতে  ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’র স্বপ্ন দেখেন, দেখান এবং তা রূপায়ণ করেন। ইতোমধ্যে তিনি আরও একধাপ এগিয়ে তাঁর “ক্যাশলেস বাংলাদেশ”- এর ধারণা প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেছেন। এর পুরোটাই সম্ভব হচ্ছে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়নের মধ্য দিয়ে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের “সোনার বাংলা” প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়নে তাঁর সুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার সার্থক রূপ দিতে যুক্ত হয়েছেন জয়। মেধা ও প্রজ্ঞা নিয়ে নিরলস কাজ করছেন প্রযুক্তি বিজ্ঞানী সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের “সোনার বাংলা”র পথে এগিয়ে চলার এই যখন চিত্র, তখন খুব দুঃখের সঙ্গে নীলফামারীর জাদুর হাট ঘাটসহ পাশের কয়েকটি গ্রামের ১০ হাজার মানুষের পক্ষে কয়েকজন জানালেন তাদের অবর্ণনীয় দুঃখ কথা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উদাসীনতা এবং নির্লিপ্ততায় এই ডিজিটাল বাংলাদেশে তারা এখনো পিছিয়ে পড়া মানুষ। সন্ধ্যা হলেই এখনো সেখানে মানুষকে ঘন অন্ধকার আচ্ছন্ন করে। একটি মাত্র পাকা সেতুর অভাব তাদের জীবনকে দুর্বিষহ অন্ধকারে রেখেছে।

নীলফামারী জেলা সদরের চাপড়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের জাদুর হাটের ঘাট গ্রামের আশেপাশের প্রায় ১০ হাজার মানুষের জীবন বদলে যেতে পারে একটুখানি ডিজিটাল জাদুর ছোঁয়ায়। সেই জাদু হলো জাদুর হাট গ্রামের মধ্যিখানে ছোট্র নদীটি পারাপারে একটি  সেতু নির্মাণ। সেখানে প্রতিবেশীসহ দুই গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষের চলাচলে নদীপথ পেরুনোর একমাত্র ভরসা একটি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো।

বিকল্প কোনো পথ না থাকায় এই সাঁকো দিয়েই প্রতিদিন নারী ও শিশুসহ শত শত মানুষকে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। স্থানীয়দের উদ্যোগে নির্মিত সাঁকোটি প্রতিবছর নিজেরাই মেরামত করেন। এসব দেখভালে জন-প্রতিনিধিদের কেউই এগিয়ে আসেননি। স্হানীয় বাসিন্দারা এর একটি স্থায়ী সমাধান চান।

গ্রামবাসীরা জানান, এক-দুই দিনের নয়, বছরের পর বছর এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দুই গ্রামের মানুষকে। ঝুঁকিপূর্ণ এ সাঁকো পার হতে গিয়ে অনেকবার দুর্ঘটনায় পড়তে হয়েছে তাদের অনেকেরই।

বর্ষায় এ দুর্ভোগ পৌঁছায় আরও চরমে। বিষয়টি যথাস্হানে সেভাবে উত্থাপিত না হওয়ায় সাঁকো নির্মাণ বা মেরামতে সরকারি কোনো অনুদানও পাওয়া যায় না।

প্রতিবছর দুই পারের বাসিন্দারা স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন। আত্মীয়- স্বজনসহ এলাকার মানুষদের কাছে বাঁশ চেয়ে নিয়ে আসেন তারা।  জনপ্রতিনিধিরা দাবি পূরণের আশ্বাস দিলেও পরে আর তা বাস্তবায়ন হয় না বলে অভিযোগ তাদের। তাই অবিলম্বে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এই ভুক্তভোগীরা।

অত্র এলাকার একটি মসজিদের ইমাম স্হানীয় বাসিন্দা আবুল কাসেম বলেন, এই বর্ষায় যাতায়াতের জন্য গ্রামের ৪ জন মানুষের কাছে গ্রামবাসী বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ । মোঃ নুর হোসেন, আনারুল,  আইয়ুব আলী  নিজেদের খরচে বাঁশের সাঁকোটি বারবার তৈরি ও মেরামত করেন। বাঁশের একটি সাঁকো এক বর্ষা পার করার পর আর ব্যবহারযোগ্য থাকে না। তিনি বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে আমরা বেশ কয়েকবার ধরনা দিয়ে শুধু আশ্বাস পেয়েছি।

এলাকার বাসিন্দারা এই প্রতিবেককে বলেন, ‘সাঁকোটি ভাঙা থাকায় পারাপারের সময় আমরা  ভয়ে ভয়ে থাকি। বিশেষ করে বর্ষাকালে প্রায় ১২৯ হাত দৈর্ঘ্যের দীর্ঘ এই সাঁকোটি পার হতে অনেক কষ্ট হয়। তখন সাঁকো ছুঁই ছুঁই পানিতে আরও বেশি আতঙ্কের হয়ে ওঠে নদিটি। সাঁকো পেরুতে গিয়ে প্রায়ই পড়ে গিয়ে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। কিছুদিন আগেও সম্পূর্ণ ভাঙা ছিল সাঁকোটি। এলাকার উল্লেখিত মহৎপ্রাণ ব্যক্তিদের প্রচেষ্টায় সেটি আপাতত চলাচলের উপযোগী হয়েছে। কিন্তু এভাবে আর কতদিন?

এলাকাবাসী বলেন, সারাদেশে যখন উন্নয়নের সুবাতাস বইছে তখন আমরা জাদুর হাট ঘাটের বাসিন্দারা আর কতদিন এই দুঃসহ দুর্ভোগ বয়ে চলবো। আমরাও ডিজিটাল বাংলাদেশের জাদুর ছোঁয়া চাই। একটি স্হায়ী সেতু নির্মাণ এখন আমাদের সময়ের দাবি- প্রাণের দাবি।

* সাজু আহমেদ : স্হানীয় প্রতিবেদক, নীলফামারী থেকে*